রাশিয়ার সঙ্গে ক্রিমিয়ার সংযোগকারী সেতুতে (ক্রিমিয়া ব্রিজ) হামলার ঘটনায় অন্তত দুইজন নিহত হয়েছেন। সিএনএনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ হামলার দায় স্বীকার করেছে ইউক্রেন।
দক্ষিণ রাশিয়ার বেলগোরোদ অঞ্চলের গভর্নর ভ্যাচেস্লাভ গ্ল্যাডকভ বলেছেন, সোমবার ভোরে ক্রিমিয়া সেতুতে যাত্রীবাহী গাড়িতে হামলায় একজন পুরুষ ও একজন নারী নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় তাদের মেয়ে আহত হয়েছেন।
ইতোমধ্যে ক্রিমিয়া ব্রিজে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। ক্রিমিয়ার গভর্নর সের্গেই আকসিওনভ এক টেলিগ্রাম বার্তায় জানান, এই মুহূর্তে ক্রিমিয়া সেতুতে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন। পরিস্থিতি সামলাতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালে দখলে নেওয়ার পরপরই ক্রিমিয়াকে নিজেদের ভূখণ্ডের সঙ্গে যুক্ত করতে সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয় মস্কো। চার বছরের মাথায় চালু করা হয় কার্চ সেতু। ক্রিমিয়া সেতু নামেও এই স্থাপনা পরিচিত। ক্রিমিয়া ও রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের সরাসরি যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম এই সেতু।
২০১৮ সালের ১৫ মে কার্চ সেতু উদ্বোধন করা হয়। ওই দিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন একটি কমলা রঙের ট্রাক চালিয়ে এ সেতু পাড়ি দেন। রাশিয়ার অভিবাসীদের জন্য যেন গর্বের একটি দিন।
গর্বিত পুতিন সেদিন বলেছিলেন, ইতিহাসের বিভিন্ন সময়ে, এমনকি জারের শাসনের সময়েও মানুষ সেতুটি নির্মাণের স্বপ্ন দেখেছিল। এরপর গত শতকের ত্রিশ, চল্লিশ ও পঞ্চাশের দশকে এই সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত চমৎকার এই কাজ শেষ হয়েছে।
ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়াকে যুক্ত করা এই সেতু ১২ মাইল বা প্রায় ১৯ কিলোমিটার দীর্ঘ। সাগরে কার্চ প্রণালির ওপর নির্মাণ করা এ সেতুর উচ্চতা স্ট্যাচু অব লিবার্টির চেয়েও বেশি। এটা ইউরোপের সবচেয়ে দীর্ঘ সেতু। এতে সড়ক ও রেলপথ যুক্ত রয়েছে। কার্চ সেতু বানাতে খরচ হয়েছে ৩৬০ কোটি ডলার।
কার্চ সেতুতে সর্বশেষ হামলার পর ‘উপযুক্ত জবাব’ দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন পুতিন। গতকাল টেলিভিশনে সম্প্রচারিত এক ভাষণে পুতিন বলেন, গত রাতে (কার্চ) সেতুতে আরও একটি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। অবশ্যই রাশিয়ার পক্ষ থেকে এর জবাব দেওয়া হবে। ইউক্রেনের এই হামলার জবাব কীভাবে দেওয়া হবে, সে প্রস্তাব তৈরি করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ হামলার পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে অভিযোগ করেছে রাশিয়া।
এ বিষয়ে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র দাবি করেন, আমেরিকা ও ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থাগুলো ও দেশ দুটির রাজনীতিকদের সরাসরি অংশগ্রহণে ইউক্রেন এ হামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অবশ্য এ দাবির পক্ষে তিনি কোনো তথ্য-প্রমাণ দেননি।