উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে ফরিদপুর জেলার নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। গত ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর পানি গোয়ালন্দ পয়েন্টে ৫৭ সেন্টিমিটার বেড়েছে। যদিও এখন তা বিপৎসীমার নিচ দিয়েই প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির যে হার তাতে দুই-এক দিনের মধ্যে বিপৎসীমা অতিক্রম করার শঙ্কা প্রকাশ করেছেন স্থানীয়রা।
হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধির ফলে ফরিদপুরের পদ্মা, আড়িয়াল খা, মধুমতি, কুমার ও চন্দনা-বারাসিয়া নদীর পানি বেড়েছে আশংকাজনক হারে। পানি বৃদ্ধির ফলে ফরিদপুরের চরাঞ্চলের নিম্মাঞ্চল এলাকা সমূহ ইতোমধ্যেই পানির নীচে তলিয়ে গেছে। হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ায় চরাঞ্চলের বাদাম, তিল, ধানসহ শাক-সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
পদ্মানদী বেষ্টিত ফরিদপুর সদর উপজেলার নর্থ চ্যানেল, ডিক্রিরচর, চরমাধবদিয়া ইউনিয়নের বেশিরভাগ চরাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে সেখানকার মানুষেরা অসহায় অবস্থার মধ্যে দিনযাপন করছে।
নর্থচ্যানেল ইউনিয়নের আইজুদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গী গ্রামের সোহরাব মাতুব্বর জানান, হঠাৎ করেই সবকিছু তলিয়ে যাচ্ছে। একরাতে তলিয়ে গেছে চরের ফসলি জমি। কৃষকরা যে বাদাম লাগিয়ে ছিলেন তা তুলতে পারেননি। ফলে তাদের বেশ ক্ষতি হয়েছে। সবজি ক্ষেত তলিয়ে যাওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকের মাথায় হাত পড়েছে। অনেকেই ঋণ-কর্জ নিয়ে সবজির আবাদ করেছিলেন। সবজি ক্ষেত নষ্ট হওয়ায় তারা বেশ লোকসানের মধ্যে পড়েছেন।
নর্থ চ্যানেল ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাকুজ্জামান মোস্তাক জানান, ইউনিয়নে প্রায় ৫০০ মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলের বেশিরভাগ পানিতে তলিয়ে গেছে। ব্যাপকভাবে ক্ষতি হয়েছে বাদাম, তিল, কলাবাগানসহ বিভিন্ন সবজির ক্ষেত।
এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে পদ্মা ও মধুমতি নদীর ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামে শুরু হয়েছে ব্যাপক হারে নদী ভাঙন। নদী ভাঙনের কবলে পরে কয়েক হেক্টর ফসলি জমি বিলীন হয়েছে।
মধুমতি নদীর ভাঙনে আলফাডাঙ্গা উপজেলার কয়েকটি গ্রামের বেশকিছু বাড়িঘর, স্থাপনাসহ ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। ফলে এসব এলাকার মানুষ চরম আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছেন।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা জানান, ফরিদপুরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যদিও পদ্মা নদীর পানি বিপৎসীমার ১ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) দীপক কুমার রায় বলেন, বন্যা মোকাবেলায় জেলা প্রশাসনের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুরের ৯টি উপজেলায় ৭ টন করে ত্রাণ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আমাদের ১৫০ টনের অধিক ত্রাণ মজুদ রয়েছে। আশা করি, বন্যা মোকাবেলায় তেমন কোনো সমস্যা হবে না।
(আহৃত)