গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য চুরি করে প্রতারক চক্রের কাছে সরবরাহ করতেন একটি বেসরকারি ব্যাংকের এক কর্মকর্তা। ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড শাখার কর্মকর্তা পরিচয়ে চক্রের এক সদস্য গ্রাহককে ফোন করে নিরাপত্তা বাড়ানোর কথা বলে গ্রাহকের মুঠোফোনে ওটিপি নম্বর পাঠাতেন। পরে কৌশলে ওই নম্বর জেনে ক্রেডিট কার্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে গ্রাহকের টাকা নিজেদের নগদ ও বিকাশে সরিয়ে ফেলতেন তাঁরা।পুলিশ সূত্র জানায়, এভাবে তিন মাসে দুই শতাধিক গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ড থেকে অর্থ সরিয়ে নিয়েছে একটি সংঘবদ্ধ চক্র। এ ঘটনায় গত বুধবার রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে বেসরকারি সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের সহকারী সম্পর্ক কর্মকর্তা কাবুল হাসান রশিদসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অন্যজনের নাম হাসান খান। সম্পর্কে দুজন মামা–ভাগনে। এই চক্রে রাব্বি নামের আরেক সদস্য রয়েছেন। তাঁকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তিনজনের বাড়িই ফরিদপুরের মধুখালী।
গ্রাহকের তথ্য চুরির অভিযোগে গ্রেপ্তার ব্যাংক কর্মকর্তা কাবুল হাসানকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার ব্যাংকের জনসংযোগ বিভাগ থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এ অবস্থায় ব্যাংকের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন গ্রাহকেরা। তাঁরা বলেন, ব্যাংকের নম্বর থেকে ফোন করে কোনো তথ্য চাইলে সাধারণত গ্রাহকেরা সন্দেহ করেন না। সুযোগটি নিতেন চক্রের সদস্যরা। গত দুই দিনে প্রতারণার শিকার অন্তত ১০ জন গ্রাহক ডিবির কাছে অভিযোগ করেন। তাঁদের মধ্যে আবু বক্কর ছিদ্দিক নামের এক গ্রাহক বাদী হয়ে বুধবার ডেমরা থানায় মামলা করেন। গতকাল তিনি কাছে অভিযোগ করেন, ৩ মাস আগে তাঁর কার্ড থেকে ১০ হাজার টাকা সরিয়ে নেন চক্রের সদস্যরা। তিনি ব্যাংকে মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ করেও কোনো সমাধান পাননি।
ডিবি সূত্র জানায়, ব্যাংকের কর্মকর্তা কাবুল হাসান গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য, যেমন নাম, মুঠোফোন নম্বর, ঠিকানা, কার্ডের নম্বর, মেয়াদ শেষের তারিখ চক্রের সদস্য হাসান খানকে দিতেন। তিনি এসব তথ্য পলাতক রাব্বির কাছে সরবরাহ করতেন। রাব্বি ব্যাংক কর্মকর্তা পরিচয়ে ফোন করে কার্ডে থাকা তথ্য গ্রাহককে বলতেন। গ্রাহকের কার্ডের সমস্যার সমাধানে হাসান নামের আরেক কর্মকর্তা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে তিনি ফোন রেখে দিতেন। এরপর হাসান গ্রাহকের মুঠোফোনে ওটিপি পাঠিয়ে ক্রেডিট কার্ডের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিজেদের নগদ ও বিকাশে টাকা সরিয়ে নিতেন। গ্রাহকের কার্ড থেকে প্রতিবার ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা সরাতেন তাঁরা।
ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মহিদুল ইসলাম গতকাল বলেন, ব্যাংক কর্মকর্তার সহায়তায় তিন মাস ধরে চক্রের সদস্যরা গ্রাহকের কার্ড থেকে টাকা সরিয়ে আসছিলেন। মুগদা এলাকায় দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া করে অফিস বানিয়ে এই প্রতারণা করতেন তাঁরা। সেখান থেকে ব্যাংক কর্মকর্তা সেজে গ্রাহকদের ফোন করতেন তাঁরা।
ডিবি সূত্র জানায়, প্রতি সপ্তাহে একাধিবার ব্যাংক থেকে গ্রাহকের তথ্য চুরি করে প্রতারক চক্রের সদস্যদের দিতেন কাবুল। ব্যাংকের প্রতিটি শিটে ২৩ থেকে ২৪ জন গ্রাহকের ক্রেডিট কার্ডের তথ্য থাকত। প্রতিটি শিটের জন্য চক্রের সদস্যরা কাবুলকে দিতেন আট হাজার টাকা। গ্রাহকের কার্ড থেকে অর্থ সরানোর পর দুই ভাগ হতো। এর মধ্যে রাব্বি নিতেন ৩০ শতাংশ। বাকি ৭০ শতাংশ টাকা নিতেন হাসান খান।
(আহৃত)