প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিরোধিতাকারীরা যাতে কোনোরকম ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে সেজন্য সশস্ত্র বাহিনীসহ সব বাহিনীকে সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো এত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করেছি। কিন্তু, যারা সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল তাদের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে।
যার কিছু কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি, এমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে যাতে ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি। বিরোধিতাকারীরা কী করবে তা কিন্তু আমরা জানি না।
শেখ হাসিনা বুধবার সকালে তার কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে উপস্থিত তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি এবং আনসার ও ভিডিপির প্রধানদের উদ্দেশ করে বলেন, আমাদের সবাইকে কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে।
পুরো বিষয়টাই একটু রহস্যজনক। এজন্য সবাইকে বলব, সতর্ক থাকতে হবে এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকেও সবাইকে নজর দিতে হবে। সেগুলোর নিরাপত্তা দিতে হবে।
সরকারপ্রধান বলেন, ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এ দেশের ব্যক্তিবিশেষের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু নির্মাণে অর্থায়ন বন্ধ করে দিলে তার সরকার নিজেদের অর্থায়নে করার ঘোষণা দিয়েছিল।
তার সরকার সেই পদ্মা সেতু নিজেদের অর্থে নির্মাণ করেছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা দেখেছেন-রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন, ফেরিতে আগুন এমনকি সীতাকুণ্ডে যে আগুনটা সেটা একটা জায়গা থেকে লাগতে পারে, কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটা জায়গায় আগুন লাগে কীভাবে।
আর রেলের আগুনের বিষয়ে একটি ভিডিও পাওয়া গেছে যেখানে দেখা গেছে-রেলের চাকার কাছে আগুন জ্বলছে, সেটা কী করে সম্ভব সে প্রশ্নও তোলেন তিনি।
এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক এবং মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিকে মানুষের নাগালের মধ্যে এনে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। কিন্তু এসবের সুযোগ নিয়ে সন্ত্রাস বা জঙ্গিবাদ সৃষ্টির অপপ্রয়াস সম্পর্কেও সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, এই ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা যেমন একদিকে আমাদের আর্থসামাজিক উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি করেছে, অপরদিকে এই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করেই সন্ত্রাসী এবং জঙ্গিগোষ্ঠী নানা কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে।
সেজন্য তার সরকার আধুনিক বিশ্ব এবং যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এসএসএফসহ অন্য বাহিনীগুলোকে প্রযুক্তিনির্ভর ও শক্তিশালী করে গড়ে তুলছে উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে এবং বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদকেও দমন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী তার সরকার প্রযুক্তি শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে উল্লেখ করে বলেন,? হাইটেক পার্ক করে দিচ্ছে, কম্পিউটার ল্যাব করে দিয়ে প্রযুক্তি শিক্ষার দিকে নজর দিয়েছে। পাশাপাশি স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করেছে।
রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করছে, রাজধানীবাসীর চলাচল সুবিধার জন্য মেট্রোরেল প্রকল্পও আজ দৃশ্যমান। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে করে দিচ্ছে, কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ হচ্ছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তায়ও ব্যবস্থা নিতে হবে। সরকারপ্রধান বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে একটা মিথ্যা অপবাদ আমাদের দিয়েছিল। দুর্ভাগ্য, আমাদের একজন স্বনামধন্য মানুষ, যাকে আমি সবচেয়ে বেশি সুযোগ-সুবিধা দিয়েছিলাম, সেই ড. ইউনূস বেইমানি করেছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদে থাকতে না পেরে তিনি এ কাজ করেছেন। তিনি তার বন্ধু তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের স্বামীর ক্লিনটন ফাউন্ডেশনে তিন লাখ ডলার ডোনেশনও দিয়েছিলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, হিলারি ক্লিনটন তাকে ফোন করেছেন। তার কাছে ধরনাও দেন এবং যাকে তিনি আইনের কথা বলেছিলেন। অন্যদিকে পদ্মা সেতুতে দুর্নীতি হয়েছে বলে তারা বিশ্বব্যাংকের কাছে বারবার মেইল পাঠিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চ্যালেঞ্জ হিসাবে নিয়েছিলাম যে, দুর্নীতি প্রমাণ করতে হবে। পরে কানাডার আদালতে এটা ভুয়া প্রমাণ হয়েছে। কিন্তু ড. ইউনূসের প্ররোচনায় বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায়।
আমরা বলেছিলাম, নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করব। কাজেই খুব স্বাভাবিকভাবে অনেকেই ভেবেছিল এটা বোধহয় আমরা কোনোদিন করতে পারব না। কিন্তু আল্লাহর রহমতে আমরা কিন্তু সেটা করে ফেলেছি।
শেখ হাসিনা বলেন, গুলি ও বোমার মুখে পড়েছি। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছেন। হয়তো আল্লাহ আমাকে দিয়ে কোনো কাজ করাবেন, এজন্যই বাঁচিয়ে রেখেছেন।
বাংলাদেশে যেসব বিদেশি অতিথি আসেন তারা এসএসএফের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং তিনি নিজেও তাদের পারদর্শিতায় গর্ববোধ করেন বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, এটাই সব সময় মাথায় রাখতে হবে পেশাগত দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি চারিত্রিক দৃঢ়তা, সততা, শৃঙ্খলা সবকিছু মেনেই চলতে হবে এবং আমাদের এসএসএফ সে ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন।
তিনি বলেন, আমি সব সময় যখন দোয়া করি আমি আমার ছেলেমেয়ের জন্য যেমন দোয়া করি, নাতি-পুতির জন্য যেমন দোয়া করি তেমনি ঠিক সেই রকমভাবে আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন প্রত্যেকের জন্য আমি দোয়া করি।
এসএসএফের জন্য বিশেষ করে দোয়া করি। আমার নিরাপত্তা দিতে গিয়ে যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেটা সব সময় আমি চিন্তায় রাখি।
তিনি বলেন, জাতির পিতার করে দেওয়া পররাষ্ট্রনীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়,’ এই নীতি নিয়েই বাংলাদেশ আগামীতেও সামনে এগিয়ে যাবে।
পরিবেশ রক্ষায় প্রত্যেকে কমপক্ষে একটি করে গাছ লাগান : এদিকে বাংলাদেশ কৃষক লীগের ৩ মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বলেন, সরকারের পাশাপাশি তার দল জলবায়ু পরিবর্তনের প্রতিকূল প্রভাব থেকে পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষায় যথাযথ ও সময়মতো বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং তিনি প্রত্যেককে একটি করে গাছের চারা রোপণের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, ‘আপনাদের যার যতটুকু জায়গা আছে, তার ততটুকু জায়গার মধ্যে অন্তত একটি করে গাছ লাগাতে আমি সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
আপনারা যারা বিভিন্ন শহরে বসবাস করেন তারা ছাদে বা আপনাদের বাসার ব্যালকনিতে টবে গাছ লাগাতে পারেন। সরকারি অফিসের ছাদে বিভিন্ন ছাদ বাগান করা যেতে পারে।’
প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বৃক্ষরোপণ প্রচারণার প্রথম উদ্যোগের কথা স্মরণ করেন।
এ সময় তিনি গণভবন প্রাঙ্গণে ছাতিম, সফেদা ও হরতকি গাছ রোপণ করেন। ১৯৮৫ সাল থেকে আওয়ামী লীগের কৃষিজীবী শাখা প্রতি বছর বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালন করে।
(আহৃত)