যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর ভাইস অ্যাডমিরাল রিচার্ড কোরেল ভেবেছিলেন, দেশটির পারমাণবিক বাহিনীর কমান্ডার হিসেবে তাঁর নিয়োগ নিশ্চিত হওয়া নিয়ে গত বৃহস্পতিবার শুনানি সহজভাবেই শেষ হবে। তবে তাঁর সাক্ষ্য গ্রহণের আগের দিন বুধবার রাত ৯টা ৪ মিনিটে সে আশা ভেঙে গেছে।
ওই সময় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে বিশ্বকে চমকে দেন। বলেন, তিনি মার্কিন বাহিনীকে পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষা অবিলম্বে শুরু করতে বলেছেন। তাঁর যুক্তি, যুক্তরাষ্ট্র এ ক্ষেত্রে রাশিয়া ও চীনের পেছনে থাকতে পারে না।
ট্রাম্প বলেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় এবং চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে।’
কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট সদস্য সিনেটর জ্যাক রিড কোরেলকে প্রশ্ন করেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারও পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা শুরু করলে তা কি বিশ্বে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা বাড়াবে এবং অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করবে।
কোরেল বলেন, ‘যদি আমাকে স্ট্র্যাটেজিক কমান্ডের (স্ট্র্যাটকম) কমান্ডার হিসেবে নিশ্চিত করা হয়, আমার কাজ হবে, পারমাণবিক পরীক্ষাবিষয়ক যেকোনো আলোচনা সম্পর্কে সামরিক পরামর্শ দেওয়া।’
ভাইস অ্যাডমিরাল কোরেলকে গত সেপ্টেম্বরে ট্রাম্প স্ট্র্যাটকমের প্রধান করার জন্য মনোনীত করেন। স্ট্র্যাটকম পারমাণবিক হামলা প্রতিরোধ ও আক্রমণের সক্ষমতা নিয়ে কাজ করে। কোরেল পুরো শুনানিতে সতর্কভাবে প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন।
পারমাণবিক অস্ত্রে রাশিয়া দ্বিতীয় ও চীন বেশ দূরে তৃতীয় অবস্থানে। কিন্তু দেশটি পাঁচ বছরের মধ্যে আমাদের সমপর্যায়ে উঠে আসতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প, মার্কিন প্রেসিডেন্ট
শুনানির এক পর্যায়ে স্বতন্ত্র সিনেটর অ্যাঙ্গাস কিং প্রশ্ন করেন, ট্রাম্প কি পারমাণবিক ডিভাইসের বিস্ফোরক পরীক্ষা নয়, বরং ক্ষেপণাস্ত্র বা অন্য সরবরাহ ব্যবস্থা পরীক্ষার কথা বলছেন কি না।
জবাবে কোরেল বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্টের উদ্দেশ্য জানি না, তবে এটি এমন একটি ব্যাখ্যা হতে পারে, আমি তা মেনে নিই।

মার্কিন স্থগিতাদেশ
গতকাল মার্কিন কর্মকর্তারা পরিষ্কার করেননি যে ট্রাম্প পারমাণবিক অস্ত্র সরবরাহ ব্যবস্থার পরীক্ষা করতে বলছেন, নাকি বিস্ফোরক পরীক্ষায় ৩৩ বছরের স্থগিতাদেশ শেষ করতে চাইছেন। বিশেষজ্ঞরা বলেন, ট্রাম্পের নির্দেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করতে পারে ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াতে পারে, যা শীতল যুদ্ধের ভয়ংকর স্মৃতি ফিরিয়ে আনে।
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, ট্রাম্প প্রায়ই সমঝোতায় আসতে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে শক্তি দেখিয়ে থাকেন। সম্ভবত ওই নির্দেশের মধ্য দিয়ে মস্কো ও বেইজিংকে এমনই একটি বার্তা পাঠাতে চাইছেন তিনি।
ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্স বলেন, এ পরীক্ষা করা মার্কিন পারমাণবিক অস্ত্র ঠিকভাবে কাজ করছে কি না, তা নিশ্চিত করার অংশ।
যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য পারমাণবিক শক্তি দীর্ঘদিন ধরে প্রকৃত পারমাণবিক অস্ত্রের বিস্ফোরণ বা পরীক্ষা বন্ধ রেখেছে। পরিবর্তে তারা উন্নত কম্পিউটার সিমুলেশন ব্যবহার করে পারমাণবিক অস্ত্রের প্রস্তুতি বজায় রেখে চলেছে।
ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েন্টিস্টসের বৈশ্বিক নিরাপত্তা কর্মসূচির পরিচালক তারা ড্রোজডেনকো বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জন্য পারমাণবিক বিস্ফোরকের পরীক্ষা আবার শুরু করার তেমন ভালো কারণ নেই। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সবাইকে কম নিরাপদ করে তুলবে। বোমা পরীক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষতি অনেক বেশি ও লাভ খুব কম হবে।’
মস্কো ও বেইজিংয়ের প্রতি একটি বার্তা
অনেক বিশ্লেষক বলছেন, ট্রাম্প প্রায়ই সমঝোতায় আসতে বাধ্য করার কৌশল হিসেবে শক্তি দেখিয়ে থাকেন। সম্ভবত ওই নির্দেশের মধ্য দিয়ে মস্কো ও বেইজিংকে এমনই একটি বার্তা পাঠাতে চাইছেন তিনি।