কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা ঈগল পরিবহণের বাসে টাঙ্গাইলের মধুপুরে ডাকাতি ও এক নারীকে গণধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। ওই ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওই বাসের এক যাত্রী জানান- পাশে বসা নারীকে ওপর চার দফায় ধর্ষণ করা হয়েছে। হাত, মুখ, চোখ বাঁধা থাকায় আমরা কিছুই করতে পারিনি।
বাসের যাত্রী নাটোরের বড়াইগ্রামের বাসিন্দা ফল ব্যবসায়ী হাবিবুর রহমান জানান, তিনি মঙ্গলবার রাত ১০টার দিকে নাটোরের তরমুজ চত্বর থেকে বাসে ওঠেন। বাসটি সিরাজগঞ্জের কাছাকাছি দিবারাত্রি হোটেলে নৈশভোজের জন্য বিরতি দেয়। তখন বাস থেকে নেমে অনেকেই ওই হোটেলে খাবার খায়। কড্ডার মোড়ে আসার পর গেঞ্জি-শার্ট পরা ১০-১২ যাত্রী ওঠে বাসে। তাদের প্রত্যেকেরই পিঠে ব্যাগ ছিল। তারা বাসের খালি সিটগুলোতে বসে পড়ে।
তিনি আরও জানান, বাসটি দ্রুতগতিতে চলছিল। বাসটি বঙ্গবন্ধু সেতু পার হওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দল ঘুমন্ত যাত্রীদের অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। এরপর একে একে সব যাত্রীর হাত, চোখ, মুখ বেঁধে ফেলা হয়। শিশুদেরও একই কায়দায় বেঁধে রাখে তারা। পরে সব যাত্রীর কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা, গয়না লুট করে নেয়। তারপর নারী যাত্রীদের পাশবিক নির্যাতন চালায় তারা। তার পাশে বসা নারীর ওপর চার দফায় ধর্ষণ করা হয়েছে। হাত, মুখ, চোখ বাঁধা থাকায় আমরা কিছুই করতে পারিনি।
বাসে ডাকাতি ও গণধর্ষণের ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত রাজা মিয়াকে গ্রেফতার করেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ। বৃহস্পতিবার ভোরে তাকে টাঙ্গাইল শহরের দেওলা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
রাজা মিয়া কালিহাতী উপজেলার বল্লা গ্রামের হারুন অর রশিদের ছেলে। তিনি টাঙ্গাইল শহরের নতুন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভাড়া বাসায় থাকেন। এদিকে রাজা মিয়াকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়।
ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রাথমিকভাবে গণধর্ষণের শিকার ওই নারীর ধর্ষণের আলামত মিলেছে। ওই নারী জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। গণধর্ষণের শিকার হওয়া ওই নারী জানান, ডাকাতির প্রতিবাদ করায় তার চোখ, মুখ ও হাত বেঁধে ফেলে। পরে ছয়জন ডাকাত পালাক্রমে তাকে ধর্ষণ করে। ডাকাতদের গ্রেফতার ও ফাঁসি দাবি করেন তিনি।
মেডিকেল বোর্ডের প্রধান শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজের গাইনি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রেহেনা পারভীন জানান, তিন সদস্যের মেডিকেল টিম পরীক্ষা করেছেন। কিছু সাইন পজিটিভ আছে। সাইন অব স্ট্রাগল রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তার সোয়াব সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ জানায়, গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কুষ্টিয়ার বরাই গ্রাম থেকে ২৪ জন যাত্রী নিয়ে ঈগল পরিবহণের বাসটি যাত্রা শুরু করে। রাত সাড়ে ১১টার পর সিরাজগঞ্জে রাতের খাবার খাওয়ার পর কড্ডার মোড় এলাকা থেকে তিন ধাপে ১০ জন যাত্রী ওই বাসে উঠে। চট্টগ্রামের উদ্দেশে ছেড়ে আসা বাসটি রাত সাড়ে ১২টার দিকে বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়। অনেক যাত্রী তখন ঘুমাচ্ছিলেন। এরপরই শুরু হয় ডাকাতদের তৎপরতা।
যাত্রীবেশী ডাকাতরা শুরুতেই অস্ত্রের মুখে ঘুমন্ত যাত্রীদের হাত, মুখ, চোখ বেঁধে ফেলে। এরপর তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, টাকা, স্বর্ণালংকার লুটে নেয়। পরে ডাকাত দলের সদস্যরা গাড়িতে থাকা নারীদের নির্যাতন করে। এক নারীকে ছয়জন ডাকাত বাসের মধ্যেই গণধর্ষণ করে। টানা তিন ঘণ্টা যাত্রীদের ওপর চালানো নির্যাতনের পর রাত ৩টা ২৫ মিনিটে মধুপুরের রক্তিপাড়া নামক স্থানে এসে বাসটির গতি কমিয়ে ডাকাত দল নেমে যায়। যাত্রীদের নিয়ে বাসটি রাস্তার পাশের বালুর স্তূপে ধাক্কা লেগে কাত হয়ে পড়ে। শব্দ শুনে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে এসে যাত্রীদের উদ্ধার করেন।
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, এ ঘটনায় বাসের যাত্রী কুষ্টিয়ার হেকমত আলী বাদী হয়ে মধুপুর থানায় ডাকাতি ও ধর্ষণের মামলা করেছেন।
আহৃত