1. admin@banglarakash.com : admin :
November 3, 2025, 7:47 am
শিরোনাম :
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর: চেইন অব কমান্ড ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম সচল করার পর তিন জেলায় তিন নেতার পদত্যাগ ট্রাম্পের কাছে কেন ক্ষমা চাওয়ার কথা বললেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী ফরিদপুরে পিস্তল ঠেকিয়ে গৃহবধুর কানের দুল ছিনতাই শীর্ষক চাঞ্চল্যকর ঘটনার প্রধান ও ডাকাতি-খুন-চুরি-মাদকসহ মোট ০৮টি মামলার আসামি মোঃ শরিফুল ইসলাম @ডন শরীফ(৩৮)` এবং তার সহযোগী মোঃ রায়হান মোল্লা(২৫)` কে মাদকদ্রব্য সহ গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব-১০ এক কেজি আলু বিক্রি করে কৃষকের হাতে থাকছে মাত্র ৬৮ পয়সা যুক্তরাষ্ট্রকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার নির্দেশে আতঙ্ক-উত্তেজনা, ট্রাম্প আসলে কী চান পরিচালকদের কাজের বছরভিত্তিক মূল্যায়ন করা হবে শেষে এসে ‘বিপদে’ ওয়াসা বার্তাকক্ষের নেতা হয়ে ওঠার প্রশিক্ষণ পেলেন সাংবাদিকতার ২০ ছাত্রী বেনাপোল দিয়ে আবার পণ্য আমদানি বেড়েছে, ২৪ ঘণ্টা খোলা বন্দর

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর: চেইন অব কমান্ড ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে অভিযান

BanglarAkash desk
  • Update Time : Monday, November 3, 2025,
  • 12 Time View
Spread the love

বঙ্গভবনের বিদ্রোহী অফিসারদের বিরুদ্ধে অভিযানের পরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হলো। ২য় ইস্ট বেঙ্গলের দুজন সাহসী অফিসার মেজর নজরুল ইসলাম ও মেজর সাইদ আহমেদ এবং ট্যাংক রেজিমেন্টের মেজর নাসির বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে প্লাটুন কমান্ডাররূপে কর্মরত ছিলেন। কমান্ডার তাঁদের ঢাকায় ডেকে আনার জন্য ক্যাপ্টেন তাজকে কুমিল্লায় পাঠালেন। তাঁরা তিনজন সন্ধ্যার পরপরই ঢাকায় এসে পৌঁছালেন। ১ম ও ২য় ইস্ট বেঙ্গলের সিও এবং কয়েকজন কোম্পানি কমান্ডারকে যথাসময়ে ব্রিফ করা হলো। ৪ ইস্ট বেঙ্গলকে রিজার্ভ হিসেবে রাখার সিদ্ধান্ত ছিল। সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল আমিনুল হককে শেষ মুহূর্তেও জানানো হয়নি।

বঙ্গভবন অভিযান সম্পর্কে সেনানিবাসে প্রায় সব অফিসারই অবহিত ছিলেন, শুধু তারিখ ও সময়, অর্থাৎ এইচ আওয়ার সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে ২ নভেম্বর সন্ধ্যার পর শাফায়াত গ্রিন সিগন্যাল দিয়ে অংশগ্রহণকারী অফিসারদের আলাদাভাবে ব্রিফ করেন। অপারেশন প্ল্যান খুবই সিম্পল। রাত দুইটায় এইচ আওয়ারে বঙ্গভবনে ডিউটিরত ১ম ইস্ট বেঙ্গলের দুটি কোম্পানি কাউকে কিছু না জানিয়ে সেনানিবাসে ফেরত চলে আসবে। ঢাকা সেনানিবাসের প্রধান সড়কে সিগন্যাল গেটের সামনে ২য় ইস্ট বেঙ্গল এবং স্টাফ রোডের পূর্ব প্রান্তে রেলক্রসিংয়ে ২২ বেঙ্গল কয়েকটি অ্যান্টিট্যাংক মাইন স্থাপন করবে, যাতে ল্যান্সারের কোনো ট্যাংক কিংবা ভারী যানবাহন সড়কে বের হতে না পারে।

সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বিমানবাহিনীর দুটি জেট বিমান ও হেলিকপ্টার রকেট সজ্জিত হয়ে বঙ্গভবন ও রেসকোর্সের ওপর চক্কর দেবে। কারওয়ান বাজার চৌরাস্তায় এবং সায়েন্স ল্যাবরেটরির চৌরাস্তায় দুটি কোম্পানি অ্যান্টিট্যাংক অস্ত্র রিকয়েললেস রাইফেল নিয়ে প্রতিরক্ষাব্যূহ গড়ে তুলবে। আমার দৃঢ়বিশ্বাস ছিল যে জেট বিমানের সামনে অসহায় ট্যাংক বাহিনী কোনো প্রতিরোধই গড়ে তুলতে সাহস করবে না এবং আত্মসমর্পণ ছাড়া বিদ্রোহীদের কোনো গতি থাকবে না। বঙ্গভবনে পদাতিক বাহিনীর কোনো অভিযান চালানোর প্রয়োজনই পড়বে না। আমি যেমন ধারণা করেছিলাম, বাস্তবেও তা-ই ঘটেছে।

 

৩ নভেম্বর ভোরে অভিযান শুরু হলো। প্রথমে কিছুটা বিপত্তি দেখা দিলেও তা অভিযানে কোনো প্রভাব ফেলেনি। ২য় বেঙ্গলের সিও কর্নেল আজিজ শেষ মুহূর্তে সাহস হারিয়ে ফেলেন এবং ব্যাটালিয়নে এসে দায়িত্বভার গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। বিএমএ থেকে আসা ২য় বেঙ্গলের যুদ্ধকালীন সাহসী কোম্পানি কমান্ডার মেজর নজরুল গভীর রাতে ব্যাটালিয়নে গিয়ে ব্যাটালিয়নকে রণসাজে প্রস্তুত করেন এবং সিগন্যাল গেটের সামনে মাইন স্থাপন করেন। সিও না আসায় বিএমএ থেকে আসা অপর অফিসার সাইদ কুমিল্লায় ফিরে যান। ২২ ইস্ট বেঙ্গল লেফটেন্যান্ট কর্নেল গাফফারের নেতৃত্বে প্রস্তুতি গ্রহণ করে এবং রেলক্রসিংয়ে মাইন স্থাপন করে।

ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ক্যাপ্টেন শামসুদ্দিন তার ইউনিট থেকে মাইন সরবরাহ করে। রাত দুইটার সময় বঙ্গভবনের দুটি কোম্পানি মেজর ইকবালের নেতৃত্বে কয়েকটি বাস সংগ্রহ করে দ্রুত ক্যান্টনমেন্টে ফিরে আসে। কারওয়ান বাজার ও সায়েন্স ল্যাবরেটরি চৌরাস্তায় ইস্ট বেঙ্গলের সৈনিকেরা রিকয়েললেস রাইফেলসহ প্রতিরক্ষা অবস্থান গ্রহণ করে। একটি কোম্পানি তেজগাঁও এয়ারপোর্ট এলাকায় অবস্থান নেয়।

৩ নভেম্বরের অভিযানে চমকপ্রদ ভূমিকা গ্রহণ করে বিমানবাহিনীর কয়েকজন দুঃসাহসী পাইলট। তাদের পরিকল্পনা সম্পর্কে খালেদ ও শাফায়াত ছাড়া কারোরই কোনো ধারণা ছিল না। তাওয়াবের মতো জাঁদরেল কমান্ডারও কিছুই আঁচ করতে পারেননি। একটি জেট বিমানকে রকেট সজ্জিত করা ও অন্যান্য প্রস্তুতি নিতে সাধারণত তিন ঘণ্টা সময় লাগে।

কিন্তু দুঃসাহসী বিমানসেনারা গভীর রাতে মাত্র দেড় ঘণ্টা সময় নিয়ে দুটি ফাইটার জেট ও দুটি হেলিকপ্টারকে কমব্যাটের জন্য প্রস্তুত করেন। বৈমানিকেরা সাধারণভাবে সেনা অফিসারদের তুলনায় কম কথা বলেন এবং নীরবে দুঃসাহসিক অভিযানে অংশগ্রহণ করেন। ভোর চারটার দিকে মিগ-২৯ স্কোয়াড্রনের সামনে টারম্যাকের ওপর স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত আলী খান বীর উত্তম এবং স্কোয়াড্রন লিডার বদরুল আলম বীর উত্তম কয়েকজন পাইলট ও বিমান টেকনিশিয়ানকে বঙ্গভবনে রকেট আক্রমণের জন্য ব্রিফ করেন। ফলে এ খবর বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল তাওয়াবের গোচরে আসে। তাওয়াব নিজেও সিতারা-এ-জুরাত খেতাবধারী দুর্ধর্ষ পাইলট ছিলেন একসময়, অত্যন্ত স্মার্ট ও সাহসী অফিসার। তিনি বিদ্রোহীদের সমর্থক, সুতরাং অপারেশন ভন্ডুল করার জন্য নির্দেশ জারি করতে পারেন, এমন শঙ্কা দেখা দেয়।

…সকালে মিগ ও হেলিকপ্টারের আক্রমণাত্মক ভূমিকা দেখার পর ক্যান্টনমেন্টের বিভিন্ন পদবির অফিসাররা ঝাঁকে ঝাঁকে ৪র্থ ইস্ট বেঙ্গলে এসে সিজিএস এবং ৪৬ ব্রিগেড কমান্ডারকে অভিনন্দন জানাতে থাকেন। এঁদের কাউকে কাউকে ভালো পোস্টিং পাওয়ার জন্য বঙ্গভবনে ফারুক-রশিদের কাছে তদবির করতেও দেখা গিয়েছিল। রাতে ফোন করে যাঁদের আনা যায়নি, সকাল হতেই তড়িঘড়ি করে তাঁরা অপারেশন হেডকোয়ার্টারে উপস্থিত হন। ২য় বেঙ্গলের মেজর নজরুল তাঁর সিওকে নিয়ে উপস্থিত হন এবং কমান্ডার শাফায়াতকে বলেন যে রাতে নির্দেশ পালনে ব্যর্থতার জন্য তাঁর সিও খুবই লজ্জিত ও অনুতপ্ত। বিষয়টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার জন্য তিনি অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে কমান্ডারের কাছে সুপারিশ করার জন্য নজরুল আমাকেও পীড়াপীড়ি করতে থাকেন। অভিযানের প্রারম্ভে রাতে ৪র্থ বেঙ্গলে কমান্ডারসহ আমরা মাত্র চারজন অফিসার উপস্থিত ছিলাম। সকালে সুযোগসন্ধানীদের ভিড় এতই বেড়ে গেল যে আমরা জুনিয়র অফিসাররা অফিসকক্ষে বসার চেয়ারই পাচ্ছিলাম না।

সকাল থেকেই ৪র্থ বেঙ্গলের সিওর অফিসে জেঁকে বসেছেন ব্রিগেডিয়ার খালেদ, শাফায়াত জামিল ও সেনা সদরের সিনিয়র অফিসাররা। নেভি চিফ রিয়ার অ্যাডমিরাল এম এইচ খানও এসে উপস্থিত হলেন। আমি রুমের বাইরে সবুজ লনে এসে একাকী একটি চেয়ারে বসে অফিসারদের আনাগোনা দেখছিলাম। সকাল নয়টার দিকে হঠাৎ এসে উপস্থিত হলেন ফ্লাইং স্যুট পরা স্কোয়াড্রন লিডার লিয়াকত ও ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট ইকবাল রশিদ, সঙ্গে বিমানবাহিনী প্রধান তাওয়াব। তাওয়াবকে একটু দূরে দণ্ডায়মান রেখে লিয়াকত আমার কাছে এসে নিচু স্বরে বলেন, ‘এয়ার চিফকে ধরে নিয়ে এসেছি, বহুত ঝানু মাল। একে আটকে রাখা এখন থেকে তোমার দায়িত্ব, আমি চললাম।’ বলেই তিনি দ্রুত গাড়ি চালিয়ে বেরিয়ে গেলেন।

আমি এয়ার চিফকে স্যালুট করে আমার চেয়ারে বসালাম এবং একটি চেয়ার আনিয়ে পাশাপাশি বসলাম। তাওয়াব কিছুটা বিড়ম্বিত কিন্তু বাইরে ভাব দেখাচ্ছেন যেন কিছুই হয়নি, সবকিছু ঠিক আছে। আমি তাঁকে খালেদের অফিসরুমে ঢোকানোর আগে তাঁর মনোভাব বোঝার জন্য সেনা অভিযান সম্পর্কে কিছু কথা জানালাম, ‘বিদ্রোহী অফিসাররা অনেক বাড়াবাড়ি করেছে, তাদের চেইন অব কমান্ডে আনার জন্যই সিজিএস অভিযান পরিচালনা করছেন।’

তাওয়াব বললেন, ‘তাই নাকি! আমি তো কিছুই জানতাম না। ভালোই তো, এখন কী করতে চাও তোমরা?’

‘সিজিএস একটু পরই আপনাকে ব্রিফ করবেন। আপাতত এখানেই বসুন।’ তাওয়াব আশপাশে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছেন। একটু পর আমি একটি টেলিফোন কল ধরার জন্য অ্যাডজুট্যান্টের রুমে ঢুকলে তাওয়াব উঠে সোজা খালেদের অফিসরুমে চলে যান, পিছু পিছু ঢোকেন ইকবাল রশিদ। খালেদ জানেন না যে তাওয়াবকে ধরে আনা হয়েছে। ভেবেছেন উনি নিজেই এসেছেন, ‘ওয়েল কাম চিফ, আসুন, আপনি আসায় কোরাম পূর্ণ হলো, বসুন। নেভি চিফ ইজ অলরেডি হিয়ার।’ খালেদ দাঁড়িয়ে তাওয়াবকে স্বাগত জানালেন। তাওয়াব বুঝে গেলেন তিনি আর বন্দী নন। ইকবাল রশিদের দিকে কঠিন দৃষ্টি হেনে খালেদকে বললেন, ‘হোয়াট ইজ হ্যাপেনিং?’

আমি টেলিফোন কল সেরে এসে দেখি তাওয়াবের চেয়ার খালি, তিনি রুমের ভেতরে। ৪র্থ বেঙ্গলের সিওর রুমটি ছোট, সেখানে গাদাগাদি করে সিনিয়র অফিসাররা বসে আছেন।

এমনকি ব্যাটালিয়নের সিও আমিনুল হকও রুমের বাইরে বারান্দায় ঘোরাঘুরি করছেন। তিনি একটু অসন্তুষ্ট, তাঁকে না জানিয়েই ৪র্থ বেঙ্গলে হেডকোয়ার্টার স্থাপন করা হয়েছে।

৪র্থ বেঙ্গলের সিওর ঘরে নিজেদের মধ্যে নিচু স্বরে আলাপ করছেন সিজিএস খালেদ, শাফায়াত, অ্যাডজুট্যান্ট জেনারেল কর্নেল মইনুল হোসেন চৌধুরী, ডাইরেক্টর মিলিটারি অপারেশন লেফটেন্যান্ট কর্নেল নুরুদ্দিন, লগ এরিয়া কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার আবদুর রউফ, রক্ষীবাহিনী প্রধান ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান, ডাইরেক্টর সিগন্যালস কর্নেল নাজিরুল আজিজ চিশতী, ডাইরেক্টর প্রশিক্ষণ কর্নেল মালেক। সকালবেলায় ৭২তম ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল নজমুল হুদা খালেদের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেন। নৌবাহিনী প্রধান আগেই এসেছেন, সর্বশেষ আবির্ভূত হলেন বিমানবাহিনী প্রধান তাওয়াব।

খালেদ মোশাররফ চলমান অপারেশন সম্পর্কে উপস্থিত অফিসারদের সংক্ষেপে ব্রিফ করেন। বিদ্রোহী অফিসারদের দমন করে সেনাবাহিনীর চেইন অব কমান্ড পুনরুদ্ধার করাই এ অপারেশনের লক্ষ্য বলে জানান। উপস্থিত অফিসাররা তাঁকে এ ব্যাপারে সমর্থন জানান।

.সকালে অভিযান শুরু হওয়ার পরপরই শাহবাগ রেডিও স্টেশনে মোতায়েন সেকেন্ড ফিল্ড রেজিমেন্টের অফিসার ও সৈনিকেরা ৪৬তম ব্রিগেড কমান্ডারের প্রতি আনুগত্য জ্ঞাপন করেন। জানিয়ে দেন খালেদ মোশাররফের যেকোনো বার্তা দেশব্যাপী প্রচার করার জন্য তাঁরা প্রস্তুত। খালেদ দিনভর বিদ্রোহী অফিসার ও মোশতাকের সঙ্গে টেলিফোন সংলাপে ব্যস্ত ছিলেন। ফলে রেডিওতে কোনো বক্তব্য দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব করেননি। ফলে সারা দিন বেতার সম্প্রচার বন্ধ থাকল এবং জনগণ উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে সময় অতিবাহিত করে।

রাত ১১টার সময় একটি ফোকার ফ্রেন্ডশিপ বিমানযোগে ফারুক, রশিদ, ডালিম, শাহরিয়ার, নূরসহ বিদ্রোহী অফিসাররা এবং মোসলেমসহ জেসিও, এনসিওরা ব্যাংককের উদ্দেশে যাত্রা করেন। এঁদের পরিবারও সঙ্গে যায়। তেজগাঁও এয়ারপোর্ট থেকে যাত্রা করে রিফুয়েলিংয়ের জন্য বিমানটি চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে অবতরণ করে এবং কিছুক্ষণ বিরতির পর ব্যাংককের উদ্দেশে উড়াল দেয়। রাত ১০টার দিকে কর্নেল হুদা খালেদ মোশাররফকে ফোন করে বিমানটিকে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দিতে অনুরোধ জানান। সৈয়দপুরে অবতরণ করার পর তিনি খুনি মেজরদের হত্যা করার অনুমতি চান। কিন্তু খালেদ এ ধরনের হত্যাকাণ্ডের জন্য অনুমতি দেননি এবং বিদ্রোহীরা বিনা বাধায় ব্যাংকক পৌঁছে যান।

২ নভেম্বর রাতে একটি ভয়াবহ, নৃশংস ঘটনা ঘটে; যা খালেদ এবং অভিযানে অংশগ্রহণকারী অফিসাররা ঘুণাক্ষরেও টের পাননি। ২ নভেম্বর দিবাগত রাত দুইটায় মেজর ইকবালের নেতৃত্বে বঙ্গভবন থেকে দুটি কোম্পানি চলে আসার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্রোহী অফিসাররা পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক ১ম বেঙ্গল ল্যান্সারের রিসালদার মোসলেমের নেতৃত্বে একটি ক্ষুদ্র সশস্ত্র সেনাদল ঢাকা সেন্ট্রাল জেলে পাঠান। এঁরা অস্ত্রসহ জেলের ভেতরে ঢুকতে চাইলে জেল কর্তৃপক্ষ বাধা দেয়।

এ সময় প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক নিজেই টেলিফোনে জেলারকে নির্দেশ দেন মোসলেম ও সঙ্গীদের জেলের ভেতরে ঢোকার অনুমতি দিতে। জেলের ভেতরে ঢুকে ল্যান্সার সৈনিকেরা জেলের একটি কক্ষে চারজন শীর্ষ পর্যায়ের আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে গুলি করে হত্যা করে। প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার জন্য এবং ভবিষ্যৎ আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করলে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি করার জন্য খন্দকার মোশতাকের নির্দেশে এ জঘন্য হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। আশ্চর্যের বিষয়, ৩ নভেম্বর সারা দিন ও রাতে এ ভয়াবহ ঘটনার বিন্দুবিসর্গ খালেদ মোশাররফ কিংবা অভিযানে অংশগ্রহণকারী কেউ জানতে পারেননি।

  • হাফিজ উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম সাবেক সেনা কর্মকর্তা ও মন্ত্রী

Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 LatestNews
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: BDiT