দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ভোজ্যতেলের কৃত্রিম সংকট চলছে। উপজেলা পর্যায় ও গ্রামাঞ্চলে খুচরা দোকানে পাওয়া যাচ্ছে না পর্যাপ্ত সয়াবিন তেল। এমন সংকটে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী ‘অবৈধভাবে’ তেল মজুত করে বাড়তি দামে সেগুলো বিক্রি করছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে দোকান ও গুদাম থেকে উদ্ধার করা হচ্ছে তেল। চট্টগ্রামে পৃথক অভিযানে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার লিটার তেল উদ্ধার করেছে কর্তৃপক্ষ। ফটিকছড়িতে আকতার হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ২ হাজার ৩২৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছে স্থানীয় প্রশাসন। অন্যদিকে নগরীর কর্ণফুলী মার্কেটের এক ব্যবসায়ীর গুদামে লুকিয়ে রাখা ১ হাজার ৫০ লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধার করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। দুই ব্যবসায়ীকেই মজুদদারির অভিযোগে ৪০ হাজার করে ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ফটিকছড়ি থেকে উদ্ধার করা ভোজ্যতেল সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির নির্দেশ দিয়েছে প্রশাসন। এছাড়া ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে বিভিন্ন গুদামে সয়াবিন তৈল মজুত করায় দুই ডিলারকে জরিমানা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম : ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে ভোজ্যতেলের হাহাকারের নেপথ্যের কারণ প্রধানত দুটি। প্রথমত, খুচরা পর্যায়ে ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা আদায়ের আশায় নিত্যপণ্যটি মজুত করছেন। দ্বিতীয়ত, প্রশাসনের তদারকির কারণে বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। নতুন দাম কার্যকর করার পরও নিত্যপ্রয়োজনীয় এই পণ্যটি কিনতে ক্রেতা এক বাজার থেকে অন্য বাজারে ছুটছেন। এমন পরিস্থিতিতে সরবরাহ নেই বলে খুচরা ও পাইকারি বিক্রেতারা আমদানিকারকদের ওপর দোষ চাপাচ্ছেন। তবে আমদানিকারকরা বলছেন, দাম বাড়লেও ভোজ্যতেলের বাজার স্বাভাবিক রয়েছে। ভোজ্যতেলের সংকট নেই। খুচরা বিক্রেতা অতিরিক্ত মুনাফার আশায় ভোজ্যতেল মজুত করছে। দাম আরও বাড়বে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মজুত করেছেন। আগের দামে কিনলেও এখন ক্রেতাদের জিম্মি করে বিক্রি করছেন বাড়তি দরে। অনেক ব্যবসায়ী দোকানের পেছনে আবার কেউ দোকানের ভেতরে বস্তা ও কার্টনে তেল লুকিয়ে রেখেছেন। এমন তথ্যের সত্যতা মিলেছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের বাজার তদারকির সময়। জানা গেছে, শনিবার রাত ১১টার দিকে ফটিকছড়ি উপজেলার বাগানবাজারের দক্ষিণ গজারিয়া গ্রামের ব্যবসায়ী আকতারের বাড়িতে অভিযান চালান সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এসএম আলমগীর। অভিযানে ওই ব্যবসায়ীর বাড়ির একটি কক্ষ থেকে ২ হাজার ৩২৮ লিটার সয়াবিন তেল উদ্ধার করা হয়। অবৈধভাবে পণ্য মজুতের অভিযোগে অত্যাবশ্যকীয় পণ্য নিয়ন্ত্রণ আইন-১৯৫৬ এর বিভিন্ন ধারায় ওই ব্যবসায়ীকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাব্বির আহমদ সানি। একইভাবে নগরীর কর্ণফুলী মার্কেটে একটি মুদির দোকানের গুদামে অভিযান চালিয়ে এক হাজার ৫০ লিটার তেল উদ্ধার করা হয়। ওই মুদির দোকানির কাছে তেল মজুত থাকলেও ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছিলেন না। রোববার বিকালে ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের অভিযানে মজুত করা এসব তেল বের হয়ে আসে। পরে ‘অবৈধভাবে’ গুদামে তেল ও মেয়াদোত্তীর্ণ ঘি রাখার দায়ে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় ওই ব্যবসায়ীকে। ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর চট্টগ্রাম বিভাগীয় কার্যালয় সূত্র জানায়, ওই দোকানে মেয়াদোত্তীর্ণ ঘি পাওয়া গেছে। পাশাপাশি দোকানমালিক বাজারে তেলের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করার জন্য অবৈধভাবে মজুত করেছেন। এ দুই অপরাধে তাকে জরিমানা করা হয়েছে। আর তেলগুলো আশপাশের দোকানদারদের কাছে গায়ের দামে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ শুক্রবার বিকালে ১২ হাজার মেট্রিক টন পাম তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে ‘এমটি সুমাত্রা’ পাম নামে একটি জাহাজ। এ নিয়ে গত এক সপ্তাহে ৫৯ হাজার মেট্রিক টন তেল নিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরে মোট ৫টি জাহাজ এসেছে।
চরভদ্রাসন (ফরিদপুর) : উপজেলা নির্বাহী অফিসার তানজিলা কবির ত্রপা গত শনিবার রাত ৮টায় সদর বাজারের বিভিন্ন ভৌজ্যতেল গুদামে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেছেন। উপজেলার বিভিন্ন গুদামে সয়াবিন তেল জমা রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করার দায়ে দুই ডিলার থেকে নগদ ৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। এর মধ্যে উপজেলার রূপচাঁদা সয়াবিন তেল ডিলার রহমতউল্লাহ দেওয়ানকে এক হাজার টাকা এবং তীর সয়াবিন তেল ডিলার ইউসুপ দেওয়ানকে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এছাড়া বাজারের অন্য ডিলারদের গুদাম তল্লাশি করে মজুত করা ভোজ্যতেল তাৎক্ষণিক বাজারে সরবরাহের ব্যবস্থা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
নাগেশ্বরী (কুড়িগ্রাম) : নাগেশ্বরীতে ভোজ্যতেল নিয়ে চলছে তেলেসমাতি। বর্ধিত দামের এ পণ্য এখনো বাজারে না এলেও আগের দামে কিনে মজুত করে রাখাগুলোই ব্যবসায়ীরা বিক্রি করছে বেশি দরে। গ্রামগঞ্জের দোকানে প্রতি লিটার তেল বিক্রি হচ্ছে ২১০-২০ টাকায়। সরবরাহ সংকটকেই তারা অজুহাত হিসাবে ক্রেতাদের সামনে উপস্থাপন করছেন। প্রতিবাদ করলে তাদের কাছে তেল বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা।
আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : উপজেলার বিভিন্ন বাজারে মিলছে না সয়াবিন তেল। এ ব্যাপারে উপজেলা প্রশাসনের নেই কোনো তদারকি। তেল সংকটের জন্য খুচরা ব্যবসায়ীরা এজন্য ডিলারদেরই দায়ী করছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন জানান, শিগগিরই বাজার মনিটরিং করা হবে। যারা সরকারের নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দামে তেল বিক্রিসহ মজুত করছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
(আহৃত)