নেত্রকোনার কলমাকান্দায় শনিবার সন্ধ্যা থেকে ভারি বৃষ্টি না হওয়ায় বন্যার পানি কিছুটা কমতে শুরু করেছে। এই তিন দিন আকাশে হালকা রোদের দেখা মিলেছে। তবে কোথাও কোথাও হালকা ও মাঝারি বৃষ্টি হয়েছে।
মঙ্গলবার রাত ৮টা পর্যন্ত উপজেলার ৬২ আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা সাত হাজার বন্যাকবলিত মানুষ বাড়িতে ফিরেনি। কারণ রাস্তাঘাট ও মানুষের ঘরবাড়িতে এখনো বন্যার পানি রয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ও আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, মানুষেরা খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে রয়েছেন।
নেত্রকোনা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহনলাল সৈকত বলেন, উব্দাখালী নদীর কলমাকান্দা পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
কলমাকান্দায় বৃহস্পতিবার রাত থেকে বন্যা শুরু হওয়ার পর মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। উপজেলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার গ্রাহকের পল্লী বিদ্যুতের সংযোগ বন্ধ রয়েছে। বন্ধ আছে ২১৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। মানুষের সঙ্গে আশ্রয়কেন্দ্রে আছে প্রায় তিন হাজার ৫০০ গবাদিপশু। তার মধ্যে গরু এক হাজার ৩০০, ছাগল এক হাজার ৭০০ ও ভেড়া ৫০০ বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. কণিকা সরকার। তিনি গবাদিপশুদের খাদ্য সংকটের কথাও স্বীকার করেছেন।
সরেজমিন দেখা গেছে, উপজেলার ৮ ইউনিয়নের প্রায় ৭২ ভাগ বাড়িঘরে এখনো বন্যার পানি রয়েছে। তাই এখনই বন্যাকবলিত মানুষ আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে পারছে না। তবে পানি কমতে শুরু করায় সোমবার দুপুর থেকে উপজেলা সদরের বিভিন্ন এলাকায় কিছু কিছু দোকানপাট খুলেছে। সদরের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট এখনো প্লাবিত। এসব সড়কের কোথাও হাঁটু, আবার কোথাও কোমরসমান পানি। এসব এলাকায় নৌকা ছাড়া চলাচল করা যাচ্ছে না। খাবার পানির সংকট রয়েছে সর্বত্র।
তবে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, উপজেলাজুড়ে তারা ৪০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করেন।
দুপুর ১২টা থেকে দেড়টার মধ্যে কলমাকান্দা পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, কলমাকান্দা সরকারি কলেজ, উদয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়, উপজেলা কমপ্লেক্সসহ অন্তত আটটি আশ্রয়কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, পানি ও খাবারের সংকট। তবে উপজেলা প্রশাসনের দাবি তারা নিয়মিত ত্রাণসামগ্রী আশ্রয় নেওয়া মানুষের মধ্যে বিতরণ করছেন। ত্রাণের কোনো অভাব নেই।
কলমাকান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আবুল হাসেম জানান, পানি কিছুটা কমলেও মানুষের বাড়িঘরে ফেরার মতো অবস্থা হয়নি। এখনো অনেক এলাকা প্লাবিত। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোয় সাধ্যমতো শুকনা ও খিচুড়ি রান্না করে বিতরণ করা হচ্ছে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালেক তালুকদার বলেন, ত্রাণের সংকট রয়েছে। আমরা যে যা পারছি সহযোগিতা করে আসছি। জেলা প্রশাসকও আশ্বাস দিয়েছেন কলমাকান্দাবাসীর জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর। এই আপদকালীন সময়ে সকলকেই এগিয়ে আসা উচিত।
কলমাকান্দা উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র পরিদর্শণ শেষে বিকেলে জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, নেত্রকোনায় সার্বিক বন্যার পরিস্থিতি আরও উন্নতি হচ্ছে। ত্রাণের কোনো সংকট নেই। আরও ত্রাণ আসছে। এ পযর্ন্ত কলমাকান্দা উপজেলায় ৪৫ টন জিআর চাল, দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ ও ৭০০ প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে।
(আহৃত)