বর্তমানে আমরা যে ধরনের কম্পিউটার ব্যবহার করি তার ভবিষ্যৎ বা নেক্সট বিগ থিং হতে যাচ্ছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
বিজ্ঞানীরা বলছেন এখনকার সাধারণ একটি কম্পিউটারকে যদি গরুর গাড়ির সঙ্গে তুলনা করা হয় তাহলে কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে তুলনা করা যাবে দ্রুত গতির বুলেট ট্রেন কিম্বা রকেটের সঙ্গে।
এই দুটো কম্পিউটার হয়তো একই কাজ করে, কিন্তু আসল কথা হচ্ছে তারা একেবারেই আলাদা।
বিজ্ঞানীরা এখন এই নতুন প্রজন্মের কম্পিউটার উদ্ভাবনের জন্য পাল্লা দিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, ব্রিটেনসহ বিভিন্ন দেশের সরকার এধরনের সুপার-ফাস্ট কম্পিউটার তৈরির পেছনে প্রচুর অর্থ বিনিয়োগ করছে।
তবে সাধারণ মানুষের কাছে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার পৌঁছাতে আরো কয়েক বছর সময় লাগবে।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার খুবই শক্তিশালী যা আজকের দিনের কম্পিউটারের তুলনায় কয়েক হাজার গুণ দ্রুত গতিতে কাজ করতে পারবে। অর্থাৎ এটি অনেক দ্রুত অনেক বেশি তথ্য প্রসেস করতে পারবে।
এর এলগরিদম, কাঠামো সবকিছুই সাধারণ কম্পিউটার থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
এসব কম্পিউটার অত্যন্ত জটিল সমস্যা খুবই অল্প সময়ে সমাধান করতে পারবে। যে কাজ করতে একটি সাধারণ কম্পিউটারের এক মিনিট সময় লাগে, কোয়ান্টাম কম্পিউটার সেই কাজটি করতে লাগবে এক সেকেন্ডেরও কম সময়।
কম্পিউটার যুক্তিবিদরা বলছেন যে সমস্যা সমাধান করতে আগে একশ বছর লাগতো সেটা এখন মূহুর্তের মধ্যেই করা যাবে। আগে একটা পাসওয়ার্ড ভাঙতে সাধারণ কম্পিউটারের হয়তো ১০ বছর লাগতো। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের লাগবে কয়েক সেকেন্ড।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটার আবিষ্কৃত হলে মানুষের হাতে অপরিসীম কম্পিউটিং ক্ষমতা চলে আসবে।
গত শতাব্দী-জুড়ে যে ধরনের কম্পিউটার তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর চাইতে একেবারে ভিন্ন উপায়ে কাজ করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার।
তথ্য প্রযুক্তিবিদ জাকারিয়া স্বপন বলেন, “প্রথাগত যে কম্পিউটারগুলো আমরা ব্যবহার করছি সেগুলো মূলত জিরো এবং ওয়ান বিটস দিয়ে পরিচালিত হয়। গত অর্ধ শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে এই সিস্টেম তৈরি হয়েছে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার এই একই ফর্মুলাতে কাজ করে না।”
“এখানে একটা বিটই দুটো অবস্থাতেই থাকতে পারে। অর্থাৎ জিরো হতে পারে আবার একই সঙ্গে ওয়ানও হতে পারে। অনেকেই হয়তো বুঝতে পারবেন না যে একটা কণিকা কীভাবে দুটো অবস্থায় থাকে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার এভাবেই সাধারণ কম্পিউটার থেকে আলাদা,” বলেন তিনি।
আমরা যেসব সাধারণ কম্পিউটার ব্যবহার করি তাতে তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষা করা হয়। এই প্রযুক্তিকে বলা হয় এনিক্রপশন।
এনক্রিপশন বলতে বোঝায় এমন এক পদ্ধতি যার মাধ্যমে কোনো একটি বার্তার তথ্য উলটপালট করে এমনভাবে দুর্বোধ্য করে তোলা, যাতে করে এর অর্থ অন্য কেউ বুঝতে না পারে।
অর্থাৎ যে তথ্যটি এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে গিয়ে পৌঁছাচ্ছে সেটি এমনভাবে যাচ্ছে যে কেউ মাঝপথে এটি পেয়ে গেলেও সে কিছু বুঝতে পারবে না।
আর এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন বলতে বোঝায় এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে সাংকেতিক বার্তা বিনিময়, বর্তমানের সাধারণ কম্পিউটার দিয়ে যার পাঠোদ্ধার করা কঠিন।
কিন্তু বিজ্ঞানীরা বলছেন, কোয়ান্টাম কম্পিউটার বর্তমানের এন্ড টু এন্ড এনক্রিপশন ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলতে পারবে।
তারা বলছেন, সাধারণ কম্পিউটারের সাহায্যে কোনো গোপনীয়তা ভাঙতে যদি কয়েক বছর সময় লাগে, কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মাধ্যমে তা এক সেকেন্ডে করা সম্ভব হবে।