বাংলার আকাশ ডেস্ক রিপোর্টঃ
রাজধানীর উত্তরায় এটিএম বুথে ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে ব্যবসায়ী শরীফ উল্লাহ নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে বুথ থেকে টাকা তুলে গোনার সময় শরীফ (৪৪) ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন।
উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে তিনি গুরুতর আহত হন। তাকে উদ্ধার করে উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে নেওয়া হলে রাত ২টার দিকে চিকিৎসকরা মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে, ঘটনার পর ঘাতক আবদুস সামাদকে (৩৮) নিরাপত্তাকর্মী ও জনতা আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেছেন।
শুক্রবার আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে সামাদ হত্যার দায় স্বীকার করেছে। পুলিশের কাছে ও আদালতে সে জানায়, বিভিন্ন সময় সে বিভিন্ন ধরনের কাজ করত। সম্প্রতি কাজ না থাকায় সে ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এজন্য সে ছিনতাইয়ে নামার সিদ্ধান্ত নেয়। টঙ্গি থেকে বসুমতি পরিবহণে সে বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় উত্তরায় নামে।
এরপর বিভিন্ন বুথের সামনে ঘুরে ঘুরে সে ছিনতাইয়ের সুযোগ খোঁজে। ব্যবসায়ী শরীফ বুথ থেকে টাকা তুললে সেই টাকা ছিনিয়ে নিতে সে তাকে ছুরিকাঘাত করে। জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে সামাদ আরও জানায়, আর্থিক অনটনে পড়ে সে ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে রাতে উত্তরায় আসে।
নেত্রকোনার পূর্বধলার বিশকাকলী এলাকার আবদুল হামিদের ছেলে সামাদ গাজীপুরের পুবাইলের বসুগাঁও গ্রামে পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকে। তার দুটি সন্তান রয়েছে। তার একটি সন্তান প্রতিবন্ধী বলেও সে জানায়। পুলিশ বলছে, সামাদ পেশাদার ছিনতাইকারী নয়। তার আগের কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি।
উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ মহসীন যুগান্তরকে বলেন, উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের সোনারগাঁও জনপথ সড়কের ২নং বাড়ির নিচতলায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের একটি এটিএম বুথে বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। ব্যবসায়ী শরীফ বুথ থেকে টাকা তুলে গুনতে থাকলে সেখানে ঢুকে সামাদ তার টাকা কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। তিনি বাধা দিলে সামাদ তাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে। তাদের মধ্যে ধস্তাধস্তি হয়। শরীফের চিৎকারে বুথের নিরাপত্তাকর্মী ও স্থানীয় কয়েকজন এগিয়ে আসেন এবং শরীফকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। আর সামাদ পালানোর চেষ্টা করলে কয়েকজন তাকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। ওসি মহসীন আরও জানান, ঘটনাস্থল থেকে রক্তমাখা ৮ হাজার টাকা ও একটি ছুরি জব্দ করা হয়েছে। ছিনতাইকারী কোনো টাকা নিতে পারেনি।
উত্তরা পশ্চিম-থানা পুলিশ জানায়, সুরতহাল প্রতিবেদনে শরীফের লাশের ডান পাশের কানের নিচে গলায় ধারালো অস্ত্রের বড় জখম ও বাঁ পাশের কানের নিচে দুটি ক্ষতচিহ্ন পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ব্যবসায়ী শরীফের বড়ভাই আনোয়ার হোসেন উত্তরা পশ্চিম থানায় হত্যা ও ছিনতাই চেষ্টার মামলা করেছেন। এ মামলায় সামাদকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আদালতে ১৬৪ ধারায় সামাদ হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে।
ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ওই এটিএম বুথের নিরাপত্তাকর্মী শাফিয়ার রহমান যুগান্তরকে বলেন, একটা লোক (শরীফ) টাকা তুলতে বুথে ঢোকেন। এর কিছুক্ষণ পর রিকশা থেকে নেমে আরেকজন (সামাদ) বুথে ঢুকতে চায়। তখন আমি তাকে দাঁড়াতে বললে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে যায় এবং ভেতরের লোকটার সঙ্গে ধস্তাধস্তি শুরু করে। পাশে থাকা ১২ নম্বর সেক্টরের সিকিউরিটি গার্ডকে ডেকে এনে দেখি ভেতরের লোকটা রক্তমাখা অবস্থায় নিচে পড়ে ছটফট করছেন। আর ওই লোকটা রাস্তার ওপর চাকু ফেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করছে। তখন আমরা পিছু নিয়ে তাকে ধরে ফেলি।
ডিএনসিসির উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরের রোড ৬/সির ২৪ নম্বর প্লটের জাকিয়া টাইলস গ্যালারি অ্যান্ড স্যানিটারি নামে টাইলসের দোকান পরিচালনা করতেন ব্যবসায়ী শরীফ উল্লাহ। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জ উপজেলার মধুপুর গ্রামের আলী মিয়ার ছেলে শরীফ গাজীপুরের টঙ্গীর দেওড়া এলাকায় ১৮৯ শাহজালাল রোডে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তার দুই ছেলে শাহ নেওয়াজ স্বাধীন (১২) ও সোয়েব মাহমুদ (৫)। তার স্ত্রীর নাম রিয়ানা পারভিন পলি।
শরীফের ভাতিজা নুরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, স্যানিটারি দোকান বন্ধ করে বাসায় ফেরার পথে চাচা বুথে টাকা তুলতে গিয়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। টাকা ছিনিয়ে নিতে বাধা দেওয়ায় তাকে ছিনতাইকারী ছুরিকাঘাত করে। এতে তিনি মারাত্মক আহত হন। চিকিৎসকরা জানান, অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়েছে। পুলিশের মাধ্যমে খবর পেয়ে আমরা উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে গিয়ে তাকে মৃত অবস্থায় পাই।
আহৃত