পুলিশ সুপার (এসপি) পদে শিগগিরই বড় পদায়ন আসছে। ২৫ জেলার এসপিসহ সম্প্রতি ১১৯ জন এসপি পদমর্যদার পদ খালি হয়েছে। এসব পদের মধ্যে পছন্দের স্টেশনে পোস্টিং পেতে ইতোমধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন অনেকে। পদ ছাড়াই যারা পদোন্নতি পেয়েছিলেন, তাদের ভাগ্যও খুলছে এ পদায়নের মাধ্যমে।
গত বছরের ২ মে ৬৩ জন অতিরিক্ত এসপিকে এসপি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। পদ খালি না থাকায় তাদের মধ্যে প্রায় ৪০ জনকে এখনো পদায়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি। তাদেরকে এক বছরের বেশি সময় পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত রাখা হয়। অতিরিক্ত ডিআইজি পদে সম্প্রতি বড় পদোন্নতি হওয়ায় অনেক এসপি পদ খালি হয়। এই সুবাদে দীর্ঘদিন ধরে পদায়নবঞ্চিত কর্মকর্তাসহ অনেকেই এবার এসপি পদে যোগদানের সুযোগ পাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জেলার এসপি হিসাবে পদায়ন পেতে জোর লবিং চালাচ্ছেন পদায়নপ্রত্যাশীরা। কাক্সিক্ষত পদায়ন পেতে তারা ব্যস্ত শেষ মুহূর্তের তদবিরে। কারণ, চলতি সপ্তাহের মধ্যেই পদায়নের প্রজ্ঞাপন জারি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যারা জেলার এসপি পদে পদায়ন পাবেন, তাদের মধ্যে বিসিএস পুলিশের ২৪ ও ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তা বেশি। তবে ২৭তম ব্যাচের কয়েকজনকেও জেলার এসপি হিসাবে পদায়ন দেওয়া হতে পারে।
সূত্র জানায়, গত বছর পদোন্নতির পর সেখান থেকে ৪৮ জনকে র্যাবে উপপরিচালক পদমর্যাদায় বদলি করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর এই পদায়ন নিয়ে র্যাবে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ কারণে ঝুলে যায় ৪৮ এসপির পদায়ন। পরে নয়জনকে র্যাবে উপপরিচালক পদে পদায়ন করা হয়। বাকি ৩৯ জনকে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। তারা এখনো পুলিশ সদর দপ্তরে ন্যস্ত। সামনের পদায়নের ক্ষেত্রে তাদের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সূত্রমতে, পদায়নের ক্ষেত্রে সরকারি দলের অতি আস্থাভাজনদের কদর একটু বেশি। ছাত্রজীবনে যাদের সরকারি দলের ভালো ক্যারিয়ার রয়েছে, তারা এগিয়ে আছেন অপেক্ষাকৃত ভালো স্টেশন পাওয়ার ক্ষেত্রে। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদন তৈরি করে সরকারের উচ্চপর্যায়ে জমা দেওয়া হয়েছে। এখন যাদের এসপি হিসাবে পদায়ন করা হচ্ছে, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাদেরই সংশ্লিষ্ট জেলায় দায়িত্ব পালনের সম্ভাবনা বেশি। এজন্য এবারের এসপি পদে পদায়নের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সম্প্রতি বিসিএস ১৮ ও ২০তম ব্যাচের ৩২ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত থেকে ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। এরপর পুলিশ সুপার পদ থেকে ২০, ২২ ও ২৪ ব্যাচের ১১৯ জনকে অতিরিক্ত ডিআইজি পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়। সম্প্রতি এই ১১৯ জনসহ ১৩৯ জন অতিরিক্ত ডিআইজিকে বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হয়। এ কারণে ২৫ জেলার পুলিশ সুপারসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ইউনিটের ১১৯টি এসপি পদ একসঙ্গে ফাঁকা হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ডিএমপিতে দীর্ঘদিন দায়িত্বরত উপকমিশনার (ডিসি) পদমর্যাদার বেশকিছু কর্মকর্তাকে এবার জেলায় এসপি হিসাবে পাদায়ন দেওয়া হতে পরে। মাদকের বিষয়ে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স নীতির কারণে কক্সবাজার, লালমনিরহাট, মাগুরা ও ঝিনাইদহ জেলার পুলিশ সুপার পদে অধিকতর চৌকশ কর্মকর্তাদের দেখা যেতে পারে। বিশেষ করে মাদক উদ্ধার ও এর সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে অতীতে যাদের বড় সাফল্য রয়েছে, তাদের এসব স্টেশনে পোস্টিং পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
এদিকে সূত্র জানায়, ঝিনাইদহে পোস্টিং পেতে পারেন ২৫ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। কিশোরগঞ্জে পদায়ন হতে পারে ২৪ ব্যাচের একজন কর্মকর্তার। তিনি এর আগেও সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হিসাবে কর্মরত ছিলেন। ওই কর্মকর্তা এখন পুলিশ সদর দপ্তরে কর্মরত রয়েছেন। শরীয়তপুরে পদায়ন পেতে পারেন ২৭ ব্যাচের একজন কর্মকর্তা। লালমনিরহাটে দায়িত্ব দেওয়া হতে পারে ২৪ ব্যাচের একজন কর্মকর্তাকে। ওই কর্মকর্তা এখন ডিএমপিতে কর্মরত। ঢাকা জেলায় ২৪তম ও পিবিআইয়ের ৪টি এসপি পদে ২৫ ব্যাচের কর্মকর্তাদের দেখা যেতে পারে। সিআইডির ফাঁকা পদগুলোয়ও ২৫ ও ২৭ ব্যাচের কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হতে পারে। ডিএমপির তেজগাঁও ও রমনা বিভাগের উপকমিশনার পদে ২৪ ও ২৫ ব্যাচের দুই কর্মকর্তার নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সূত্র জানায়।
পুলিশ সদর দপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশের এসপি পদমর্যাদার এক কর্মকর্তাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি জেলায় পদায়নের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। এতদিন এপিবিএনের বিভিন্ন ব্যাটালিয়নে পুলিশ সুপার পদ মর্যাদার কর্মকর্তারা কমান্ডিং অফিসার (সিও) হিসাবে দায়িত্ব পালন করতেন। সম্প্রতি সিও হিসাবে সেখানে পদায়ন করা হয়েছে অতিরিক্ত ডিআইজি পদমর্যাদার কর্মকর্তাদের। তাই এপিবিএনের বিভিন্ন ইউনিটে পুলিশ সুপার পদে বেশ কয়েকটি পদ খালি হয়েছে। পুলিশ সদরে সংযুক্ত কয়েকজন কর্মকর্তাকে ওইসব ব্যাটালিয়নে এসপি পদে পদায়ন দেওয়া হতে পারে বলেও সূত্র নিশ্চিত করেছে।
(আহৃত)