বাংলার আকাশ ডেস্ক
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতা এলে কোনো ‘মেগা প্রজেক্ট’-এর দিকে যাবে না। বরং, মেগা প্রজেক্ট থেকে সরে এসে স্কিল ডেভেলপমেন্টে (দক্ষতা উন্নয়ন) বিনিয়োগ বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হবে। তিনি আগামীর বাংলাদেশ গড়তে একটি নতুন মডেলে যাওয়ার কথা বলেন, যার সুফল প্রত্যেক নাগরিক পেতে পারে এবং অর্থনীতি কোনো গোষ্ঠীবিশেষের কাছে জিম্মি না থাকে।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকেলে ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের হলরুমে ফরিদপুর বিভাগের ব্যবসায়ীদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তাঁর বক্তব্যে বিএনপির অর্থনৈতিক পরিকল্পনার বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন:
বিনিয়োগের খাত পরিবর্তন: “আমাদের বিনিয়োগ স্কিল ডেভেলপমেন্টের জন্য করা হবে। শিক্ষায় ডেভেলপমেন্ট করতে হবে।”
স্বাস্থ্যসেবা: জনগণকে বিনামূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে, যার জন্য বিনিয়োগ এবং নতুন ইন্সটিটিউশন সৃষ্টি করতে হবে।
অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ: সকল নাগরিকের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বিএনপি “অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ” নামে একটি নতুন স্লোগান তৈরি করেছে।
ব্যবসায়িক পরিবেশ সহজীকরণ:
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঘুষ-দুর্নীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।
সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদনের প্রক্রিয়া ১৫ দিনের মধ্যে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা করতে হবে।
প্রত্যেক ডিসিশনের মধ্যে টাইম ফ্রেম থাকতে হবে।
পুঁজিবাজার: ক্যাপিটাল মার্কেট বা শেয়ার বাজারকে বড় করার এবং এর উন্নয়নের জন্য বড় পরিকল্পনা রয়েছে।
গ্রীন ইকোনমি ও জ্বালানি: “বিশ্ব এখন গ্রীন ইকোনমির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্ব দেবো।” বিদ্যুৎ, গ্যাস এবং গ্লোবাল ইন্টারনেট সিস্টেম গ্রো করা হবে।
কর্মসূচী বাস্তবায়ন: তিনি জানান, ক্ষমতায় যাওয়ার পরে দেরি না করে ‘ডে ওয়ান’ থেকেই কাজ শুরু করার জন্য তারা আগে থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন। স্পোর্টস ইকোনমি, থিয়েটার ইকোনমির মতো পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে বিএনপি।

সভায় উপস্থিত অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা দেশের অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ এবং প্রয়োজনীয় সংস্কার নিয়ে কথা বলেন:
কর্মসংস্থান ও বিনিয়োগ: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ বলেন, আগামী ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান তৈরির জন্য চিন্তাভাবনা করতে হবে। বৃহত্তর ফরিদপুরের উন্নতিতে কৃষির উন্নতি দরকার, যার জন্য ফসলের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
ব্যবসা ও ঘুষ: বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল হক বাস্তবতার চিত্র তুলে ধরে বলেন, “এমন কোনো জায়গা খুঁজে পাওয়া যায়নি যেখানে ঘুষ ছাড়া কাজ হয়। অন্তত আমি পাইনি। এটাই বাস্তবতা।”
পাট ও শ্রম: করিম গ্রুপের পরিচালক জাহাঙ্গীর মিয়া ফরিদপুরকে পাটের জন্য বিখ্যাত উল্লেখ করে বলেন, জুটমিলগুলো খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে এবং শ্রমিক সংকট রয়েছে। ফরিদপুর জুট ফাইবার্সের পরিচালক চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ বলেন, প্রায় সাড়ে চার কোটি মানুষ জুট সেক্টরের সাথে জড়িত।
আইনের সংস্কার: বিএস জুটমিলের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া নতুন উদ্যোক্তা তৈরি করতে প্রচলিত আইনের পরিবর্তনের দাবি জানান। তিনি বলেন, অভিজ্ঞতার সনদের বদলে ব্যাংক সলভেন্সি থাকলেই ব্যবসা করার সুযোগ দেওয়া উচিত।
ক্ষুদ্র ব্যবসা ও তরুণ উদ্যোক্তা: বক্তারা প্রত্যাশা করেন, আগামী দিনে কর্পোরেট ব্যবসার পাশাপাশি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরাও যেন টিকে থাকতে পারে। আইনের অজুহাত দেখিয়ে তরুণ উদ্যোক্তাদের গলা টিপে না ধরার আহ্বান জানান তারা।
সভাপতিত্ব: সভায় সভাপতিত্ব করেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম। তিনি জানান, তাদের আগামীর লক্ষ্য হলো ফরিদপুরে পদ্মার এপাড়ে যুবকদের জন্য একটি আইটি হাব উপহার দেওয়া।
উপস্থিতি: সভায় আরও বক্তব্য দেন চকবাজার বণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একে কিবরিয়া স্বপন, মামুন গ্রুপের শাহীন শাহাবুদ্দিন, শরিয়তপুরের আলাউদ্দিন আল আজাদ, মাদারীপুরের লোকমান হোসেন মোল্লা, রাজবাড়ীর ইমারুল করিম, এফসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আওলাদ হোসেন বাবর প্রমুখ।
প্রদর্শনী ও শ্রদ্ধা নিবেদন: সদর উপজেলার সভাস্থলের পাশে তরুণ উদ্যোক্তাদের পণ্যের প্রদর্শনী স্টল বসানো হয়েছিল। এর আগে, বিএনপির প্রতিনিধি দলের নেতৃবৃন্দ ফরিদপুর সার্কিট হাউজে পৌঁছান এবং শহরের ময়েজমঞ্জিলে বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফের কবর জিয়ারত করেন।