বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি এবার রাজপথে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিসহ জনজীবনের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনের দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি পালন করবে দলটি।
একইসঙ্গে অক্টোবরের মধ্যে সাংগঠনিক জেলা এবং উপজেলাগুলোতে সম্মেলন সম্পন্ন করার মধ্য দিয়ে নিজেদের ঘর গোছানোর কাজটি শেষ করবে তারা। পাশাপাশি পুরোদমে চলবে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতিও।
এজন্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের আর বসে না থেকে এখনই যার যার নির্বাচনি এলাকার মাঠ গোছানোর কাজে মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছে।
শনিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী কার্যালয় মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত দলটির কো-চেয়ারম্যান, প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সংসদ-সদস্যদের যৌথ সভায় এমনটাই সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা গেছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদের এমপি এতে সভাপতিত্ব করেন।
জাতীয় পার্টির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি, কো-চেয়ারম্যান এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার, অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপিসহ দলটির অধিকাংশ নেতা এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। সভা পরিচালনা করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মো. মুজিবুল হক চুন্নু এমপি।
সূত্র জানায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় পার্টির জোটভুক্ত হওয়ার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। তবে এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের তাড়াহুড়া না করে রাজনৈতিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করার বিষয়ে মত দেন দলটির নীতিনির্ধারকরা। অনেকে এখনই এদিক-ওদিক না গিয়ে জোট করার ক্ষেত্রে আরও কৌশলী ভূমিকা নেওয়ার কথা বলেন।
নীতিনির্ধারকদের বেশিরভাগই দল গোছানো, দলকে শক্তিশালী করা এবং আপাতত এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের পাশাপাশি জনজীবনের বিভিন্ন সংকট নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে জাতীয় পার্টির সরব উপস্থিত থাকার পক্ষে মত দেন।
বৈঠকে একাধিক নেতা বলেন, সরকার ও বিরোধী উভয় বলয়ে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো এখন রাজপথে। একদফা দাবিতে একপক্ষ আরেকপক্ষের সঙ্গে মুখোমুখি অবস্থানে। জাতীয় পার্টিও বর্তমান সংসদের প্রধান বিরোধী দল। তাই দলটির রাজপথে সরব থাকা উচিত। তবে এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে অনুসরণ করা ঠিক হবে না।
বিকল্প হিসাবে জনজীবনের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি দিয়ে মাঠে থাকলে সাধারণ মানুষ মনে করবে যে জাতীয় পার্টিও রাজপথে আছে। ভোটের রাজনীতিতে যা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, ৯ সেপ্টেম্বর রাজধানীর মোহাম্মদপুরে ঢাকা মহানগর উত্তরের আয়োজনে একটি বড় ধরনের সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
জানতে চাইলে এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যন, সাবেক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি বলেন, আমরা সংগঠন, আন্দোলন এবং নির্বাচন-এ তিনটি বিষয়কেই সামনে রেখে আলাপ-আলোচনা করেছি। সামনে জাতীয় সংসদ নির্বাচন, এর আগে আমরা দল গোছানো এবং দলকে শক্তিশালী করা, জেলা ও উপজেলাগুলোতে সম্মেলন শেষ করার কাজে মনোনিবেশ করেছি।
পাশাপাশি নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতিসহ জনজীবনের নানা সমস্যা নিয়ে রাজপথে থাকার কথাও ভাবছি। পার্টি চেয়ারম্যান ও বিরোধীদলীয় উপনেতা জিএম কাদেরের নেতৃত্বে জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা আমাদের ভূমিকা পালন করব। এ বিষয়ে আমরা সবাই একমত হয়েছি।