বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে সুপারিশ ও এমপিওভুক্তিতে মৌলিক পরিবর্তন আসছে। শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) বর্তমানে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা নিয়ে ফিটলিস্ট তৈরি করে। পরবর্তী সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে শূন্যপদের চাহিদা নিয়ে এ তালিকা থেকে প্রার্থী চূড়ান্ত করে দেয়। এরপর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদের নিয়োগ দেয়। কিন্তু এতে নানা ধরনের জটিলতা তৈরি হচ্ছে।
এ কারণে এর পরিবর্তে সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) মতো কেবল শূন্যপদের আগাম চাহিদা নিয়ে প্রার্থী নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করবে এই সংস্থাটি। অন্যদিকে নিয়োগপ্রাপ্ত এসব প্রার্থী সরাসরি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরে (মাউশি) এমপিওভুক্ত হবে। বর্তমানে তাদেরকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানপ্রধানের মাধ্যমে আবেদনের পর চারটি স্তর পার করে এমপিওভুক্ত হতে হয়। আর এটা করতে গিয়ে ঘাটে ঘাটে ঘুস ঢালতে হয় বলে অভিযোগ আছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে, উল্লিখিত নয়া বিধান প্রবর্তনের লক্ষ্যে এনটিআরসিএ-এর আইনে সংশোধন আনা হচ্ছে। এতে শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা বাতিল ও নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে শূন্যপদে নিয়োগের চিন্তা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সংস্থাটির নামেও পরিবর্তন আসবে। নতুন নাম চিন্তা করা হয়েছে ‘বেসরকারি শিক্ষক নির্বাচন কমিশন’ (এনটিএসসি)।
জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (২৬ মে অবসরে গেছেন) ফৌজিয়া জাফরীন বলেন, এনটিএসসির জন্য একটি খসড়া আইন তৈরি করতে এনটিআরসিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেটি এ মাসের মধ্যে পাঠানোর কথা আছে। এটি করা গেলে সরাসরি শিক্ষক ও এমপিওভুক্তির প্রথা প্রবর্তন করা যাবে। তবে নতুন পদ্ধতি চালুর আগে অংশীজনের মতামত নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
এনটিআরসিএ-এর আইন সংশোধনে কাজ অনেকদূর এগিয়েছে। ইতোমধ্যে সংস্থাটির একাধিক সভা হয়েছে। এরই ভিত্তিতে আইন সংশোধন করে একটি খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে। প্রস্তাবে পিএসসির আদলে এনটিএসসি তৈরির কথা আছে। বর্তমান কাঠামোর আদলেই জনপ্রশাসনের একজন অতিরিক্ত সচিব এর চেয়ারম্যান হবেন। এছাড়া পাঁচজন যুগ্মসচিবকে সদস্য করার কথা আছে। যদিও পরীক্ষা গ্রহণ ও ফল প্রকাশের মতো বিশেষায়িত কাজ থাকায় চেয়ারম্যান ও সদস্যপদে শিক্ষকদের বসানোর পথও খোলা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষকনেতারা। কেননা পরীক্ষা নেওয়া আর ফলাফল তৈরিতে শিক্ষকরাই অভ্যস্ত।
মাউশি সূত্র জানায়, শিক্ষক নিয়োগের সঙ্গে তাদের এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়াও বদলাবে। বর্তমানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৫ স্তরের সংশ্লিষ্টতায় এমপিওভুক্ত হন একজন শিক্ষক। এর পরিবর্তে এনটিএসসি প্রার্থী নিয়োগের সুপারিশ করার পর সংশ্লিষ্টরা মাউশিতে যোগদানপত্র দাখিল করবেন। এরপর তাদের এমপিওভুক্তির নির্দেশনা জারি করা হবে। কোনো ঘাটে যেতে হবে না।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মাউশি মহাপরিচালক অধ্যাপক নেহাল আহমেদ বলেন, শিক্ষকদের এমপিওভুক্তিতে ঘাটে ঘাটে যাওয়া এমনকি ঘুস লেনদেনের অভিযোগও আমরা পেয়ে থাকি। অনেক সময় ঘুসদাতাও প্রমাণ দিতে চান না। ফলে অসাধু ব্যক্তিরা শাস্তির বাইরে থাকে। এখন ঘুসমুক্ত এমপিওভুক্তি নিশ্চিতে সরাসরি কাজ করার চিন্তা করছি। এর অংশ হিসাবে এনটিআরসিএতে (প্রস্তাবিত এনটিএসসি) মৌখিক পরীক্ষাকালেই শিক্ষকের সনদপত্র যাচাই করা হবে। আর নিয়োগ তো এনটিআরসিএ সরাসরি দিয়ে দিচ্ছে। ফলে সনদপত্র যাচাইয়ের কাজ যেহেতু থাকছে না, তাই সরাসরি মাউশি থেকে এমপিও দিতে আর সমস্যা নেই।
এদিকে সংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষক নিয়োগের ফিটলিস্ট তৈরিতে এনটিআরসিএ শুরুর দিকে শুধু লিখিত পরীক্ষা নিত। পরে মৌখিক পরীক্ষা যুক্ত করা হয়। এ পর্যন্ত নেওয়া সব নিবন্ধন পরীক্ষার ভিত্তিতে প্রার্থীদের একটি জাতীয় মেধাতালিকা আছে। বিধান অনুযায়ী, গণবিজ্ঞপ্তি জারির পর সারা দেশের স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি প্রতিষ্ঠান শিক্ষকের শূন্যপদের চাহিদা দিচ্ছে সংস্থাটিকে। জাতীয় তালিকা থেকে প্রার্থীর পছন্দ আর শূন্যপদের বিপরীতে মেধাক্রম থেকে স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে প্রার্থী নির্বাচন করে পদায়নের সুপারিশ করে আসছে। কিন্তু রাজধানীর আইডিয়াল, আর ভিকারুননিসার মতো কিছু প্রতিষ্ঠান সৃষ্টপদে নিয়োগসহ নানান ফাঁকফোকর বের করে এনটিআরসিএকে পাশ কাটিয়ে শিক্ষক নিয়োগ করে আসছে। নিয়োগে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার স্বার্থে প্রস্তাবিত আইনে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধের দিক অন্তর্ভুক্ত করার মতামত দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগ কমিশনের আইনের খসড়া দ্রুত পাঠাতে এনটিআরসিএকে তাগিদ দেওয়া হয়েছে। আইনটি পাওয়ার পর তা আইন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর সচিব কমিটিতে পাঠাতে হবে। এরপর মন্ত্রিসভায় তোলা হবে। সেখানে অনুমোদন হলে তা জাতীয় সংসদে অনুমোদনের জন্য পাঠাতে হবে। এনটিএসসির জন্য জনবল নিয়োগে পদ সৃজন ও নিয়োগসংক্রান্ত দিক থাকায় এসব প্রক্রিয়া লাগবে।
এ প্রসঙ্গে কথা বলতে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান এনামুল কাদের খানের সঙ্গে সরাসরি ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। সদস্য (অর্থ ও প্রশাসন) এএসএম জাকির হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করলে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে কথা বলার পরামর্শ দেন।
(আহৃত)