চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইউনান প্রদেশের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ একটি শহরে মসজিদের গম্বুজ ভেঙে ফেলার পরিকল্পনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছেন সেখানকার মুসলিমরা। মসজিদের কিছু অংশ ভেঙে ফেলার এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইউনানের ওই এলাকায় পুলিশের সঙ্গে মুসলিমদের সংঘর্ষ হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কয়েকটি ভিডিওতে গত শনিবার ওই মসজিদের সামনে প্রচুর লোকজনকে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে দেখা যায় বলে জানায় বিবিসি।
এক পর্যায়ে পুলিশ ও স্থানীয়দের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া শুরু হলে বিক্ষোভকারীদের আটকাতে সেখানে শতাধিক সশস্ত্র পুলিশ মোতায়েন করা হয়।
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, স্থানীয়রা দাঙ্গা পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। পুলিশ মসজিদের প্রবেশ পথ বন্ধ করে দিয়েছে এবং বিক্ষোভকারীদের ব্যাটন ও ঢাল দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে।
এ সময় স্থানীয় ক্ষোভে চিৎকার করছেন। পুলিশকে লক্ষ্য করে বোতল ও ইট নিক্ষেপ করতেও দেখা গেছে।
অন্য ভিডিওতে দেখা যায়, পুলিশ মসজিদ প্রাঙ্গন থেকে সরে যাচ্ছে, যাতে ভিড় করা লোকজন নাজিয়াং মসজিদে প্রবেশ করতে পারে।
পরে রোববার তংহাই কাউন্টি পুলিশের পক্ষ থেকে নোটিস জারি করে আগামী ৬ জুনের মধ্যে বিক্ষোভকারীদের পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নাগু শহর তাংহাই কাউন্টির মধ্যে।
পুলিশ এখন পর্যন্ত বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানায় বিবিসি।
নোটিসে বলা হয়, ‘যারা পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করে সত্যিকারে নিজেদের দোষ স্বীকার করে নেবে তাদের কম সাজা দেওয়া হতে পারে।’
তারা এই ঘটনাকে ‘সামাজিক শৃঙ্খলা ব্যবস্থার একটি গুরুতর লঙ্ঘন’ বলে বর্ণনা করেছে। স্থানীয়দের বিক্ষোভের বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহায়তা করার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
নাগু শহরের ঐতিহাসিক স্থাপনার মধ্যে নাজিয়াং মসজিদটি অন্যতম। সম্প্রতি বেশকিছু সংস্কারের মাধ্যমে মসজিদটি আরো বড় করা হয়ছে। নতুন একটি গম্বুজ তৈরির পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মিনারও নির্মাণ করা হয়েছে।
কিন্তু ২০২০ সালে চীনের একটি আদালত মসজিদের বর্ধিত অংশকে অবৈধ ঘোষণা করে তা ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেয়।
আদালতের আদেশ পালনে স্থানীয় প্রশাসন থেকে ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হলে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয় এবং তারা বিক্ষোভ শুরু করে।
ইউনান দক্ষিণ চীনের একটি জাতিগতভাবে বৈচিত্র্যময় প্রদেশে। যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় মুসলমান জনসংখ্যা রয়েছে।
চীন আনুষ্ঠানিকভাবে একটি নাস্তিক দেশ এবং দেশটির সরকার দাবি করে, সেখানে সব ধর্মের চর্চায় স্বাধীনতা রয়েছে।
কিন্তু পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশটিতে গত কয়েক বছরে সুসংগঠিত ধর্মের বিরুদ্ধে দমনপীড়ন বেড়েছে। কারণ, বেইজিং পুরো দেশের উপর নিয়ন্ত্রণ আরো শক্ত করতে চাইছে।