জার্মানির গোলরক্ষক আন-ক্যাথরিন বার্গারের গলার পাশে একটি উল্কি আঁকা আছে, যেখানে লেখা ‘আমাদের যা আছে, তা এখনই’। এই পাঁচটি শব্দ কেবল একটি বাক্য নয়, এটি যেন তার জীবনের সারাংশ। দ্বিতীয়বারের মতো ক্যান্সার জয় করার এক জীবন্ত সাক্ষ্য বহন করে এই উল্কি।
২০২২ সালের ইউরোতে জার্মান দলে থাকলেও, মাঠের বাইরে তিনি লড়ছিলেন নিজের জীবনের এক কঠিনতম যুদ্ধে। চার বছর ক্যান্সারমুক্ত থাকার পর আবারও থাইরয়েড ক্যান্সার ফিরে আসে। দেশের হয়ে খেললেও, ভেতরে চলছিল এক নীরব লড়াই – জীবনের জন্য লড়াই। কেমোথেরাপি, অস্ত্রোপচার এবং দীর্ঘ পুনর্বাসনের পথ পাড়ি দিয়ে বার্গার আবার ফিরেছেন মাঠে, ২০২৫ সালের ইউরোতে পরিচিত জার্সিতে। তবে এবার তিনি ফিরেছেন একজন ক্যান্সারজয়ী যোদ্ধা হিসেবে, আর ফিরেই গড়েছেন ইতিহাস।
ফ্রান্সের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালে ৩৪ বছর বয়সী বার্গার ছিলেন জার্মানির নির্ভরতার প্রতীক। পুরো ম্যাচে ৯টি দুর্দান্ত সেভ করে দলকে রক্ষা করেছেন। টাইব্রেকারে ঠেকিয়েছেন দুটি গুরুত্বপূর্ণ পেনাল্টি। শুধু তাই নয়, নিজেও একটি শট নিয়ে নিখুঁতভাবে জালে বল জড়িয়েছেন। তবে তার এই কীর্তির চেয়েও বেশি আলোচিত হয়েছে তার অদম্য যাত্রা। কানের পেছনে ক্যান্সার চিকিৎসার যে দাগ স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে, ঠিক সেখানেই আঁকা ওই উল্কির শব্দগুলো ‘আমাদের যা আছে, তা এখনই’ যেন বার্গারের জীবনের জয়গাথা।
ম্যাচটি ছিল এক মহাকাব্যিক লড়াই। ১৩তম মিনিটে জার্মান ডিফেন্ডার ক্যাথরিন হেনড্রিক লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে এক অসম লড়াইয়ের শুরু হয়। একজন কম খেলোয়াড় নিয়েও জার্মানি শেষ হাসি হেসেছে, আর এর নেপথ্যে ছিলেন বার্গার। ম্যাচ শেষে বার্গার বলেন, “২০২২ সালের যা ঘটেছে, তা অতীত। এখন আমি সামনে তাকাতে চাই। আমি এখন আমার সেরা জীবনটা উপভোগ করছি।”
সতীর্থ মিডফিল্ডার শোকে নুশকেন এবং জার্মান কোচ ক্রিশ্চিয়ান ভুক উভয়েই বার্গারের ধৈর্য, স্থিরতা এবং দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছেন। ২০১৭ সালে বার্মিংহাম সিটিতে খেলার সময় তিনি প্রথম ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। মাত্র ৭৬ দিনের মধ্যেই কেমোথেরাপি শেষ করে তিনি আবার মাঠে ফেরেন। এরপর চেলসির হয়ে জিতেছেন পাঁচটি উইমেন্স সুপার লিগ শিরোপা এবং বর্তমানে খেলছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্লাব গোথাম এফসিতে।