আনোয়ার জাহিদ :
ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলার রূপপাতা ইউনিয়নের বেষ্টপুর গ্রাম । এখানে মাত্র একটি বাড়ি নিয়েই গঠিত দেশের দ্বিতীয় ছোট গ্রাম পূর্ব নামবিষ্ণুপুর গ্রাম।
মানুষের কাছে বেষ্টপুর বলে পরিচিত। আগে থেকেই গ্রামটি ছোট। দেড়শ বছর পর গ্রামবাসী পেলে পোন দুই কিলো মাটির রাস্তা।
জেলার বোয়ালমারী উপজেলার রুপাপাত ইউনিয়নের বেষ্টপুর গ্রামটিতে আগে আরও বসতি থাকলেও সবাই গ্রাম ছেড়ে চলে গেছে রাস্তা না থাকায়।
এখানে ছলে মোল্যার একটি মাত্র পরিবার দেড়শ বছর যাবত বসবাস করে আসছেন। বর্ষাকালে নৌকা, ডোঙ্গা, কলাগাছের ভেলা (ভেউরা) তৈরি দিয়ে বর্ষকালে গ্রামটিতে যাওয়া আসা করতে হতো। ঈদ পার্বন ও রোজার মধ্যে বা কোন অনুষ্ঠানে ও কেউ কোথাও যেতে আসতে পারতো না। চারদিকে থাকতো পানিতে ভরা। একটি বিশাল বিলের মধ্যে একটি মাত্র বাড়ী।
৩২ জন লোক। একটি বাড়ী নিয়েই একটি গ্রাম। দেড় বছর পর ৩২ জন মানুষের বাড়ীতে ফেরা রাস্তা পেয়ে পরিবারের সবাই খুবই খুশী।
ঐ গ্রামের রাস্তা না থাকায় সারা বছর তথা যুগের পর যুগ লোকসংখ্যা কমতে কমতে ৩২ জন লোক নিয়ে একটি গ্রাম। একটি ময়েল,একটি মৌজা।
লোকসংখ্যা কমতে কমতে এখন একেবারেই ছোট গ্রাম থেকে গ্রাম বাড়ীতে পরিণত হয়েছে।
প্রায় দেড়শ বছর ধরে রাস্তাবিহীন দুর্ভোগ পোহানো এই গ্রামের পরিবারটি পেয়েছে একটি মাটির রাস্তা।
গত শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) বেলা ১১টায় গ্রামের অভ্যন্তরে নির্মিত এই নতুন রাস্তাটি সরেজমিনে দেখতে যান এই সংবাদদাতা। উল্লেখ্য গত পরশু ২৩ এপ্রিল রাস্তাটির কাজ শুরু হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানভীর হাসান চৌধুরী।
বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন, রুপাপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সোনা মিয়া,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং উৎসুক গ্রামবাসী।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ইউএনও তানভীর হাসান চৌধুরী বলেন, এই রাস্তা শুধু মাটি দিয়ে নির্মাণ নয়, এটি একটি ইতিহাসের অংশ।
দেড়শ বছর ধরে যোগাযোগের জন্য যে কষ্ট মানুষ করেছে, আজ সেই কষ্টের অবসান ঘটল। এ রাস্তা গ্রামের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সোনা মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, বিষ্ণুপুর গ্রামে একটি পরিবারই বসবাস করছে।
এ রাস্তাটি ছিল ওই পরিবারসহ আশপাশের গ্রামের মানুষের স্বপ্ন। নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম, আজ আমরা সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে পেরেছি। এটা আমার জন্য গর্বের। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানভীর হাসান চৌধুরীর সহযোগিতায় রাস্তাটি করতে পারলাম।
অনুষ্ঠান শেষে আশপাশের গ্রামবাসী আনন্দ-উৎসবে মেতে ওঠেন। অনেকে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। কেউ কেউ ইনকিলাবকে বলছিলেন, আমরা কখনো ভাবিনি জীবদ্দশায় এই রাস্তা দেখতে পাব। আজকে তা বাস্তব। এই রাস্তা আমাদের স্বপ্নের রাস্তা।
স্হানীয় ফারুক মোল্যা বাংলার আকাশকে জানান, আগে বর্ষাকালে গ্রামের মানুষ নৌকা দিয়ে চলাচল করতেন। জরুরি সময়েও রোগী বহনে কিংবা স্কুলে যাওয়া শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হতো। নতুন এই রাস্তা গ্রাম ও আশপাশের গ্রামবাসীর জন্য যেন নতুন এক দিগন্ত উন্মোচন করেছে।
প্রসঙ্গত, প্রায় পৌনে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ এই কাঁচা রাস্তার নির্মাণকাজ শেষ হয় চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গ্রামীণ অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পে (কাবিখা) সরকারি অর্থায়নে রাস্তার নির্মাণকাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
Like this:
Like Loading...