1. admin@banglarakash.com : admin :
August 23, 2025, 8:53 pm

আয় বাড়ানো ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বড় চ্যালেঞ্জ

বাংলার আকাশ নিউজ ২৪.কম Email: banglarakashnews24@gmail.com
  • Update Time : Tuesday, May 23, 2023,
  • 19 Time View
Spread the love

সরকারের একটি নির্দিষ্ট সময়ের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান হচ্ছে বাজেট। বাংলাদেশে বাজেটের অন্যতম সমস্যা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় রাজস্ব আদায় কম। এই আয় বাড়ানোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবিলায় সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে করফাঁকি রোধ এবং নতুন করদাতা বাড়াতে হবে। এছাড়া মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা ও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিতে এবার বরাদ্দ বাড়াতে হবে।  একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি মনে করেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কাম্য নয়। এছাড়া খেলাপি ঋণ কমাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতিতে বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হবে।

বর্তমানে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে কী ধরনের চ্যালেঞ্জ রয়েছে?

মির্জ্জা আজিজ : সামষ্টিক অর্থনীতিতে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা। অনেকদিন থেকে প্রবৃদ্ধি ৭-৮ শতাংশে ছিল। ইতোমধ্যে এই হার কিছুটা কমে গেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলসহ (আইএমএফ) অন্যান্য বৈশ্বিক সংস্থা বলছে, এবার প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ ৩ থেকে সাড়ে ৫ শতাংশের মধ্যে থাকবে। এটি আমাদের জন্য ভালো খবর নয়। দ্বিতীয় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। ইতোমধ্যে মূল্যস্ফীতি প্রায় ৯ শতাংশে পৌঁছেছে। এর ফলে নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর কিছুটা যৌক্তিক কারণও আছে। বৈশ্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। তবে আশার কথা হলো বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম এখন কিছুটা কমতে শুরু করেছে। উন্নত দেশগুলো তাদের মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবস্থা নিচ্ছে। এটি আমাদের জন্য ইতিবাচক। কারণ বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি আমাদের প্রভাবিত করে। কাঁচামাল, মধ্যবর্তী পণ্য, মূলধনী যন্ত্রপাতি এবং কিছু খাদ্যও আমরা আমদানি করে থাকি। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে আমরা সম্পৃক্ত। তবে অভ্যন্তরীণ চাহিদা কমিয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ কাম্য নয়।

এবারের বাজেটে কী কী চ্যালেঞ্জ থাকছে?

মির্জ্জা আজিজ : বাজেট হচ্ছে একটি নির্দিষ্ট সময়ের আয়-ব্যয়ের খতিয়ান। কিন্তু বাজেট প্রণয়নের সময় বিভিন্ন রকম চাপ থাকে। অনেক সময় সরকার সে চাপের সামনে নতি স্বীকার করে। এতে বাজেট থেকে যেভাবে কাক্সিক্ষত সুফল পাওয়ার কথা, তা অনেক সময়ই পাওয়া যায় না। এসব কারণে বাজেটে অন্যতম চ্যালেঞ্জ থাকে রাজস্ব আদায়। দেশে জিডিপির তুলনায় কর আদায়ের হার তুলনামূলকভাবে অনেক কম। পৃথিবীর যেসব দেশের কর-জিডিপি অনুপাত সবচেয়ে কম, বাংলাদেশ তাদের মধ্যে অন্যতম। নানাভাবে কর আদায়ের হার বাড়ানোর কথা বলা হলেও এক্ষেত্রে তেমন কোনো সাফল্য অর্জিত হচ্ছে না। গত অর্থবছরে দেশের কর-জিডিপি অনুপাত ছিল ৭ দশমিক ৫৯ শতাংশ। বিশ্বের খুব কম দেশেই এত স্বল্প পরিমাণ কর আদায় হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কর আদায়ের হার বাড়ছে না, বরং আরও কমছে। এটি খুবই উদ্বেগজনক।

অর্থনীতির অবস্থা তেমন ভালো নয়। এ অবস্থায় রাজস্ব আদায়ে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া উচিত?

মির্জ্জা আজিজ : রাজস্ব বাড়ানোর জন্য বর্তমান করদাতাদের ওপর চাপ না বাড়িয়ে নতুন করদাতা শনাক্ত করা জরুরি। তাদের কর নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে হবে। অন্যদিকে করফাঁকি রয়েছে। যেমন ভ্যাট আদায়ের ক্ষেত্রে অনেক দোকানদার রসিদ দেয় না। তারা টাকা আদায় করলেও সরকারের কোষাগারে জমা দেয় না। আয়করের ক্ষেত্রে যাদের টিআইএন (করদাতা শনাক্তকরণ নম্বর) যাদের আছে, আয়কর রিটার্ন জমা দেয় তার অর্ধেক। বাকি অর্ধেককে কেন পাওয়া যাচ্ছে না, তা আমার কাছে বোধগম্য নয়। ফলে আমাদের করদাতা বাড়ানো জরুরি। তবে এক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তাদের দক্ষতার অভাব, না তারা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত সেটি ভেবে দেখা দরকার।

আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই কমছে। আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করছেন?

মির্জ্জা আজিজ : আমাদের বহিঃখাতে সমস্যা রয়েছে। যে কারণে রিজার্ভ কমছে। অন্যদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে রিজার্ভের যে তথ্য দেওয়া হচ্ছে, সে সংখ্যা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ইতোমধ্যে আইএমএফ এ ব্যাপারে তাদের মন্তব্য দিয়েছে। আইএমএফের হিসাবে রিজার্ভের যে পরিমাণ, তা বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবের চেয়ে অনেক কম। এছাড়া রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য আমাদের রপ্তানি প্রবৃদ্ধি সন্তোষজনক নয়। ফলে রপ্তানি আরও বাড়াতে হবে। এর আগে কানাডা, কোরিয়া ও জাপানে আমাদের নতুন বাজার সৃষ্টি হয়েছিল। সেসব দেশে রপ্তানি বাড়াতে চেষ্টা করতে হবে। এক্ষেত্রে পণ্যের বহুমুখীকরণ জরুরি। কারণ এখনো আমাদের রপ্তানি আয়ের ৮৫ শতাংশ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে। ফলে এখানে নতুন নতুন পণ্য কীভাবে যোগ করা যায়, সেজন্য চেষ্টা করতে হবে। আমাদের রিজার্ভ বৃদ্ধির আরেকটি খাত হলো রেমিট্যান্স (প্রবাসী আয়)। এই রেমিট্যান্সের অবস্থা ভালো নয়। যদিও জনশক্তি রপ্তানি অনেক বাড়ছে, কিন্তু রেমিট্যান্স বাড়ছে না। তাই রেমিট্যান্স বাড়াতে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ঋণ দেওয়ার জন্য আইএমএফ ইতোমধ্যে বেশ কিছু সংস্কারের শর্ত দিয়েছে। সরকারও সেগুলো বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সেসব শর্ত বাজেটে কী প্রভাব ফেলবে?

মির্জ্জা আজিজ : আর্থিক খাতে নিঃসন্দেহে সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। কারণ অর্থনীতিতে বড় সমস্যা হলো খেলাপি ঋণ। এটি ক্রমেই বাড়ছে। এখানেও বাংলাদেশ ব্যাংক যে পরিসংখ্যান দেয়, তার গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ঋণ পুনঃতফসিল হলে সেটিকে খেলাপির বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এছাড়া মামলায় আটকে থাকা ঋণও খেলাপির হিসাবে নেই। এসব হিসাব করলে খেলাপি ঋণের মাত্রা অনেক বেশি। এসব ঋণে কী ধরনের জামানত নেওয়া হয়, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন আছে। রাজনৈতিক নেতা, ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং ঋণ গৃহীতার পারস্পরিক যোগসাজশে এসব ঋণ দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতির অবসান না হলে অদূর ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাত নিয়ে সমস্যায় পড়তে হবে। অন্যদিকে ব্যাংকে সঞ্চয় কমছে। কারণ বর্তমানে আমানতের সুদের হার ৬ শতাংশ, কিন্তু মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশ। এর মানে হলো-ব্যাংকে টাকা রাখলে মূল্যস্ফীতির তুলনায় তা কমে যাচ্ছে। এটি অস্বাভাবিক।

আইএমএফের আরেকটি শর্ত হলো ভর্তুকি কমাতে হবে। এটাকে কীভাবে দেখছেন?

মির্জ্জা আজিজ : বর্তমানে সরকারের রাজস্ব আদায় সন্তোষজনক নয়। ফলে চলতি অর্থবছরের যে লক্ষ্যমাত্রা তা আদায় করা সম্ভব নয়। ফলে খরচের জন্য সরকারকে ধার করতে হয়। এখানেও দেখা যাচ্ছে, ব্যাংক থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে। এতে বেসরকারি খাতে ঋণের প্রবাহ কমছে। এর ফলে বিনিয়োগেও প্রভাব পড়বে। ফলে ভর্তুকি কমানোর প্রয়োজন রয়েছে। তবে ভর্তুকি কমানো হলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়। এতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নিম্নবিত্ত এবং মধ্যবিত্তরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এজন্য ভর্তুকি কমানোর আগে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা বাড়ানোসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে।

সাম্প্রতিক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা টানাপোড়েন শুরু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা স্যাংশন (নিষেধাজ্ঞা) দেবে তাদের কাছ থেকে কিনব না। এটি অর্থনীতির কোনো প্রভাব ফেলবে কিনা?

মির্জ্জা আজিজ : আমার মনে হয়, এগুলো রাজনৈতিক বক্তব্য। এটি কার্যকর করা কঠিন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র র‌্যাবের ওপর স্যাংশন দিয়েছে। একক দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রে আমাদের সবচেয়ে বেশি পণ্য রপ্তানি হয়। এটি আমাদের বড় বাজার। বাংলাদেশে রেমিট্যান্স আসার ক্ষেত্রেও দেশটি প্রথম সারিতে রয়েছে। ফলে তাদের কাছ থেকে কিছু না কিনলে, তারাও আমাদের পণ্য কিনবে না। এতে দেশ অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ফলে আমরা তাদের কাছ থেকে কিছু কিনব না, এটি সিরিয়াসলি বা কার্যকরভাবে বলা হয়েছে, বলে আমার মনে হয় না।


Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 LatestNews
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: BDiT