দুর্দান্ত বোলিংয়ে দলকে জেতালেন। তিনি হাসলেন, তিনি হাসালেন; পাশাপাশি শোনালেন প্রত্যয়— এভাবেই নিজের সেরাটা দিয়ে হাসি ফোটাতে চান সবার মুখে।
চার বছর পর ওয়ানডেতে ম্যান অব দা ম্যাচের পুরস্কার! এমন নয় যে, মাঝের সময়টায় দলের জয়ে অবদান রাখেননি কখনো। অবশেষে জ্বলে উঠলেন তিনি পুরনো দিনগুলোকে বর্তমানে ফিরিয়ে এনে।
একসময় সীমিত ওভারে বাংলাদেশের পেস আক্রমণের মূল অস্ত্র ছিলেন মোস্তাফিজ। সেই তিনি এখন ধার ও ধারাবাহিকতা হারিয়ে দলেই অনিয়মিত। এই দলের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ও সফলতম পেসার তিনি। কিন্তু আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে একাদশেই সুযোগ পাননি। তা নিয়ে প্রশ্নও ওঠেনি খুব একটা।
দল তার অভাব তেমন বোধ করেনি। শেষ ম্যাচেও একাদশে জায়গা পেলেন মূলত দল ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে পেসারদের খেলাচ্ছে বলে।
তার ভেতরে কি দহন হচ্ছিল? কোনো জেদ বা তাড়না অনুভব করছিলেন! বলা কঠিন। তবে যেভাবেই হোক, বল হাতে দেখা গেল সেই সেরা সময়ের মোস্তাফিজকে। প্রথম স্পেলে দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দিলেন। শেষ স্পেলে তো ছিলেন দুর্দান্ত।
হ্যারি টেক্টরকে ফিরিয়ে নাজমুল হোসেন শান্ত যখন বহুকাঙ্ক্ষিত ব্রেক থ্রু এনে দেন দলকে, এর পর প্রয়োজন ছিল দ্রুত আরও কয়েকটি উইকেট। শান্তর ওই ওভার শেষেও ৮ ওভারে লাগত কেবল ৪৯ রান। লরকান টাকার দুর্দান্ত খেলছিলেন তখনো।
মোস্তাফিজ দলের সেই চাওয়া মেটান নিখুঁতভাবে। পর পর দুই ওভারে কার্টিস ক্যাম্পার ও বিপজ্জনক জর্জ ডকরেলকে ফেরানোর পর নিজের শেষ ওভারে থামান ফিফটি করা টাকারকে।
৩-০-৯-৩, মোস্তাফিজের এই স্পেলই দলকে এগিয়ে নিয়ে যায় জয়ের দিকে। সব মিলিয়ে ৪৪ রানে ৪ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা হন।
ওয়ানডেতে সবশেষ সেরার স্বীকৃতি পেয়েছিলেন তিনি সেই ২০১৯ সালের মে মাসে, বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে।
ম্যাচসেরার পুরস্কার বিতরণী আয়োজনেও দেখা গেল সেই পুরনো মোস্তাফিজকে। ছোট ছোট করে মজার উত্তর। শেষ স্পেলে বল হাতে নেওয়ার সময় দলকে জেতানোর বিশ্বাস ছিল কিনা— এই প্রশ্নে আত্মবিশ্বাসী জবাব, “আমার তো এটা নরমালই… সবসময়ই তো করি!”
শেষ ম্যাচে মাঠে নেমে দারুণ কিছু করবেন, এই ভাবনা আগের দিন থেকেই তার ছিল বলে দাবি করলেন, “এক দিন আগে থেকেই আমি ভাবছিলাম যে ৫ উইকেট নেব।”
ম্যাচসেরার ৭৫০ ডলার দিয়ে কী করবেন, ধারাভাষ্যকার অ্যালান উইলকিন্সের মজার এই প্রশ্নে হাসিমুখে মোস্তাফিজ বললেন, “শপিং করব…।”
ম্যাচশেষের এই চটকদার পর্ব শেষে নিজের মনের কথা মোস্তাফিজ প্রকাশ করলেন সামাজিক মাধ্যমে।
“আমার দলকে আমি ভালোবাসি। আমার দেশের মানুষের মুখের হাসি ভালোবাসি। চেষ্টা করব নিজের সেরাটা দেওয়ার জন্য এবং বারবার আপনাদের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য।”