আগে যাঁদের ছাপরা ছিল, সেখানে আজ পাকা দালান। তিন বেলা যাঁদের ভাত জুটত না, সেই সব লোক বাজারে যান দু–তিন হাজার টাকা পকেটে নিয়ে।
চাকরি, ব্যবসা বা অন্য কোনো পরিশ্রমের আয়ে এমন পরিবর্তন হয়নি। মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অল্প সময়ের ব্যবধানেই এ অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন তাঁরা। এ ডিজিটাল প্রতারকেরা স্থানীয়ভাবে ‘টোপ পার্টি’র সদস্য হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন।
ঢাকা মহানগরের একটি ডিজিটাল প্রতারণা মামলা তদন্ত করতে গিয়ে ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পশ্চিম পাড়া গ্রামে ৬২ জন সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের সদস্যের খোঁজ পেয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। তবে ফরিদপুর জেলা পুলিশের তদন্ত বলছে, ডুমাইনের পশ্চিম পাড়া গ্রামে প্রতারক চক্রের সদস্যসংখ্যা ৭৭। পাশের ডুমাইন গ্রাম মিলে এ সংখ্যা ৯৫ দাঁড়িয়েছে। আশপাশের গ্রাম ও এলাকাতেও ছড়িয়ে পড়েছেন প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
সিআইডির তদন্ত প্রতিবেদন বলেছে, ডুমাইনের পশ্চিম পাড়ার শাহারুপ শেখের বিরুদ্ধে ডিজিটাল প্রতারণার অভিযোগে মধুখালী থানায় দুটি মামলা থাকার তথ্য মিলেছে। এ ছাড়া ময়নাল শেখ, রতন শেখ, ওবায়দুল কাজী, সাগর কাজী, তপন শেখ, মেহেদী হাসান, মিঠুন শেখ, মিলন শেখ, আশরাফুল শেখ, ইলিয়াস শেখ, রিপন শেখ ও আবদুল কাদের শেখের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। মামলাগুলো সব ডিজিটাল প্রতারণার। ২০১৮ সাল থেকে গত মার্চ পর্যন্ত এ মামলাগুলো হয়েছে।ই বছর আগে ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান ‘টোপ পার্টি’র সদস্যদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে একটি সমাবেশ করেন। ওই সমাবেশে টোপ পার্টির ৯৫ জন উপস্থিতও ছিলেন। সেদিন তাঁরা অপরাধের এ পথ থেকে ফিরে আসার শপথ নেন। তবে এলাকাবাসী বলছেন, যাঁরা অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন, তাঁরা স্বাভাবিক জীবনে আসেননি।
পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান বলেন, টোপ পার্টির উৎপত্তি ডুমাইনে হলেও তাঁদের নেটওয়ার্ক সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। মধুখালীর ডুমাইন বর্তমানে একটি অচ্ছুত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত হয়ে পড়েছে। অপরাধীদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে এলাকাবাসীর উদ্যোগ দরকার। পুলিশও সব ধরনের সহায়তা করবে। অবশ্য টোপ পার্টি থেকে ফিরে আসা কয়েকজনের ভাষ্য, এখন অপরাধে জড়িত না থাকলেও ঢালাওভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোনো কোনো সদস্য মামলায় আসামি করে তাঁদের হয়রানি করছেন।
সিআইডি বলেছে, প্রতারক চক্রের সদস্যরা কয়েক বছর ধরে মুঠোফোনে আর্থিক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান বিকাশসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছিলেন। এক বছর আগে রাজধানীর শাহজাহানপুর থানার একটি মামলার তদন্ত করতে গিয়ে মধুখালীর পশ্চিম পাড়া গ্রামের ৬২ জন প্রতারকের পূর্ণাঙ্গ নাম-ঠিকানা বের করেন তাঁরা। গত ২৮ মার্চ তাঁদের বিরুদ্ধে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়। অভিযোগপত্রভুক্ত ১৫ জনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকার প্রমাণ মিলেছে। এ মামলায় আরও ১০ জন সম্পৃক্ত রয়েছেন, যাঁদের বাড়ি ডুমাইনে। তবে পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা না পাওয়ায় তাঁদের অভিযোগপত্রভুক্ত করা হয়নি।
(আহৃত)