৬৭ রানে ছয় উইকেট হারিয়ে জিম্বাবুয়ে তখন প্রবল চাপে। নাসুম আহমেদের সর্বনাশা এক ওভারেই বদলে গেল ছবিটা। ইনিংসের ১৫তম ওভারে নাসুমকে তুলোধুনো করে পাঁচ ছক্কা ও এক চারে রায়ান বার্ল রীতিমতো ছিনতাই করে নেন ৩৪ রান।
আন্তর্জাতিক টি ২০ তে বাংলাদেশের কোনো বোলারের সবচেয়ে খরুচে বোলিংয়ের এই বিব্রতকর রেকর্ডই শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিল ম্যাচে। বার্লের (২৮ বলে ৫৬) তাণ্ডবে ঘুরে দাঁড়িয়ে আট উইকেটে ১৫৬ রানের লড়াকু পুঁজি পেয়ে যায় জিম্বাবুয়ে।
এরপর হতাশার আরেকটি ব্যাটিং প্রদর্শনীতে সিরিজের অলিখিত ফাইনালে শেষ পর্যন্ত হেরেই গেল বাংলাদেশ। মঙ্গলবার হারারেতে সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচ ১০ রানে জিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে এই প্রথম টি ২০ সিরিজ জয়ের আনন্দে ভাসল জিম্বাবুয়ে।
১৫৬ রান তাড়ায় আট উইকেটে ১৪৬ রানে থামে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচে ১৭ রানে হারার পর দ্বিতীয়টি সাত উইকেটে জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে মুখোমুখি হবে দুদল।
কাল রান তাড়ায় বাংলাদেশ গড়তে পারেনি তেমন কোনো জুটি। প্রথম পাঁচ ব্যাটারের কেউ দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে নিতে পারেননি দলকে। শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করেছিলেন আফিফ হোসেন। কিন্তু ২৭ বলে তার অপরাজিত ৩৯ রানের ইনিংস জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না।
শেষ ওভারে ১৯ রানের সমীকরণ মেলাতে পারেননি আফিফ। নুরুল হাসানের চোটে দলে ফেরা মাহমুদউল্লাহ ২৭ বলে করেন ২৭ রান। এছাড়া মেহেদি হাসানের ব্যাট থেকে আসে ১৭ বলে ২২ রান। জিম্বাবুয়ের মতো শেষদিকে ঝড় তুলতে পারেননি বাংলাদেশের ব্যাটাররা। ১৫ থেকে ১৮, এই চার ওভারেই ৭০ রান তুলেছিল স্বাগতিকরা।
এর আগে টসে জিতে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় জিম্বাবুয়ে। টস হেরে বাংলাদেশ অধিনায়ক মোসাদ্দেক হোসেন জানান, তিনি প্রথমে বোলিং করতেই চেয়েছিলেন।
স্বাগতিকরা শুরু ভালোই করে। ইনিংসের প্রথম বলেই মোস্তাফিজকে বাউন্ডারি হাঁকান চাকাভা। বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন নাসুম আহমেদ। চতুর্থ ওভারের প্রথম বলে এই বাঁ-হাতি লেগ-স্পিনার চাকাভাকে (১৭) ফেরান আফিফ হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে।
ষষ্ঠ ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে যথাক্রমে ওয়েসলি মাধেভেরে ও সিকান্দার রাজাকে ফিরিয়ে দিয়ে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলেন ডান-হাতি অফ-স্পিনার মেহেদি হাসান। প্রথম দুই ম্যাচের হাফ সেঞ্চুরিয়ান সিকান্দার রাজা প্রথম বলেই শর্ট ফাইন লেগে মোস্তাফিজের ক্যাচে পরিণত হন। মেহেদিকে হ্যাটট্রিক বঞ্চিত করেন শন উইলিয়ামস।
তিনিও বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। আট বলে দুই রান করে ডিপ মিড-উইকেটে ক্যাচ দেন নাজমুল হোসেন শান্তকে। বোলার ছিলেন মোস্তাফিজ। জিম্বাবুয়ে চতুর্থ উইকেট হারায় ৫৪ রানে।
সেখান থেকে তাদের অর্ধেক ব্যাটার সাজঘরে ফেরেন ইনিংসের মাঝামাঝিতে। পঞ্চম উইকেটের রূপে বাইশ গজ ছাড়েন ক্রেগ আরভিন। নিজের প্রথম বলেই তাকে বড়শিতে গেঁথে নেন চোটে ছিটকে পড়া অধিনায়ক নুরুল হাসানের বদলে খেলতে নামা মাহমুদউল্লাহ। ২৭ বলে ২৪ রান করে স্টাম্পিংয়ের শিকার হন জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক।
স্বাগতিকদের উইকেট-বৃষ্টি অব্যাহত থাকে। ১৩ ওভার শেষে তারা ৬/৬৭। এবার মোস্তাফিজের শিকারে পরিণত হন মিল্টন শুম্বা। অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ। কিপার এনামুল হক অনেকটা ফুটবলের গোলরক্ষকের স্টাইলে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে দুর্দান্ত ক্যাচ নেন। ১১ বলে চার রান করেন শুম্বা। লুক জংওয়েকে তুলে নেন হাসান মাহমুদ। ২০ বলে ৩৫ রান করে জংওয়ে কভারে ক্যাচ দেন মোসাদ্দেককে।
তার আগে ১৫তম ওভারে নাসুমকে অসহায় বানিয়ে রায়ান বার্ল এক ওভারে ৩৪ রান নেন। পাঁচটি ছয় ও একটি চার। প্রথম চার বলে ছয়, পঞ্চমটিতে চার এবং ষষ্ঠ বলে আবার ছয়।
১৯তম ওভারের শেষ বলে বার্লকে লিটন দাসের ক্যাচ বানান হাসান মাহমুদ। ২৮ বলে ৫৪ রান করে জিম্বাবুয়ের শেষ ব্যাটার হিসাবে বার্ল আউট হন। তার শুধু মনই ভাঙেনি, ব্যাটও ভেঙে যায়।
১৯২.৮৫ স্ট্রাইক রেটের ঝড়ো ইনিংসে বার্ল ছয়টি ছয় ও দুটি চারের মার মারেন। জংওয়ের সঙ্গে ৩১ বলে ৭৯ রানের জুটি গড়েন বার্ল সপ্তম উইকেটে। মেহেদি ও হাসান দুটি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান মোস্তাফিজ, মোসাদ্দেক, নাসুম ও মাহমুদউল্লাহ।
আহৃত