বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করার পর সিলেট, ফরিদপুর ও কুড়িগ্রামে সংগঠনটির ৩ জন নেতা পদত্যাগ করেছেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি) শাখার সদস্যসচিব হাফিজুল ইসলাম, ফরিদপুর জেলার মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন ও কুড়িগ্রাম জেলার মুখ্য সংগঠক সাদিকুর রহমান নিজেদের পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল রোববার রাতে পৃথকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন তাঁরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম পুনরায় সচলের পর শাবিপ্রবি শাখার সদস্যসচিব হাফিজুল ইসলাম এক চিঠিতে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। এর আগে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সভাপতি রিফাত রশিদ সব কমিটির স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার কথা জানান।
হাফিজুল ইসলাম তাঁর পদত্যাগপত্রে লিখেছেন, ‘আগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে একনিষ্ঠভাবে কাজ করেছি। তবে সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডে মনে হয়েছে, তাঁদের আগের লক্ষ্য ধরে রাখার পাশাপাশি আগামী দিনের লক্ষ্য কী হবে—তা বোধগম্য নয়। আমি মনে করছি, যে লক্ষ্য নিয়ে কমিটিগুলো গঠিত হয়েছিল, সেসব লক্ষ্য পূরণে তাঁরা ব্যর্থ হয়েছেন।’
এ বিষয়ে জানতে শাবিপ্রবি শাখার আহ্বায়ক পলাশ বখতিয়ারের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি সাড়া দেননি।
গতকাল রাত ৯টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফরিদপুর জেলা শাখার মুখপাত্র কাজী জেবা তাহসিন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
পদত্যাগের ঘোষণায় জেবা তাহসিন লিখেছেন, ‘এই পদ থেকে সরে গেলেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতি আমার ভালোবাসা, বিশ্বাস ও দায়বদ্ধতা আগের মতোই অটুট থাকবে। আমি সব সময় এ আন্দোলনের পথে থাকব, হয়তো ভিন্ন ভূমিকায়, কিন্তু একই লক্ষ্য নিয়ে; বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার স্বপ্নে।’
এ বিষয়ে জেবা তাহসিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আশা করেছিলাম নতুন কিছু হবে, দুর্নীতি-অনিয়ম হবে না, অফিসে সেবা প্রদানে স্বচ্ছতা থাকবে। কিন্তু আমাদের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়নি। চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে সেই কমিটিগুলো আবার বহাল করা হয়েছে। এতে চাঁদাবাজির ঘটনা বাড়বে বৈ কমবে না। এসব কমিটির মাধ্যমে ভালো কোনো কাজ কিংবা ইতিবাচক কোনো অগ্রগতি সম্ভব নয়। এ কারণে আমি এই কমিটির সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখার কোনো উৎসাহ পাইনি।’
গতকাল রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রাম জেলা শাখার মুখ্য সংগঠক সাদিকুর রহমান ফেসবুকে নিজের পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
সাদিকুর উল্লেখ করেন, ছয় মাস মেয়াদের এই কমিটি অনেক আগেই কার্যত বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সংগঠনটির জেলা কমিটির অনেক সদস্য এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত। আগে যারা অরাজনৈতিক ছিলেন, তাঁদের একটি বড় অংশ এখন ছাত্রশক্তির সঙ্গে কাজ করছেন। অন্যদিকে বিভিন্ন উপজেলায় বৈষম্যবিরোধীর অনেক সদস্য ছাত্রদল, গণঅধিকার পরিষদ কিংবা ছাত্র ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ ওঠার পর গত ২৭ জুলাই দেশব্যাপী সংগঠনটির সব কমিটি স্থগিত করা হয়।