শিরোনামঃ
ইসলামি শ্রমিক আন্দোলন ফরিদপুর জেলা শাখার বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত ফরিদপুরে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক পিএলসি এর শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ। ফরিদপুরে খেয়ালী ‌ নাট্য দলের ‌ ২১ বছর পূর্তি উপলক্ষে ‌ দুদিন ব্যাপী নাট্য উৎসব সমাপ্ত প্রতারক মেহেদী হাসান সুমনকে ধরিয়ে দিন- ফরিদপুরে জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টে লাল দলের জয় লাভ ফরিদপুর আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের উদ্যোগে আর্থিক স্বাক্ষরতা বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত ফরিদপুরে অটোরিকশা চালক হত্যা মামলায় দুইজনের মৃত্যুদণ্ড ও একজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৬ তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালিত ফরিদপুরে  বিকাশ-প্রথম আলো ট্রস্টের উদ্যোগে ১৮টি প্রতিষ্ঠানকে বই বিতরণ ফরিদপুরে আলোম, হান্নান ও ইউসুব গংদের সরকারী রাস্তার ইট চুরি রুখে দিলো এলাকাবাসী ফরিদপুরে হত্যা মামলাকে পুঁজি করে আ.লীগ ও বিএনপি নেতাদের মিলেমিশে চাঁদাবাজি! জাসাস ফরিদপুর বিভাগের প্রস্তুতি সভা অনুষ্ঠিত ওসির অপসারণের দাবিতে ফরিদপুরে মানববন্ধন পুলিশি বাধায় মানববন্ধন করতে পারেনি ফরিদপুরের ইউপি চেয়ারম্যান ও মেম্বাররা ফরিদপুর জেলা বিএনপির নেতা ফরহাদ হোসেন ঝিনুকে কুপিয়ে জখম ফরিদপুরে রেলওয়ের ফিল্ড কানুনগোর বিরুদ্ধে মানববন্ধন ফরিদপুরে দুই বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৫, আহত ২৩ অপহরণ অভিযোগের সেই মেয়েটি অবশেষে ফরিদপুরে সেফ হোম থেকে মুক্ত শারদীয় দূর্গা পূজা উপলক্ষে ‌রোটারি ক্লাব অফ ফরিদপুরের উদ্যোগে অসহায় দুস্থ্য মানুষের মধ্যে শাড়ি বিতরণ ফরিদপুরের গোল্ডেন লাইন পরিবহনের বাস ভাড়া কমানোর দাবিতে ছাত্র জনতার আমরণ অনশন কর্মসূচি 
শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৭ অপরাহ্ন

বেইলি রোডের বাতাসে এখন পোড়া লাশের গন্ধ

বাংলার আকাশ নিউজ ২৪ ডট কম Email:banglarakashnews24@gmail.com
Update : শনিবার, ২ মার্চ, ২০২৪

Spread the love

গ্রিনকজি কটেজের আগুন কেড়ে নিল বহু প্রতিভা। সাপ্তাহিক ছুটির আগে বৃহস্পতিবার রাতে আলো ঝলমলে গ্রিনকজি কটেজ ভবনের রেস্টুরেন্টগুলোতে ছিল নগরীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষের ভিড়। হঠাৎ লাগা আগুনে সেই ভিড় থাকা ভবন পরিণত হয়েছে বিষাদপুরীতে। ভয়াবহ আগুনে মুহূর্তেই ভেঙে গেছে অনেকের বহু স্বপ্ন, সাধনা। আগুনে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, মা-শিশু, শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ অন্তত ৪৬ জনের।

লিপইয়ারের রাতে অনেকেই প্রিয়জন ও পরিবার নিয়ে সময় কাটাতে জড়ো হয়েছিলেন রেস্টুরেন্ট আর বিভিন্ন পণ্যের শোরুম ভরা গ্রিনকজি কটেজ ভবনে। এর বেশিরভাগ ফ্লোরেই ছিল খাবারের দোকান। এ ভবনে কাচ্চি ভাই, পিৎজা ইন, স্ট্রিটওভেন, খানাসসহ আরও রেস্টুরেন্ট ছিল। এছাড়া ইলিয়েন, ক্লোজেস্ট ক্লাউডসহ জনপ্রিয় পণ্যের বিপণিবিতানও ছিল। ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছিল কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্ট। এছাড়া তৃতীয় তলায় একটি পোশাকের দোকান ছাড়া অন্য ফ্লোরগুলোতে ছিল খাবারের দোকান।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, বৃহস্পতিবারও ভবনটি ছিল আলো ঝলমলে। একদিনের ব্যবধানে সেই ভবন এখন কালো বর্ণের কাঠামো হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চারপাশে পড়ে আছে ভাঙা কাচ, ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে বিভিন্ন দোকান-রেস্তোরাঁর পুড়ে যাওয়া চেয়ার-টেবিল। এক দিনে আগের ঝলমলে ভবনের এমন অবয়ব দেখে থমকে দাঁড়াচ্ছেন পথচারী। শুক্রবার সকালে পোড়া ভবনের সামনে দেখা গেছে উৎসুক জনতার ভিড়। সকাল থেকে পিবিআই, সিআইডি, ডিএমপির সদস্যরা ভবনে তদন্তের কাজ চালিয়েছেন। সেখানে উপস্থিত হয়েছেন রাজউক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তারাও। পুরো ভবন ‘ক্রাইম সিন’ লেখা টেপ দিয়ে ঘেরাও করে রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতের সেই আগুনের ভয়াবহতার কথা। মিষ্টির দোকান রসের কর্মকর্তা মাকসুদুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে আমি পাশ থেকে একটি মই নিয়ে আসি। ওই মই দিয়ে ১০-১২ জনকে নামিয়েছি। কিন্তু মইটা ভেঙে যাওয়ায় দোতলা থেকে আর কাউকে নামাতে পারিনি। চোখের সামনে অনেকেই আগুনে মারা গেছেন। তখন আমাদের আর করার কিছু ছিল না।

বেইলি রোডের বাসিন্দা কামাল উদ্দিন বলেন, রাতে না দেখলে বিশ্বাস হতো না কি হয়েছিল এখানে। বিকট শব্দ আর আগুনের লেলিহান শিখা দেখে মনে হয়েছিল এ যেন ‘নরক’র আগুন।

বেইলি রোডের আরেক বাসিন্দা তাহমিনা খানম বলেন, আগুন দেখে আর মানুষের চিৎকার শুনে রাতে ১ মিনিটও ঘুমাতে পারিনি। শুনেছি ওই ভবনে আটকা পড়া বহু লোক মারা গেছেন দম আটকে। কাচ্চি ভাইয়ের নিয়মিত ক্রেতা আজিজুর রহমান জানান, বৃহস্পতিবার রেস্টুরেন্টে সব খাবারের ওপর ৫০ শতাংশ ডিসকাউন্ট ছিল। সেজন্য ভোজন রসিকদের দীর্ঘ লাইন ছিল সেখানে।

এ ভবনের আগুনে মারা গেছেন বহু প্রতিভাবান মানুষ। সেই সঙ্গে পুড়েছে অনেকেরই স্বপ্ন। পুলিশের অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) নাসিরুল ইসলামের মেয়ে লামিশা ইসলাম বুয়েটে কেমিকৌশল বিভাগে পড়তেন। ২০১৮ সালে মায়ের মৃত্যুর পর বাবা এবং এক বোনকে নিয়ে রমনা কমপ্লেক্সে শিমুল ভবনে থাকতেন লামিশা। বুয়েটের ২২ ব্যাচের বন্ধু নাহিয়ান আমিনের সঙ্গে বৃহস্পতিবার রাতে বেইলি রোডের ওই ভবনের কোনো এক রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়েছিলেন লামিশা। আগুনে মারা যান তারা দুজনই। আদরের মেয়েকে হারিয়ে নির্বাক হয়ে পড়েছেন পুলিশ কর্মকর্তা বাবা।

ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে স্নাতক শেষ করেছিলেন তুষার হাওলাদার। সপ্তাহ খানেক পর গায়ে গাউন জড়িয়ে তার সমাবর্তনে অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিনেছিলেন নতুন জুতাও। কিন্তু নিমিষেই সব স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। ঢাকায় গোড়ানে পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তুষার। বাবা দিনেশ হাওলাদার চাকরি করেন বারডেম হাসপাতালে। দ্য রিপোর্ট ডট লাইভে ভিডিও এডিটর হিসাবে তুষার কাজ শুরু করেছিলেন। জানুয়ারিতে তিনি চাকরি ছেড়ে অন্য একটি মালটিমিডিয়া পোর্টালে চাকরি নেন। রাত ৮টায় তুষারের সঙ্গে শেষবার কথা হয়েছিল বাবার। রাত ১১টা পর্যন্ত জেগে কয়েকবার ফোন করেছেন। কিন্তু ফোনে আর তুষারকে পাননি। সকাল ৭টার পর পুলিশ ফোন দিয়ে তাড়াতাড়ি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসার কথা বলে। সেখানে গিয়ে দেখেন পড়ে আছে তুষারের নিথর দেহ।

খবর পেয়ে দ্য রিপোর্ট লাইভের তুষারের সহকর্মীরা ভিড় করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে। বার্ন ইনস্টিটিউটে তারা তুষারের আরেক সহকর্মী অভিশ্রুতি শাস্ত্রীর মৃতদেহ শনাক্ত করেন। দ্য রিপোর্ট লাইভের কর্মী গোলাম রাব্বানী যুগান্তরকে বলেন, অভিশ্রুতি শাস্ত্রী তাদের সহকর্মী ছিলেন। জানুয়ারিতে চাকরি ছেড়ে তিনি অন্যত্র যোগদানের চেষ্টা করছিলেন। তিনি বলেন, কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে তুষার ও অভিশ্রুতি শাস্ত্রী একসঙ্গে ছিলেন।

সফটওয়্যার প্রকৌশলী মিনহাজ উদ্দিন। কাওরানবাজারে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে আগুনে লাশ হয়েছেন তিনিও। মিনহাজ রাজধানীর বাসাবোতে বড় ভাইয়ের সঙ্গে থাকতেন। মিনহাজের ভাই ব্যাংক কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম বলেন, রাত পৌনে ১২টায় মিনহাজ বাসায় না ফেরায় আমরা চিন্তিত হয়ে পড়ি। রাত ১২টায় মিনহাজের সঙ্গে খেতে যাওয়া তার বন্ধু ফোন করে জানান, মিনহাজের সঙ্গে তিনি বিরিয়ানি খেতে গিয়েছিলেন। কিন্তু বেইলি রোডের সেই রেস্তোরাঁয় আগুন লেগেছে। তিনি দোতলা থেকে লাফিয়ে পড়ে আহত হয়ে বেরিয়ে এলেও মিনহাজ ভেতরে আটকা পড়েছেন। তিনি জানান, শুক্রবার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে এসে মিনহাজের হাতঘড়ি দেখে আমরা লাশ শনাক্ত করি।

কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খেতে গিয়ে লাশ হয়েছেন শিক্ষার্থী তিন খালাতো বোন নুসরাত জাহান নিমু, আলিশা ও রিয়া। নুশরাত সিটি কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থী। আলিশা ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত। আর রিয়া পড়তেন মালয়েশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সম্প্রতি তিনি দেশে এসেছিলেন। শুক্রবার তার মালয়েশিয়া যাওয়ার কথা ছিল।

নুসরাতের বাবা আব্দুল কুদ্দুস জানান, রাত তখন ১০টা। একমাত্র মেয়ে নুসরাত ফোন করে বলে-‘আব্বু, আগুন! আমাদের বাঁচান।’ এরপর ফোনে বহুবার চেষ্টা করেও নুসরাতের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারিনি।

ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল প্রভাতি শাখার জ্যেষ্ঠ শিক্ষক মা লুৎফুন নাহার করিম লাকী বৃহস্পতিবার ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে বাইরে বের হয়েছিলেন। ছেলের বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থাকায় তাকে বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে তিনি মেয়ে জান্নাতিন তাজরী নিকিতাকে নিয়ে বেইলি রোডের ওই ভবনের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে যান। নিকিতা বেসরকারি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তেন। ভবনে আগুন লাগলে মা-মেয়ে পরিবারের কাছে জরুরি বার্তা পাঠান। দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে জানিয়ে তারা তাদের বাঁচানোর জন্য আকুতি জানিয়েছিলেন। এই আগুনে মা-মেয়ে দুজনই মারা গেছেন।

কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে খাবার খেতে দুই সন্তান আরাহান আহমেদ (৮) ও আদিয়ান আহমেদকে (৬) নিয়ে গিয়েছিলেন বেইলি রোডের বাসিন্দা নাজিয়া আহমেদ (৩২)। তাদের সঙ্গে ছিলেন পরিচিত আরও তিনজন। ভবনে আগুন লাগলে হুড়োহুড়িতে এক ছেলে হারিয়ে যায়। ছেলেকে খুঁজতে গিয়ে আর বের হতে পারেননি নাজিয়া। দুই শিশুসহ তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ওই ভবন থেকে।

অন্যদিকে ইতালির গ্রিন কার্ড নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন স্বপ্না আক্তারের স্বামী সৈয়দ মোবারক হোসেন। ২৩ মার্চ স্ত্রী স্বপ্নাসহ তিন সন্তানকে নিয়ে তার ইতালি পাড়ি দেওয়ার কথা ছিল। সপরিবারে ইতালি যাওয়ার সেই স্বপ্ন পুড়ে ছাই করেছে বেইলি রোডের আগুন। এ দুর্ঘটনায় স্বামী, স্ত্রী ও তিন সন্তানসহ পুরো পরিবারই বিদায় নিয়েছে দুনিয়া ছেড়ে।


Spread the love


এই বিভাগের আরো খবর

Archive Calendar

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০৩১