ভারতে গ্রেফতার পিকে হালদারকে রিমান্ডে নিয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ভারতের অর্থসংক্রান্ত গোয়েন্দা সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। বিশেষ করে পিকে ও তার ভাই প্রীতিশ কুমার হালদারকে আলাদাভাবে জেরা করে পাচারের ‘অর্থ বিনিয়োগ’ নিয়ে নিশ্চিত তথ্য জানতে চাইছেন তদন্তকারীরা।
দফায় দফায় জিজ্ঞাসাবাদে মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন পিকে। সময় পার করছেন কান্নাকাটি করে। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের কাছে আসামিদের হস্তান্তর করা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।
এদিকে ইডির তদন্ত শেষ হলেই পিকে হালদারকে বাংলাদেশের হাতে তুলে দেওয়া হবে। ভারতীয় অর্থসংক্রান্ত তদন্তকারী সংস্থা ‘এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট’ (ইডি) পশ্চিববঙ্গ থেকে পিকে হালদারকে গ্রেফতারের বিষয়টি রোববার বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে।
ভারত-বাংলাদেশ প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানো হবে। ঢাকার নিরাপত্তা সংস্থার দেওয়া তথ্যের সূত্র ধরেই পশ্চিমবঙ্গের অশোকনগর থেকে ব্যাংক জালিয়াতির পান্ডা পিকে হালদারসহ ছয়জনকে গ্রেফতার করে ইডি।
তবে রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক সেমিনারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, পিকে হালদারকে গ্রেফতারের বিষয়ে ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কিছু জানায়নি। এ ব্যাপারে জানালেই তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পিকে হালদার বাংলাদেশের ওয়ান্টেড ব্যক্তি। অনেক আগেই ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে বাংলাদেশ সরকার।
বাংলাদেশ থেকে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা পাচারে জড়িত পিকে হালদারসহ পাঁচজনকে শনিবার তিন দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। তাদের সঙ্গে গ্রেফতার এক নারীকে পাঠানো হয়েছে কারাগারে। শনিবার রাতে বাউনশাল আদালতে অনলাইনে রিমান্ডের আবেদন করে ইডি।
এ আবেদন মঞ্জুর করেন সিটি সিভিল কোর্ট। রোববার সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটি থাকায় শারীরিকভাবে কোনো আসামিকে ভারতের আদালতে হাজির করা হয়নি।
আগামীকাল পর্যন্ত তাদের সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট অফিসে (সিজিএ) রাখা হবে। সেখানে তাদের জেরা করছেন গোয়েন্দারা। মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের কাছে আসামিদের হস্তান্তর করা হতে পারে।
এদিকে রিমান্ডে তাদের জেরা করে পাচারের টাকা কোথায় কোথায় বিনিয়োগ হয়েছে তার সন্ধান পেতে চাইছে ইডি। তারা প্রাথমিকভাবে তথ্য পেয়েছে পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও ভারতের অন্য রাজ্যেও এই পাচার হয়ে আসা বাংলাদেশি অর্থ বিনিয়োগ হয়েছে।
এই অর্থ দিয়ে সম্পত্তি কেনা হয়েছে বলে গোয়েন্দাদের কাছে খবর। তবে সংস্থাটি এখন পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রমাণ হাতে পায়নি। কাজেই নতুন করে অভিযানে নামতে পারছে না। কলকাতার ব্যাঙ্কশাল কোর্টের নির্দেশে শনিবারই তিন দিনের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়ে পিকে হালদার ও তার ভাইসহ অন্যদের রোববার দফায় দফায় জেরা করেছে ইডি।
সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সের ছয়তলায় একটি ঘরে রাতভর জেরা হয়েছে পিকে হালদারের। শুধু তাই নয়, দু’জনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য যাচাই করতে প্রয়োজনে ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়েও জেরা করা হবে বলে ইডির শীর্ষ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
মূলত পিকে হালদার কীভাবে পাচার হওয়া অর্থ পশ্চিমবঙ্গে এনে সম্পত্তির পাহাড় গড়েছেন তার খোঁজ পেতে চাইছে ইডির গোয়েন্দারা। বাংলাদেশ থেকে অর্থপাচার করে তিনি অন্য কোনো দেশে সেই অর্থ পাঠিয়েছেন কিনা, পশ্চিমবঙ্গের কোথায় কোথায় তার আরও সম্পত্তি আছে, কারখানা আছে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে ইডি।
গ্রেফতারকৃতরা ভারতেও নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়েছিল বলে প্রমাণ পেয়েছে গোয়েন্দা সংস্থাটি। পিকে হালদার ও তার ভাইরা সেখানে নাম পরিচয় গোপন করে ওই দেশের নাগরিকত্ব নিয়েছেন। সংগ্রহ করেছেন, আধারসহ বিভিন্ন কার্ডও। এসব অন্যায় কাজে জড়িত থাকার দায়ে এখন ভারতেই তাদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং, পাসপোর্ট আইনসহ একাধিক আইনে মামলা শুরু হয়েছে।
কীভাবে একজন বাংলাদেশি ভারতে এসেই এমন প্রামাণ্য নথি বানিয়ে ফেলল তা নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে আলোচনার ঝড় বইছে। বিষয়টি নিয়ে অশোকনগরের বিধায়ক তথা পশ্চিমবঙ্গের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক জানিয়েছেন, আইন আইনের পথে চলবে।
এখানে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যেই এ কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, তাকে গ্রেফতার করা হবে। যদিও প্রশান্ত কুমার হালদার বা তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে ভারতীয় আধার কার্ড, প্যান কার্ড বা আধার কার্ড তৈরিতে সাহায্য করা নিয়ে যে অভিযোগ উঠেছে তা প্রত্যাখ্যান করেন বনমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি কোনো মন্তব্য করব না। আগে তথ্য হাতে পাই তারপর মন্তব্য করব।
(আহৃত)