জ্যামাইকায় অনুষ্ঠিত দিবা-রাত্রির টেস্টের তৃতীয় দিনে মিচেল স্টার্কের আগুনঝরা বোলিং এবং স্কট বোল্যান্ডের হ্যাটট্রিকের সুবাদে ওয়েস্ট ইন্ডিজ মাত্র ২৭ রানে অলআউট হয়ে যায়। এর ফলে অস্ট্রেলিয়া ১৭৬ রানের বিশাল ব্যবধানে ম্যাচটি জিতে নেয় এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে তাদের যাত্রা শুরু করে।
স্টার্কের রেকর্ড গড়া শততম টেস্ট পারফরম্যান্স
শততম টেস্ট খেলতে নামা অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার মিচেল স্টার্ক বল হাতে রীতিমতো আগুন ঝরান। তিনি মাত্র ৯ রান খরচায় ৬ উইকেট নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিং লাইনআপ গুঁড়িয়ে দেন। এটি শততম টেস্টে কোনো বোলারের সেরা বোলিংয়ের রেকর্ড।ক্যারিবীয় টপ-অর্ডারে ধস নামিয়ে স্টার্ক তার প্রথম ১৫ বলেই ৫ উইকেট তুলে নেন, যা টেস্ট ইতিহাসে দ্রুততম ফাইফার (১৯ বলে ৫ উইকেট শিকারের আগের রেকর্ডটি ছিল আর্নি টোসাক, স্টুয়ার্ট ব্রড এবং স্কট বোল্যান্ডের)। সব মিলিয়ে তিনি ৭.৩ ওভারে ৯ রান দিয়ে ৬ উইকেট শিকার করেন। গোলাপি বলের টেস্টে স্টার্ক বরাবরই সেরা, এবং এই রেকর্ড তাকে আরও সমৃদ্ধ করেছে। ২৭ ইনিংসে এখন তার শিকার ৮১ উইকেট, যেখানে অন্য কোনো বোলারের ৫০ উইকেটও নেই। ইনিংসে তিনি পাঁচবার ৫ উইকেট শিকার করেছেন, যা অন্য কারও দুইবারের বেশি নেই।
বোল্যান্ডের হ্যাটট্রিক ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের লজ্জাজনক অলআউট
স্টার্কের তাণ্ডবের পর স্কট বোল্যান্ড হ্যাটট্রিক করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংসে শেষ পেরেক ঠুকে দেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ার দশম বোলার হিসেবে টেস্টে হ্যাটট্রিকের স্বাদ পেলেন এবং ২০১০ সালে পিটার সিডলের পর নিজ দেশের হয়ে তিনিই প্রথম এই কীর্তি গড়লেন।ওয়েস্ট ইন্ডিজকে জয়ের জন্য ২০৪ রানের লক্ষ্য দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। কিন্তু ব্যাটিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই মিচেল স্টার্কের বোলিংয়ে কোনো রান না নিয়েই ৩ উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। স্টার্ক তার তৃতীয় ওভারে আরও ২ শিকার করেন, যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বোর্ডে ছিল মাত্র ৭ রান এবং ৫ উইকেট নেই। এরপর জশ হ্যাজলউড স্বাগতিক অধিনায়ক রস্টন চেজকে আউট করেন।১৪তম ওভারে বোল্যান্ডের তাণ্ডব শুরু হয়। তিনি প্রথম তিন বলেই তিন উইকেট শিকার করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করেন। তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ২৬ রান। ভাগ্যক্রমে তারা আরেকটি রান পায়, তাই অন্তত ১৯৫৫ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ডের ২৬ রানে অলআউট হওয়ার লজ্জাজনক রেকর্ডটি ভাগাভাগি করতে হয়নি। দলীয় ২৭ রানে তাদের দশম উইকেটের পতন ঘটে স্টার্কের বলে।এই ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাত ব্যাটসম্যান শূন্য রানে আউট হন, যা টেস্ট ইতিহাসে এই প্রথম কোনো ইনিংসে এত ব্যাটসম্যানের শূন্য রানে আউট হওয়ার ঘটনা। এই সিরিজ জুড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ যথাক্রমে ১৫৯ ও ১৩৩ রানের ব্যবধানে প্রথম দুই টেস্ট হেরেছিল। পেসারদের দাপটের এই সিরিজে তারা ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হলো।অস্ট্রেলিয়ার এই শক্তিশালী শুরু কি তাদের বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পরবর্তী ধাপে আরও সাফল্যের দিকে নিয়ে যাবে?