প্রতিবছর ঈদ ঘিরে গণপরিবহণে যাত্রীদের হয়রানি করা হয়। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগও রয়েছে। সেবা নিতে গিয়ে তৈরি হয় নানা ধরনের ভোগান্তি। তাই এসব নৈরাজ্য ঠেকাতে ও যাত্রীসেবা নিশ্চিতে তিন স্তরে নজরদারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। এজন্য অধিদপ্তরের সদস্য ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। সেলের সদস্যরা বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন ও নৌবন্দরে নজরদারি করবে। এ সময় বাড়তি ভাড়া আদায় ও যাত্রীদের পর্যাপ্ত সেবা না দিলে সংশ্লিষ্টদের ভোক্তা আইনের আওতায় কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে। বুধবার অধিদপ্তর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে অনেক মানুষ গ্রামের বাড়িতে যায়। পরিবারের সঙ্গে একসঙ্গে ঈদ করতে চান। কিন্তু এ সময়ে পরিবহণে নানা ধরনের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। আর এই ভোগান্তি রোধে ও নৈরাজ্য তদারকি করতে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে বিশেষ সেল গঠন করা হয়েছে। আগাম টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন থেকে সেলের সদস্যরা মাঠে নামবেন। সপ্তাহের ৭ দিন তারা রাজধানীর প্রতিটি বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও নৌবন্দরে গিয়ে তদারকি করবেন।
তিনি জানান, সেলের সদস্যরা টিকিট কাউন্টারগুলোয় ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করবেন। পাশাপাশি অধিদপ্তরের পরিচয় না দিয়ে যাত্রী হিসাবে গণপরিবহণে ভ্রমণ করবেন। এছাড়া ভুক্তভোগীরা তদারকি সেলের কাছে অভিযোগও করতে পারবেন। এ সময় কোনো নৈরাজ্যের প্রমাণ মিললে চালক ও হেলপার থেকে শুরু করে মালিকের বিরুদ্ধে ভোক্তা আইনে মামলা করে শাস্তির আওতায় আনা হবে। তিনি বলেন, অধিদপ্তর সব সময় ভোক্তার অধিকার রক্ষায় কাজ করছে। বর্তমানে পরিবহণ সেক্টর ত্রাসে পরিণত হয়েছে। কোনো ধর্মীয় উপলক্ষ্য এলেই এই ত্রাস আরও বেড়ে যায়। সেসময় যার কাছে যেভাবে পারে, সেভাবে ভাড়া আদায় করে। কিন্তু বেশি ভাড়া নিলেও নির্ধারিত যাত্রীসেবা কখনই দেওয়া হয় না। অনেক সময় তারা যাত্রীদের সঙ্গে অশোভন আচরণও করে। সব মিলিয়ে একজন ভোক্তা পরিবহণ খাতে সেবা নিতে গিয়ে নানাভাবে প্রতারিত হয়। আমরা এই প্রতারণা রোধ করতে চাই।
অধিদপ্তর সূত্র জানায়, পরিবহণে যাত্রীসেবা নিশ্চিত ও অসাধুদের শাস্তি দিতে একটি রোডম্যাপ করা হয়েছে। চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতা, অতিরিক্ত যাত্রী বহন, নির্ধারিত স্থান ছাড়া ওঠানো বা নামানোর মাধ্যমে যাত্রী হয়রানি, নারী যাত্রীদের আসন সেবা সুষ্ঠুভাবে নিশ্চিত না করা প্রভৃতি দূর করার প্রচেষ্টা চালানো হবে। সিটিং সার্ভিসের নামে বেশি ভাড়া নিলে ভোক্তা আইনে শাস্তি দেওয়া হবে।
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের এ পরিকল্পনা প্রশংসনীয়। এই তদারকি যদি জোরদার ও সুষ্ঠুভাবে করা যায়, তাহলে জনসাধারণের জীবনে অনেক স্বস্তি আসবে। আর ঈদে বা অন্য কোনো ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বাড়ি যেতে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি একটু হলেও কমবে।
অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর ধরে ঈদ ঘিরে বাসস্ট্যান্ড, রেলস্টেশন ও নৌবন্দরে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ সময় নানা অনিয়ম সামনে এসেছে। অগ্রিম বাসের টিকিটের মূল্য বেশি নেওয়া, কাউন্টারে মূল্যতালিকা না থাকা এবং বাস কাউন্টারের বাইরে লোকাল বাসে বাড়তি ভাড়া আদায় করার প্রমাণ মিলেছে। সেসময় অনেক বাস কোম্পানিকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মন্ডল বলেন, ঈদুলফিতর উপলক্ষ্যে আমরা রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের বাস কাউন্টারে ঝটিকা অভিযান পরিচালনা করেছি। অনিয়ম পেয়েছি। সে মোতাবেক আইনের আওতায় এনেছি। এবার কুরবানির ঈদ ঘিরে বাড়ি ফেরা মানুষের জন্য অগ্রিম বাসের টিকিট কিছুদিন পর বিক্রি শুরু হবে। এ সময় সংশ্লিষ্টরা টিকিটের দাম বেশি নেয়। তাই গণপরিবহণ স্টেশনে বিশেষ অভিযান চালানো হবে। রোজার ঈদে জরিমানা নিয়ে এবং সতর্ক করেই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এবার এই নির্দেশ না মানলে আইন অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
(আহৃত)