ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলায় প্রতিকেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭০০ টাকা দরে। এক কেজি খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকায়। আবার ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিনভিত্তিক মজুরি দিতে হয় দিনমজুরদের। সঙ্গে তিন বেলা খাবার। তাতে প্রতিটি দিনমজুরের পেছনে প্রতিদিন খরচ অন্তত ৮০০ টাকা। আর বর্তমানে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ ও ৮০০ টাকায়। সে হিসাবে এক কেজি খাসির মাংস অথবা এক কেজি গরুর মাংস কিংবা একজন দিনমজুরের জন্য এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে ভালো ফলন পেলেও ন্যায্যদাম পাচ্ছেন না ফরিদপুরের পেঁয়াজ চাষিরা। পরিশ্রমের ফসল পেঁয়াজ বিক্রি করে খরচের টাকাই উঠছে না তাদের।
জেলার নগরকান্দা ও সালথার মাঝারদিয়া বাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় পেঁয়াজের উৎপাদন হয়েছে। প্রতি বিঘায় পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে গড়ে ৬৫ মণ করে। প্রতি মণ পেঁয়াজ উৎপাদনে তাদের খরচ হয়েছে এক হাজার টাকা। আর বর্তমানে বিক্রি করতে হচ্ছে ৬৫০ থেকে ৭০০ ও ৮০০ টাকায়।
কৃষকরা বলছেন, মৌসুমে পেঁয়াজ সংরক্ষণে জায়গার অভাব ও শ্রমিকদের পাওনা মেটাতে তাৎক্ষণিক কম দামে তাদের পেঁয়াজ বিক্রি করে ফেলতে হয়। পাশাপাশি পরবর্তী ফসল পাটের জন্য জমি প্রস্তুত করা, বীজ কেনা, সেচ ও শ্রমিকের খরচ জোগাতে হয় পেঁয়াজ বেচার টাকা দিয়েই। এ কারণে মৌসুমে পেঁয়াজের দাম কম থাকার ফলে তারা লাভবান হতে পারেন না। পরে দাম বাড়লেও এর সুফল পায় ফড়িয়া ও মধ্যস্বত্বভোগীরা।
বোয়ালমারী উপজেলার সুতালীয়া গ্রামের পেঁয়াজচাষি সুবীর কুমার বিশ্বাস বলেন, আমার সাত বিঘা জমির পেঁয়াজ উৎপাদনে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা। পেঁয়াজ রোপণের পর থেকে শুরু করে সার, সেচ, আগাছা নিড়ানো ও সর্বশেষ পেঁয়াজ বাড়িতে আনতে দিনমজুরের ওপরই নির্ভরশীল। ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দিনভিত্তিক মজুরি দিতে হয়েছে। সব মিলিয়ে বিঘাপ্রতি ১২ থেকে ১৩ হাজার টাকার বেশি ক্ষতি হচ্ছে। আমাদের এলাকায় বছরে দুটি ফসল হয়, পেঁয়াজ ও পাট। পেঁয়াজ আবাদে যদি লাভ না পাই, তাহলে পাট চাষের টাকা আসবে কোথা থেকে কিংবা আমরা খাবই বা কী।
ফরিদপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলার নয়টি উপজেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয় সালথা উপজেলায়। এর পর নগরকান্দা উপজেলায়। বিশেষ করে সালথা উপজেলার কৃষকদের প্রধান অর্থকরী ফসল এই পেঁয়াজ। এই মৌসুমের উৎপাদিত পেঁয়াজই এ অঞ্চলের মানুষের সারা বছরের জীবিকার জোগান দেয়। জেলায় এ বছর মোট ৪০ হাজার ৭৯ হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
বোয়ালমারী উপজেলার সহস্রাইল হাটে পেঁয়াজ বিক্রি করতে আসা কালি কুমার বালা ও সালথা উপজেলার বিধান মন্ডল বলেন, এক সময় প্রতিমণ পেঁয়াজ ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা দরে বিক্রি করেছি। তখন প্রতি হাটেই পেঁয়াজ বেচে খাসির মাংস কিনে আনন্দে বাড়ি ফেরা যেত। তখন পেঁয়াজ বিক্রি করে অনায়সেই এক কেজি মাংস কেনা যেত। অথচ এখন এক কেজি মাংস কিনতে এক মণ পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
মধুখালী উপজেলার পেঁয়াজচাষি গৌতম রায় বলেন, অবস্থার পরিবর্তন না হলে কৃষক সর্বস্বান্ত হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ফরিদপুরের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক হজরত আলী বলেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফরিদপুরে পেঁয়াজের উৎপাদন বেশ ভালো হয়েছে। জেলায় পেঁয়াজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৩৬০ হেক্টর।
তিনি আরও বলেন, বাজার দরের বিষয়টি আমাদের হাতে নেই। যার কারণে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। তারপরও বলতে হয়, বর্তমানে পেঁয়াজের যে দাম তাতে কৃষকদেরই বাঁচা কষ্ট ।
(আহৃত)