প্রতিবছর ১০ নভেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের জন্য বিশ্ব বিজ্ঞান দিবস। শান্তি প্রতিষ্ঠা, টেকসই উন্নয়ন ও সবার কল্যাণে বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকাকে নিশ্চিত করার জন্য দিনটি পালন করা হয়। ইউনেসকো ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান কাউন্সিলের উদ্যোগে এ দিবস পালিত হয়ে থাকে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য—‘বিশ্বাস, রূপান্তর ও ভবিষ্যৎ: ২০৫০ সালের জন্য আমাদের যে বিজ্ঞান প্রয়োজন’।
১৯৯৯ সালে হাঙ্গেরির বুদাপেস্টে অনুষ্ঠিত বিশ্ব বিজ্ঞান সম্মেলনের মাধ্যমে এই দিবস পালনের ধারণা প্রথম জন্ম নেয়। ইউনেসকো ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান কাউন্সিল তখন যৌথভাবে বিজ্ঞান–সংক্রান্ত ঘোষণা ও বৈজ্ঞানিক জ্ঞান ব্যবহারের ঘোষণা দেয়। সেই অঙ্গীকারকে পালন করতেই দিবসটি ঘোষণা করা হয়। ইউনেসকো আনুষ্ঠানিকভাবে ২০০১ সালে দিবসটির ঘোষণা করে। সেই থেকে দিবসটির মাধ্যমে বিজ্ঞানকে অগ্রগতির ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে শক্তিশালী করার জন্য বৈশ্বিক উদ্যোগ, কর্মসূচি ও অর্থায়নকে উৎসাহিত করে আসছে।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২০২৪-৩৩ সময়কালকে টেকসই উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান দশক হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই প্রেক্ষাপটে দিবসটিকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ বছর দিবসটি উপলক্ষে উজবেকিস্তানে ৪৩তম ইউনেসকো জেনারেল কনফারেন্স আয়োজন করেছে ইউনেসকো। ইউনেসকোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে বলেন, শান্তি প্রতিষ্ঠায় বিজ্ঞান অপরিহার্য। বিজ্ঞান সমসাময়িক বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের জন্য বাস্তব ও টেকসই সমাধান সরবরাহ করে। জলবায়ু সংকট, মহামারি ও সম্পদের ঘাটতির মতো সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করার মাধ্যমে বিজ্ঞান অনেক সংঘাতের মূল কারণ প্রশমিত করতে পারে। এই দিবসের মাধ্যমে ইউনেসকো এবং আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান কাউন্সিলের সব সদস্য, সহযোগী ও অংশীদারদের প্রতি একসঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানানো হয়।
দিবসটির মূল উদ্দেশ্যের মধ্যে রয়েছে শান্তিপূর্ণ ও টেকসই সমাজের জন্য বিজ্ঞানের ভূমিকা সম্পর্কে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা। জ্ঞান ভাগ করে নেওয়া ও বৈজ্ঞানিক সহযোগিতার জন্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংহতি প্রচার করা হয় এদিন। ইউনেসকোর মতে, বিজ্ঞান আমাদের মানবমনের শক্তি ও উদ্ভাবনের মাধ্যমে সমৃদ্ধির সম্ভাবনা তুলে ধরে। বিজ্ঞান সমাজের মধ্যে ঐক্য তৈরি করতে ও সমাজকে সবার জন্য আরও সমান ও সমৃদ্ধ করতে সক্ষম। ইউনেসকোর বিশেষ দূত সুমায়া বিনতে এল হাসান বলেন, ‘আমরা সবাই জ্ঞান সৃষ্টির ক্ষমতায় বিশ্বাস করি। আমরা যেন উদ্ভাবনের মাধ্যমে উন্নতি করতে পারি। আমরা সবাই বুঝতে পেরেছি, বিজ্ঞান কীভাবে আমাদের একটি সাধারণ উদ্দেশ্যে একত্র করতে পারে। বিজ্ঞান আমাদের সমাজকে সবার জন্য আরও সমান ও সমৃদ্ধ করতে সক্ষম। বিজ্ঞান আমাদের বুঝতে সাহায্য করে কোথায় আছি আমরা এবং ভবিষ্যতে আমরা কোথায় যেতে পারি। বিজ্ঞানই আমাদের উজ্জ্বল ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের জন্য আশার নাম।’
সূত্র: ইউনেসকো ও আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান কাউন্সিল