ফরিদপুরে ঢেউখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের শিশুপুত্র আল রাফসান (৯) হত্যার নেপথ্যে অন্য কোনো ষড়যন্ত্র রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য পুলিশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ফরিদপুর-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ।
বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে নিহত রাফসানের বাড়িতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় এ অনুরোধ করেন তিনি। এ সময় রাফসানের বাবা ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান ও তাঁর ভাই মো. রায়হান উপস্থিত ছিলেন।
কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, ‘ঢেউখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমানকে হত্যা করতে এসেই তাঁর শিশুপুত্র রাফসানকে হত্যা করা হয়েছে। আমি ফরিদপুরের পুলিশ সুপারকে বিষয়টি তদন্ত করে দেখতে অনুরোধ জানিয়েছি।’
ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমানের দুই ছেলের মধ্যে রাফসান ছিল ছোট। সে সদরপুর মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল। বৃহস্পতিবার দুপুরে ময়নাতদন্ত শেষে রাফসানের লাশ সদরপুর উপজেলা সদরের পোস্ট অফিসসংলগ্ন বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এ সময় সেখানে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। বিকেলে সদরপুর স্টেডিয়াম মাঠে জানাজা শেষে শিশুটির লাশ গ্রামের বাড়ি ঢেউখালী ইউনিয়নের চর ডোবাইল গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।
রাফসানের জানাজায় জাফরউল্যাহ ছাড়াও ফরিদপুর-৪ (ভাঙ্গা, সদরপুর, চরভদ্রাসন) আসনের সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী ওরফে নিক্সন, জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, সদরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কাজী শফিকুর রহমান, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সুবল চন্দ্র সাহা প্রমুখ অংশ নেন।
জানাজা শেষে সেখানে উপস্থিত স্থানীয় সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী বলেন, এ ঘটনার নেপথ্যে অন্য কিছু রয়েছে কি না, সেটি অবশ্যই খতিয়ে দেখা উচিত। এ হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।
কাজী জাফরউল্যাহ জানাজার আগে রাফসানের বাড়িতে যান এবং জানাজা শেষে আরও ১৫ থেকে ২০ মিনিট স্টেডিয়াম মাঠে অবস্থান করেন। অপর দিকে সংসদ সদস্য মজিবুর রহমান চৌধুরী সদরপুরে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে ওঠেন। পরে জানাজার আগে তিনি পুলিশসহ জানাজাস্থলে আসেন এবং জানাজা শেষ করে চলে যান।
গতকাল বুধবার বিকেলে সদরপুর উপজেলা সদরের পোস্ট অফিসের পাশে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে ঢুকে শিশু রাফসানকে কুপিয়ে হত্যা করেন এরশাদ মোল্লা নামের এক ব্যক্তি। এ সময় রাফসানকে বাঁচাতে এসে হামলাকারীর ধারালো অস্ত্রের আঘাতে আহত হন রাফসানের মা দিলজাহান বেগম। পরে সন্ধ্যায় এরশাদ মোল্লা নিজেও আটরশি এলাকার একটি মুঠোফোন কোম্পানির টাওয়ার থেকে লাফিয়ে পড়ে মারা যান। এরশাদ ঢেউখালী ইউনিয়নের ঢেউখালী গ্রামের বাসিন্দা মৃত সানু মোল্লার ছেলে।
এদিকে এরশাদের ভাই এনায়েত মোল্লাকে বুধবার সন্ধ্যায় পাশের ভাঙ্গা উপজেলার নাসিরাবাদ ইউনিয়নে একটি বাজারে পিটুনি দিয়ে পুলিশে দেন এলাকাবাসী। আহত এনায়েত বর্তমানে পুলিশ পাহারায় ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন। এরপর রাতে ঢেউখালী গ্রামে এরশাদ মোল্লার একটি ঘর প্রথমে ভাঙচুর করেন ও পরে আগুন ধরিয়ে দেন বিক্ষুব্ধ জনতা।
ইউপি চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান ঢেউখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এ বছর ৫ জানুয়ারি ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন তিনি। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি বিবাহবিচ্ছেদ–সংক্রান্ত একটি সালিসের সিদ্ধান্ত নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের ওপর ক্ষুব্ধ ছিলেন এরশাদ মোল্লা। এর জের ধরে এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারেন বলে তাঁদের ধারণা।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভাঙ্গা সার্কেল) ফাহিমা কাদের চৌধুরী বলেন, এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত সদরপুর থানায় কোনো মামলা হয়নি।
(আহৃত)