ইফতার ও সাহ্রির সুন্নত পালন ও স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রতি যত্নবান থাকতে হয়; যাতে ইবাদতের বিঘ্ন না ঘটে। তারাবিহ নামাজের পর হালকা ঘুম উপকারী। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিদ্রাকে তোমাদের জন্য বিশ্রামস্বরূপ দিয়েছি, রাতকে দিয়েছি আবরণ রূপে।’ (সুরা-৭৮ নাবা, আয়াত: ৯-১০)। এতে তাহাজ্জুদ যথার্থ হয় ও সাহ্রি গ্রহণে সুবিধা হয়। ঘুমের জন্য সাহ্রি যেন ছুটে না যায়; প্রয়োজনে দিনে কিছুক্ষণ ঘুমানো যেতে পারে। এ জন্য জোহরের নামাজের পর কায়লুলা বা হালকা বিশ্রাম সুন্নত ও সহায়ক। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার ওপর তোমার শরীরের হক রয়েছে, তোমার চোখের হক রয়েছে, তোমার ওপর তোমার স্ত্রীরও হক রয়েছে।’ (বুখারি, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ২৭৫-২৭৬, হাদিস: ১,৮৫১)। ইবাদতের অনুকূল আরামদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত সুন্নতি লেবাস পরিধান করুন। হালাল উপার্জনে পবিত্র খাদ্য এবং বৈধ অর্থে সুরুচিসম্পন্ন পোশাক ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশ রমজানের লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক। নিয়মিত যাঁরা ওষুধ সেবন করে থাকেন, তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ওষুধপথ্য গ্রহণের সময়সূচি নির্ধারণ করে নেবেন। যাঁদের শারীরিক ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটি করতে হয়, তাঁদের উপযুক্ত সময় নির্দিষ্ট করে নিতে হবে। যাঁদের শরীর বেশি ভারী, তাঁরা অতিরিক্ত ওজন কমানোর জন্য রমজানের এই সুযোগ গ্রহণ করতে পারেন।
অনেকে সাহ্রি না খেয়েই রোজা পালন করেন; এতে একদিকে তাঁরা সাহ্রির সুন্নতের সওয়াব ও বরকত থেকে বঞ্চিত হন, অপর দিকে এটি স্বাস্থ্যহানিকর। এতে ইবাদত ও আমল সম্পাদনে বিঘ্ন ঘটাতে পারে। অনুরূপ ইফতার গ্রহণে অলসতা করলেও সুন্নতের সওয়াব না পাওয়া এবং ইবাদতে বিঘ্ন ঘটা ও অসুস্থতার কারণ হতে পারে।
রোজা অবস্থায় দিনের বেলায় জরুরি প্রয়োজনে টিকা, ভ্যাকসিন, ইনসুলিন ও ইনজেকশন নেওয়া যাবে। এতে রোজার ক্ষতি হবে না। কারণ, এতে খাদ্য গ্রহণের যে উদ্দেশ্য ক্ষুধা নিবারণ ও শক্তি অর্জন, তা হয় না। রোজা অবস্থায় প্রয়োজনে রক্ত পরীক্ষা করানো যাবে, রক্ত দেওয়া ও নেওয়া যাবে এবং ডায়ালাইসিসও করানো যাবে; এসবে রোজা ভাঙবে না, যদি তিনি রোজা পালনে সক্ষম হন। তবে অপারগ হলে পরে কাজা আদায় করতে পারবেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তবে তোমাদের যারা পীড়িত থাকবে বা ভ্রমণে থাকবে, তারা অন্য সময়ে এর সমপরিমাণ সংখ্যায় রোজা পূর্ণ করবে।’ (সুরা-২ বাকারা, আয়াত: ১৮৪)। এমন কোনো ইনজেকশন নেওয়া যাবে না, যা দ্বারা খাদ্য গ্রহণের প্রধান দুটি উদ্দেশ্য ক্ষুধা নিবারণ ও শক্তি অর্জন হয়; বরং এমন অসুস্থ অবস্থায় রোজা ছেড়ে দেওয়ারও অনুমতি আছে, যা পরে কাজা আদায় করতে পারবে। প্রয়োজনে রোজা অবস্থায় ছোটখাটো অপারেশনও করানো যাবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, ‘নবীজি (সা.) রোজা অবস্থায় শিঙা লাগিয়েছেন।’ (বুখারি, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ২৬০, হাদিস: ১,৮১৫)।বমি হলে রোজা ভাঙবে না। তা খাদ্যবমি হোক বা রক্তবমি। বমির পরিমাণ বেশি হোক বা কম। কারণ, রোজা হলো পানাহার না করার নাম। বমি হলে পানাহার করা হয় না; বরং তার বিপরীত হয়। বমি হওয়ার পর রোজা পালনে সক্ষম হলে তা পূর্ণ করবে; অক্ষম হলে রোজা ছেড়েও দিতে পারবে; এই রোজা পরে কাজা আদায় করতে হবে। কোনো কারণে অজ্ঞান হলে (যাতে সাধারণত রোজার বিপরীত কিছু ঘটে না) রোজা ভঙ্গ হবে না। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া)।
নখ কাটলে, চুল কাটলে বা কাটালে এবং ক্ষৌরকর্ম করলে বা করালে রোজার ক্ষতি হবে না। এর সঙ্গে রোজা ভঙ্গের কোনো সম্পর্ক নেই। মূলত পানাহার ও রতিক্রিয়া দ্বারা রোজা নষ্ট হয়। রোজা অবস্থায় চুল কামানো বা কাটা বা অবাঞ্ছিত পশম ছাঁটা বা ওপড়ানো অথবা অন্য কোনো উপায়ে অপসারণ বা পরিষ্কার করা জায়েজ। তবে ফরজ, ওয়াজিব ও সুন্নতের খেলাপ কোনো কাজ সব সময়ই নিষেধ। (ফাতাওয়ায়ে শামি)। রোজার কথা ভুলে গিয়ে পানাহার করলে রোজা ভাঙবে না। স্বপ্নে পানাহার করতে দেখলে রোজা ভাঙে না। স্বপ্নদোষ হলেও রোজা ভাঙে না, তবে গোসল করে পবিত্র হয়ে নামাজ পড়তে হবে।