আমাদের সবার, নিজেদের ভিতরে যে আঁধার আছে, অন্ধকার আছে, যে সংকীর্ণতা আছে, যে ক্ষুদ্রতা আছে, যে পরশ্রীকাতরতা আছে, যে হিংসা-বিদ্বেষ আছে, যে সাম্প্রদায়িকতা আছে সেগুলো দূর করে নিজেকে আলোকিত করলেই সমাজ ও দেশ আলোকিত হবে। এই আলোকিত করার দায়িত্বই হচ্ছে সাংবাদিকদের কাজ।
পিরোজপুরে দুটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকা পিরোজপুরের কথা ও তথ্য দর্পণের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার রাতে সম্মানিত অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, পিরোজপুর গোপাল কৃষ্ণ টাউন ক্লাব মাঠের স্বাধীনতা মঞ্চে তথ্য দর্পণের সম্পাদক শফিউল হক মিঠুর সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক চৌধুরী রওশন ইসলাম, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোল্লা আজাদ হোসেন ও যুগান্তরের বিশেষ সংবাদদাতা শেখ মামুনুর রশীদ বক্তব্য রাখেন।
পরে গুণীজনকে সম্মাননা প্রদান করা হয়। তারা হলেন-মুক্তিযুদ্ধে এমএ রব্বানী ফিরোজ, সাংবাদিকতায় যুগান্তরের বিশেষ সংবাদদাতা শেখ মামুনুর রশিদ ও প্রয়াত সংগীত শিল্পী খালিদ হাসান মিলু। পরে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে প্রতীক হাসানের সংগীত পরিবেশিত হয়।
আলোচনা সভায় অতিথি হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারি দিল্লি থেকে ঢাকায় যাবার প্রাক্কালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেছিলেন, আমার আজকের এই যাত্রা ‘অন্ধকার থেকে আলোর পথের যাত্রা’।
প্রধানমন্ত্রীর সাবেক তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী বলেন, পিরোজপুর জেলা আগের তুলনায় এখন অনেক শান্ত, অতীতের সেই অন্ধকার থেকে বেরিয়ে এসে এ জেলা আজ অসাম্প্রদায়িক পক্ষে, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এবং দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে পক্ষে এখানকার জনগণ অতীতের তুলনায় আরও বেশি ঐক্যবদ্ধ।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ আজ এগিয়ে যাচ্ছে সেই উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখার লক্ষে বিরোধী শক্তি যারা আছে তাদেরকে প্রতিরোধ ও অবদমিত করার জন্য প্রশংসিত হচ্ছে। সৌভাগ্যের বিষয় বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশের হাল ধরেছে। এই পথহারা বাংলাদেশকে আবার নতুন করে মুক্তিযুদ্ধের রেল লাইনে বিচ্যুত যে ইঞ্জিনটি আবার সুদৃঢ়ভাবে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, আমরা আজ তার কাছে কৃতজ্ঞ।
দৈনিক যুগান্তরের সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি সাইফুল আলম স্থানীয় পিরোজপুরের কথা ও তথ্য দর্পণ দুটি পত্রিকার সাফল্য কামনা করে বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় তিন হাজার পত্রিকা আছে, ৩৫টির মতো টেলিভিশন চ্যানেল চলছে আর কিছু প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। অনেকগুলোর লাইসেন্স তাদের হাতে আছে, অনলাইন কত আছে আমরা জানি না। এফএম ব্যান্ডের রেডিও অসংখ্য, কমিউনিটি রেডিও রয়েছে। কিন্তু এইযে গণমাধ্যমের বিস্তৃতি ঘটেছে, গণমাধ্যম আসলে কতটা শক্তিশালী হয়েছে? গণমাধ্যমের ওপর মানুষের যে বিশ্বাস ও আস্থার জায়গাটা কতটা অর্জন বা ধরে রাখতে পেরেছি। এই হিসেব-নিকেশ করারও আজ সময় এসেছে। বিস্তৃতি ঘটেছে তার মানে এই নয় যে, সাংবাদিকরা ভাল আছে, তার মানে এই নয় যে গণমাধ্যম অনেক দূরে এগিয়ে গেছে।
তিনি আরও বলেন, গণমাধ্যম হিসেবে আমাদের জাতি ও জনগণের ওপর একটি দায়বদ্ধ আছে, পাঠকের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধ রয়েছে। সেই দায়বদ্ধতা হল-বিশ্বাস ও আস্থা। সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ থাকার কোনো সুযোগ নেই।
তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, আমি কী সত্য ও মিথ্যার মধ্যে নিরপেক্ষ হবো, আমি কী দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতির মধ্যে নিরপেক্ষ হবো, সুযোগ নেই আমাকে একটি পক্ষ নিতেই হবে। দেশ-মাটি ও মানুষের কথা চিন্তা করে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা চিন্তা করলে অসাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে আপোষ করার কোনো সুযোগ নেই।
সাইফুল আলম বলেন, ‘৭১ থেকে ‘৭৫ এবং ৯৬ পর্যন্ত দেশের ইতিহাস পাল্টে দেওয়ার প্রক্রিয়ায় দেশ চলছিল। সেই প্রক্রিয়ার সঙ্গে কী আমরা আপোষ করব? আজকের দিনে আমরা অনেক বেশি সুসংহত, অনেক বেশি শানিত, অনেক বেশি বোধ সম্পন্ন। স্বাধীনতার আগে, যুদ্ধের সময় এবং যুদ্ধ পরবর্তী এমনকি এখনো ষড়যন্ত্র চলছে। আর সেসব ষড়যন্ত্রকারীরা চিহ্নিত ছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ও খন্দকার মুশতাক চিহ্নিত ছিল।
ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, আমরা এখন বদলে যাওয়া এক বাংলাদেশের নাগরিক, আজ বাংলাদেশের ৫০ বছর পূর্তি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এ দেশকে জন্ম দিয়েছিলেন। পিরোজপুরে নাম করা রাজাকার আছে, সে যায়গাটিতে মুক্তিযোদ্ধার যায়গাটা আলাদা ও সম্মানের।
তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ আসলে এই দক্ষিণাঞ্চল থেকে যেভাবে শুরু হয়, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা শুরু হলেও এই দক্ষিণবঙ্গ থেকেই শুরু হয়।
পরে সম্মানিত অতিথিবৃন্দকে ক্রেস্ট দিয়ে সম্মান জানানো হয়।
(আহৃত)