বাণিজ্যমন্ত্রীর আশ্বাসের পরও সরকারের পক্ষ থেকে ভোজ্যতেলের দাম নতুন করে লিটারে ৭ টাকা বাড়ানো হয়েছে। তবে মূল্য বাড়িয়ে যে দর নির্ধারণ করা হয়েছে খুচরা বাজারে তার চেয়েও লিটারে ৫-১০ টাকা বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে। এতে তেলের বাজারে নতুন করে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি তদারকির পরও চালের দামে এর সুফল নেই। কিনতে হচ্ছে বাড়তি মূল্যে।
এছাড়া সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন করে আমদানি করা হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ ও চিনির দাম বেড়েছে। সঙ্গে এক দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। ফলে এসব পণ্য কিনতে ক্রেতার বাড়তি টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
রাজধানীর কাওরান বাজার, নয়াবাজার ও মালিবাগ কাঁচাবাজার ঘুরে ও মুদি বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিলিটার খোলা সয়াবিন ১৮০ টাকার বিপরীতে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু খুচরা বিক্রি হয়েছে ১৯০-১৯৫ টাকা। তবে প্রতিলিটার বোতল সয়াবিন সরকার নির্ধারিত ২০৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা দাম বাড়ানোর আগে ১৯৮-২০০ টাকায় বিক্রি হতো।
রাজধানীর নয়াবাজারের নিত্যপণ্য কিনতে আসা মো. হেলাল বলেন, এইতো কিছুদিন আগেও বাণিজ্যমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছিলেন ভোজ্যতেলের দাম কমবে। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমার কারণে দেশের বাজারেও কমানো হবে। কিন্তু যেদিন বাজেট ঘোষণা হলো ঠিক সেদিন চুপিচুপি মন্ত্রণালয় তেলের দাম বাড়িয়ে দিল। এটা কোনো কথা হতে পারে না। যেখানে তেলের দাম কমিয়ে ক্রেতা সাধারণকে স্বস্তি দেবে, সেখানে দাম বাড়িয়ে বাজারে আরেক দফা অস্থিরতা সৃষ্টি করল। তিনি বলেন, সরকার যে দাম নির্ধারণ করল তার চাইতেও বেশি দামে খুচরা বিক্রেতারা বিক্রি করছে। ফলে স্বস্তির জায়গায় অস্বস্তি বেড়েছে।
একই বাজারের মুদি বিক্রেতা মো. তুহিন বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে দাম বাড়ানোর জন্য পরিবেশক পর্যায় থেকে দাম বাড়ানো হয়েছে। ফলে পাইকারি বাজারে দাম বেড়েছে। আর পাইকারি থেকে বেশি দাম দিয়ে এনে আমাদেরও বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে।
এদিকে চালের সরবরাহ পর্যাপ্ত।
পাশাপাশি সরকারের একাধিক বাজার তদারকি সংস্থার অভিযানের পরও চালের দামে এর সুফল ফিরেনি। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাড়তি দরে ক্রেতার চাল কিনতে হচ্ছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রতিকেজি মিনিকেট মানভেদে ৬৬-৬৮ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বিআর ২৮ চাল প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৫৪-৫৫ টাকা। নাজিরশাইল মানভেদে প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৭৫-৮৬ টাকা।
মালিবাগ কাঁচাবাজারের খালেক রইস এজেন্সির মালিক ও খুচরা চাল বিক্রেতা মো. দিদার হোসেন বলেন, সরকারের অভিযান চলছে। তারপরও মিলাররা চাল বাড়তি দরেই বিক্রি করছে। তাই বেশি দামে চাল কিনে বিক্রি করতে হচ্ছে বেশি দামে।
মিলারদের কাছে কারণ জনতে চাইলে তারা বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানের দিকে অভিযোগের তির ছুড়ছেন। আসলে সব তাদের কারসাজি।
এছাড়া বাজারে এক সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি করা হলুদ, মরিচ, পেঁয়াজ ও চিনির দাম বেড়েছে। সঙ্গে এক দিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে-এ দিন প্রতিকেজি আমদানি করা হলুদ বিক্রি হয়েছে ২৪০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
আমদানি করা শুকনা মরিচ প্রতিকেজি ৩৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। যা আগে ৩৫০ টাকা ছিল। সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতিকেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম ৫ টাকা বেড়ে ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কেজিতে ২-৪ টাকা বেড়ে চিনি বিক্রি হয়েছে ৮৪ টাকা। আর এক দিনের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকা।
বাজার তদারকি সংস্থা জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার যুগান্তরকে বলেন, চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। খুচরা ও পাইকারি বাজারের পর এবার বড় মিল ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালনা করা হবে। আশা করি দাম কমবে। ইতোমধ্যে পাইকারিতে কমতে শুরু করেছে। তিনি জানান, সরকারের পক্ষ থেকে নতুন করে ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করেছে। কেউ যাতে নির্ধারিত দামের চাইতে বেশি দরে বিক্রি না করতে পারে সে জন্য মনিটরিং করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে ভোজ্যতেল সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না। নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত দাম। নগরী ও উপজেলা পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারপ্রতি ১৫ থেকে ২০ টাকা বেশি দামে ভোজ্যতেলে বিক্রি হচ্ছে। কোথাও কোথাও আরও দাম বাড়ার আশঙ্কায় ভোজ্যতেল বিক্রিও করছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে খুচরা পর্যায়ে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হচ্ছে।
খোলা সয়াবিন তেল ১৮৫ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও বাজারে বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা। এক লিটার বোতলজাত সয়াবিন ২০৫ টাকা বিক্রি হওয়ার কথা থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ২১৫ টাকায়। তবে পাইকারি পর্যায়ে ভোজ্যতেলের বাজার কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে।
ভোজ্যতেলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারের ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর সুযোগ নিয়ে কোটি কোটি টাকা মুনাফা তুলে নিচ্ছে এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী। অথচ এসব ভোজ্যতেল কম দামে কেনা।
চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, সরকার হঠাৎ করে ভোজ্যতেলের দাম বাড়িয়েছে। কিন্তু আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়েনি। ফলে ব্যবসায়ীরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে রয়েছে কখন আবার তেলের দাম কমিয়ে দেয় সরকার। ফলে অনেকে এখন তেল কেনা বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার তেলের দাম আরও বাড়তে পারে এমন শঙ্কা থেকে অনেকে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন।
(আহৃত)