মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে ঋণের সুদ হার আরও বাড়ানো হয়েছে। এই দফায় সুদ হার বাড়বে দশমিক ৪৪ শতাংশ। ফলে সব ধরনের ঋণের সুদ ওই হারে বেড়ে যাবে। একই সঙ্গে বাড়বে আমানতের সুদ হারও। ঋণের সুদ হার বাড়ার কারণে ব্যবসা খরচ যেমন বাড়বে। তেমনি পণ্যের উৎপাদন খরচও বাড়বে। এর সঙ্গে বাড়বে পণ্যের দাম। ফলে একদিকে মূল্যস্ফীতিতে চাপ তৈরি হবে। পণ্যের দাম বাড়ার কারণে ভোগান্তিতে পড়বেন ভোক্তা। এতে পণ্য বিক্রি কমে গিয়ে বিপাকে পড়বেন দেশের উদ্যোক্তারা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বৈশ্বিক ও দেশীয় মন্দায় এমনিতেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের অবস্থা ভালো নয়। এর মধ্যে দফায় দফায় ঋণের সুদ হার বাড়ানোর কারণে ব্যবসা খরচ বেড়ে যাচ্ছে। এতে উদ্যোক্তারা সমস্যায় পড়ছেন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করতে বাজারে টাকার প্রবাহ কমানো হচ্ছে। এতে বাড়ানো হচ্ছে সুদ হার। ফলে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কৌশল কতটুকু কাজে আসবে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বরং এতে মূল্যস্ফীতির হার বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুদ হার বাড়ানোর ছয় মাস পরও মূল্যস্ফীতির হারে তেমন কোন পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। উলটো কোথাও কোথাও বেড়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, গত জুলাই থেকে সুদ হার নির্ধারণ করা হচ্ছে সরকারের ছয় মাস মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হারের ভিত্তিতে। সংকোচনমুখী মুদ্রানীতির কারণে এর সুদ হার ক্রমেই বেড়ে চলছে। ট্রেজারি বিলের গড় সুদের হারের সঙ্গে নির্দিষ্ট অংশ যোগ করে সুদ নির্ধারিত হচ্ছে। ফলে প্রতি মাসেই সুদ হার বাড়ছে। গত ফেব্রুয়ারিতে ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হার ছিল ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ। মার্চে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশে। এক মাসের ব্যবধানে ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হার বেড়েছে দশমিক ৯৪ শতাংশ।
এদিকে ট্রেজারি বিলের সুদ হার বেশি বেড়ে যাওয়ায় নীতি সুদ হার কিছুটা কমানো হয়েছে। আগে সাধারণ ঋণের সঙ্গে সাড়ে ৩ শতাংশ, ভোক্তা ঋণের সঙ্গে সাড়ে ৪ শতাংশ, কৃষি, পল্লী ও রপ্তানি খাতের প্রি-শিপমেন্ট ঋণের সঙ্গে আড়াই শতাংশ যোগ করে ঋণের সুদ হার নির্ধারিত হতো। এখন এ হার কিছুটা কমানো হয়েছে। এখন থেকে সাধারণ ঋণের সঙ্গে ৩ শতাংশ ভোক্তা ঋণের সঙ্গে আরও ১ শতাংশ সার্ভিস চাজ হিসাবে মোট ৪ শতাংশ, রপ্তানি খাতের প্রি-শিপমেন্ট ঋণ, কৃষি ও পল্লী ঋণের ক্ষেত্রে ২ শতাংশ যোগ করে নতুন সুদ হার নির্ধারণ করতে হবে। ফলে আজ (সোমবার) থেকে সাধারণ ঋণের সুদ হার ১৩ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১৩ দশমিক ৫৫ শতাংশে। পল্লী ও কৃষি ঋণের সুদ হার ১২ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে দাঁড়াবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশে। প্রি-শিপমেন্ট ঋণের সুদ হার ১২ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ভোক্তা ঋণের সুদ হার ১৪ দশমিক ১১ শতাংশ থেকে বেড়ে হবে ১৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।
আজ থেকে যেসব ঋণ ছাড় করা হবে সেসব ঋণের বিপরীতে বাড়তি সুদ দিতে হবে। আগের বিতরণ করা ঋণের সুদ হার ছয় মাস পর থেকে বাড়ানো যাবে।
গত সেপ্টেম্বরে ট্রেজারি বিলের গড় সুদ হার ছিল ৭ দশমকি ২০ শতাংশ। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০ দশমিক ৫৫ শতাংশ। ট্রেজারি বিলের সুদ হার বাড়ায় ঋণের সুদ হারও বাড়ছে।
এদিকে ঋণের সুদ হার বাড়ানোর সঙ্গে আমানতের সুদ হারও বাড়বে। ব্যাংকের আমানতের সুদ হার বাড়ানোর কোনো সীমা নেই। ব্যাংকগুলো আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের তুলনা করে তা বাড়াতে পারবে। ইতোমধ্যে অনেক ব্যাংক আমানতের সুদ হার বাড়িয়েছে। কোনো কোনো ব্যাংক ১২ শতাংশ সুদেও আমানত নিচ্ছে। তবে বেশির ভাগ ব্যাংকে এ হার ডাবল ডিজিটের নিচে রয়েছে।