জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্যে পেশার জায়গায় লেখা ছিল ‘পতিতা’, ঠিকানার স্থানে ‘পতিতাপল্লি’। ফরিদপুরের যৌনকর্মীদের দেওয়া এমন পরিচয়পত্র নিজেদের তো কোনো কাজে লাগেনি, সন্তানের শিক্ষাজীবনের কোনো কাজেও লাগাতে পারেননি। যেখানেই এই কার্ড দেখিয়েছেন, সেখানে নতুন করে অসম্মানিত হতে হয়েছে।
ফরিদপুরে এমন ২২ যৌনকর্মী সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র পেয়েছেন। যে পরিচয়পত্র থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে ‘পতিতা’ শব্দটি। নতুন পরিচয়পত্রে ঠিকানার জায়গায় ‘রথখোলা পল্লি’ লেখা হয়েছে। সার্ভারে থাকা পেশার তথ্যের জায়গায় সংশোধন করে ‘গৃহিণী’ লেখা হয়েছে।
শাপলা মহিলা সংস্থা নামে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, জেলা শিশু সুরক্ষা কমিটির চেষ্টায় ফরিদপুর জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের উদ্যোগে এ সংশোধিত পরিচয়পত্র বিতরণ করা হয়।
আজ দুপুরে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে এ কার্ড বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান, ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. নূরু আমিন, শিশু সুরক্ষা কমিটির সদস্য ও শাপলা মহিলা সংস্থার ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য শিপ্রা গোস্বামী প্রমুখ।
সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান বলেন, পবিত্র রমজান মাসে এমন একটি মহৎ কাজ করতে পেরে খুব ভালো লাগছে। পর্যায়ক্রমে সব যৌনকর্মীর জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন করে বিতরণ করা হবে। তিনি বলেন, বিতরণ করা জাতীয় পরিচয়পত্রে পেশার তথ্য লেখা না থাকলেও সার্ভারে সংরক্ষিত তথ্যে পেশা উল্লেখ থাকে।
কয়েকজন যৌনকর্মী বলেন, তাঁরা ভাগ্যের বিড়ম্বনায় সমাজে নিগৃহীত একটি পেশার সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা চান, সন্তানদের যেন তাদের মায়ের ভাগ্য বরণ করতে না হয়। এ জন্য তাঁরা শিশুদের পড়ালেখা শেখাতে আগ্রহী। কিন্তু স্কুলে ভর্তি, জন্মনিবন্ধনসহ নানা কাজে জাতীয় পরিচয়পত্র থাকা সত্ত্বেও বিড়ম্বনার মুখে পড়তে হয়। এ জন্য সন্তানদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁরা উৎকণ্ঠিত হয়ে পড়েছিলেন। সংশোধিত জাতীয় পরিচয়পত্র পাওয়ার পর এ–জাতীয় সমস্যা ও সম্মানহানিকর পরিস্থিতির অবসান হবে বলে তাঁরা মনে করেন।