আপনারা জানেন যে, ড. ইউনূস সেই এই কাণ্ডটা ঘটিয়েছিল। গ্রামীণ ব্যাংকের এমডি পদটার জন্য। কারণ সে এমডি পদটা হারিয়েছে বয়সের কারণে। গ্রামীণ বাংকের যে আইনে সেখানে আছে ৬০ বছর পর্যন্ত এমডি থাকতে পারে।
তিনি ৭১ বছর বয়সেও এমডি থেকেছিলেন। এ কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক পদক্ষেপ নেয়। তাই ড. ইউনূস আমাদের সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের বিরুদ্ধে মামলা করেন। দুটি মামলা করেন। সে মামলাতে তিনি হেরে যান।
প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে ওঠেন। হিলারি ক্লিন্টনের মাধ্যমে আমেরিকার সরকারকে দিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টকে বাধ্য করেন পদ্মা সেতুর অর্থ বন্ধ করে দিতে। সেখানে দুর্নীতির প্রশ্ন তোলা হয়। আমি চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিলাম।
এটা তারা প্রমাণ করতে পারেনি। কানাডার কোর্ট স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছে সব অভিযোগ মিথ্যা, ভুয়া।
কিন্তু সেই সময় একটা প্রচণ্ড মানসিক চাপ, বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নষ্টে কিছু লোক নানা কথা বলে। কিন্তু আমি বলেছিলাম- আমরা এটা করব এবং আমরা করতে পেরেছি। আল্লাহর রহমতে ২৫ জুন উদ্বোধন করব ইনশাল্লাহ।
তিনি বলেন, এই চ্যালেঞ্জটা নিয়েছিলাম এ কারণে যে, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে কেউ বিরূপ কথা বললে আমি তা পছন্দ করি না। কারণ জাতির পিতা এ দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন।
সন্তান হিসাবে আমরা তো বাবাকে পাই-ইনি! কতটুকু পেয়েছি? তিনি তার নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছেন। তিনি এই দেশকে স্বাধীন করেছেন। কাজেই আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে আমাদের লক্ষ্য থাকে, জাতির পিতার স্বপ্নটাকে পূরণ করা।
শেখ হাসিনা বলেন, এই একটা সিদ্ধান্ত, বাংলাদেশ যে কারও ওপর নির্ভরশীল নয়; বা কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের ওপর যে একেবারেই নির্ভরশীল নয়- সেটা আমরা প্রমাণ করেছি। আমরা কারও ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকতে চাই না।
আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। আজকে আমরা আমাদের উন্নয়নের শতকরা ৯০ ভাগ নিজেদের অর্থায়নে বাস্তবায়ন করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ বলতে আগে যেখানে বলা হতো- ঝড়, বন্যা, দুর্ভিক্ষের দেশ।
এখন আর তা নেই। মঙ্গা নেই। মানুষের দু-বেলা খাবারের নিশ্চয়তা আমরা নিশ্চিত করতে পেরেছি। আমরা মানুষের মৌলিক অধিকার যা সংবিধানে বলা আছে, তা বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দলের জাতীয় সম্মেলন করা হবে বলে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা আমাদের দলের সম্মেলনও করব। করোনার জন্য অনেক কাজ করতে পারিনি।
এখন সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদস্যদের দিয়ে আটটা টিম করে দিয়েছি আট বিভাগের জন্য। সেখানে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা থাকে।
তারা সারা দেশে সফর করছেন, সম্মেলন করছেন। এই সম্মেলন আমরা একেবারে তৃণমূল থেকে করে আসছি। যাতে দল শক্তিশালী হয়। আশা করছি জাতীয় সম্মেলনটাও ডিসেম্বরের মধ্যে করতে পারব।
তারও প্রস্তুতি আমাদের নিতে হবে। কারণ সম্মেলন করার আগে আমাদের অনেক কাজ থাকে। গঠনতন্ত্রের বিষয়ে কমিটি করি। ঘোষণাপত্র তৈরির জন্য কমিটি করি।
এর মধ্য দিয়েই আমরা আগামী দিনের পরিকল্পনা অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলে উন্নয়নটা কী করব, সেই পরিকল্পনা করে থাকি। সে বিষয়েও আপনাদের পরামর্শ চাই। আপনারাও এই ব্যাপারটা দেখবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বিশ্বে বাংলাদেশের অবস্থা দুঃখজনক ছিল। কারণ ক্ষমতা তো জনগণের হাতে ছিল না। ক্ষমতা চলে গিয়েছিল মিলিটারি ডিকটেটরদের হাতে। উর্দি পরে ক্ষমতা দখল করত।
দেশের উন্নয়ন না করে তারা নিজেদের উন্নয়ন করেছে। ১৯-২০টা ক্যু হয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অস্ত্রের ঝনঝনানি ছিল, সেশনজট ছিল। আমরা ক্ষমতায় আসার পরে সব জায়গায় একটা ডিসিপ্লিন এসেছে এবং দেশের উন্নয়নের গতিটাকে ত্বরান্বিত করে উন্নয়নের সুফল দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আমাদের উন্নয়নের চিন্তা ওরকম ছিল না যে, বড়লোক বড়লোক হবে আর উচ্ছিষ্ট যা ঝরে পড়বে সেটা নিচে পৌঁছবে। সেটা না। আমাদের চিন্তা ছিল একেবারে নিু পর্যায় থেকে মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নটা করব।
যার ফলে আমাদের দারিদ্র্যসীমা ২০-এ নামিয়ে এসেছে। যদিও করোনাভাইরাস অর্থনীতির গতি কমিয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি এটা এবার আরও কমিয়ে আনতে পারব।
আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা ৮ ভাগে উন্নীত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু করোনার জন্য এটা কমে গিয়েছিল। এটা এখন আবার ৭-এ নিতে পেরেছি। আমাদের আয় বেড়েছে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি।
উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পরে যে চ্যালেঞ্জগুলো আসবে তা মোকাবিলায় প্রস্তুতি সরকার নিচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এটা কীভাবে মোকাবিলা করব সে পরিকল্পনা ও পদক্ষেপ নিচ্ছি।
কাজেই এটাও আমাদের জন্য কঠিন কাজ হবে না। ইশতেহারে ঘোষণা দিয়ে নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে আমরা সেটা ভুলে যাই না।
প্রতিবার বাজেট রচনার আগে সেই ইশতেহার হাতে নিয়ে কতটুকু অর্জন করতে পারলাম, কতটুকু আমাদের সামনে করতে হবে, সেগুলো বিবেচনা করে সেভাবেই বাজেট করি।
এর আগে আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিকাল সোয়া ৪টায় উপদেষ্টা পরিষদের সভা শুরু হয়। ২০১৯ সালে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলনের পর এটাই এককভাবে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের প্রথম সভা।
এর আগে ২০২০ সালে ৩ ও ৪ জানুয়ারি উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির যৌথ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এরপর করোনার কারণে প্রায় আড়াই বছর পেরিয়ে গেলেও উপদেষ্টা পরিষদের আলাদা কোনো সভা করতে পারেনি আওয়ামী লীগ।
আহৃত