বাংলার আকাশ ডেস্কঃ
সুরক্ষা অ্যাপস এবং জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরির সার্ভার প্রতারণাচক্রের চার সদস্যকে রিমান্ডে নিয়েছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন-একরাম হোসেন (২০), জাহিদুল হাসান (১৯), আব্বাস উদ্দীন (২৮) এবং সানোয়ার কবির (৩৭)। এদের মধ্যে সানোয়ার কবির হলেন নির্বাচন কমিশনের কম্পিউটার অপারেটর। তার শিক্ষাগত যোগত্য মাস্টার্স। অন্য তিনজন হলেন ছাত্র। তাদের মধ্যে একজন মাদ্রাসায় পড়ে। দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপসহ বিভিন্ন গ্রুপে প্রচারণা চালিয়ে এনআইডি, জন্ম সনদ এবং করেনাভাইরাসের টিকাদানের সনদ বিতরণ করছিল একাধিক চক্র। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অগোচরে চক্রের সদস্যরা হাতিয়ে নিচ্ছিল মোটা অঙ্কের টাকা। এ বিষয়ে গত ৭ অক্টোবর ‘সুরক্ষা, এনআইডি অ্যাপসে প্রতারকচক্র/টাকায় মিলছে সনদ এনআইডি কার্ড’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওইদিনই সুনামগঞ্জের তাহিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে একরাম হোসেন, কানাইঘাটে অভিযান চালিয়ে আব্বাস উদ্দীন এবং ময়মনসিংহের কালাইঘাট থেকে সানোয়ার কবিরকে গ্রেফতার করে ডিবি। এর আগের দিন রাজধানীর কামরাঙ্গীরচর থেকে একরাম হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের দুদিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
ডিবি সূত্র জানায়, রিমান্ডপ্রাপ্তদের মধ্যে একরাম হোসেন এনআইডি, করোনা ভ্যাকসিন এবং জন্মনিবন্ধন প্রতারণার সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছে। জাহিদুল ইসলাম এনআইডি প্রতারণায় জড়িত বলে জানিয়েছে। আব্বাস উদ্দীন এনআইডি এবং করোনা ভ্যাকসিন প্রতারণায় জড়িত বলে স্বীকার করেছে। সানোয়ার হোসেন এনআইডি নম্বরের বিপরীতে সব ধরনের তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করে বলে ডিবির কাছে প্রাথমিকভারে স্বীকার করেছে।
সূত্র জানায়, একরাম ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে এনআইডি তথ্য সরবরাহ, করোনা ভ্যাকসিন আপডেট ও জন্মনিবন্ধন তথ্য পরিবর্তনের বিজ্ঞাপন দিয়ে গ্রাহক সংগ্রহ করত। এছাড়া ভ্যাকসিন সুরক্ষা অ্যাপস সার্ভারে প্রবেশের অ্যাকসেস থাকায় একরাম নিজেই অর্থের বিনিময়ে অবৈধভাবে অ্যাকসিন আপডেট করত। গ্রাহকদের কাছ থেকে এনআইডি কার্ডের অর্ডার নিত জাহিদুল। ২০০ থেকে ২৫০টি সংগ্রহের পর তা আব্বাসের কাছে দিত। ৮০০ থেকে ১০০০ অর্ডার সংগ্রহের পর তা সানোয়ারের কাছে পাঠাত আব্বাস। সানোয়ার এনআইডি নিবন্ধনকারী কম্পিউটার অপারেটর হওয়ায় সার্ভারে তার একসেস রয়েছে। ওই একসেসকে কাজে লাগিয়ে অর্থের বিনিময়ে এনআইডি কার্ড সরবরাহ করতেন তিনি। ডিবি জানায়, একরাম ও আব্বাস দুই বছর ধরে এবং জাহিদুল ও সানোয়ার তিন বছর ধরে এ ধরনের প্রতারণায় জড়িত আছেন। গত ছয় মাসে প্রতারণার মাধ্যমে একরাম হোসেন সাড়ে ৩৭ লাখ, জাহিদুল হাসান ৪৫ লাখ, আব্বাস উদ্দীন ৬১ লাখ এবং সানোয়ার কবির ১৪ লাখ টাকার বেশি উপার্জন করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার এবং ডিবির প্রধান হারুন-অর রশীদ শুক্রবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, সুরক্ষা অ্যাপস ও এনআইডি সার্ভার প্রতারকচক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করলেও সারা দেশেই চক্রের নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে। আমরা এ নেটওয়ার্ক গুঁড়িয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। মানুষ কেন প্রতারকচক্রের সদস্যদের কাজ থেকে এসব সেবা নিচ্ছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে এ ডিবি কর্মকর্তা বলেন, হারিয়ে যাওয়া এনআইডি কার্ডের কপি নিতে হলে সরকারির ফি দিতে হয় ২০০ টাকা। এছাড়া থানায় জিডি করতে হয়। কিন্তু এ চক্রের সদস্যদের কাছ থেকে নিতে হলে কোনো জিডির প্রয়োজন হয় না। ১০০ টাকার বিনিময়েই তারা কার্ড দিয়ে দিচ্ছে। সময়ও কম লাগছে। তিনি বলেন, করোনার টিকা দেওয়া ছাড়া বৈধভাবে টিকা সনদ পাওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু বিদেশ গমনসহ জরুরি কাজে অনেকের টিকা সনদের প্রয়োজন হয়। তাই দ্রুত সনদ পেতে তারা এ চক্রের দ্বারস্থ হচ্ছে।
ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার জুনায়েদ আলম সরকার বলেন, এ চক্রের সঙ্গে জড়িত নির্বাচন কমিশনে কর্মরত একজনকে এরই মধ্যে গ্রেফতার করেছি। এ চক্রের সঙ্গে নির্বাচন কমিশন এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের অন্য কেউ জড়িত কিনা সে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। যারাই জড়িত থাকবে তাদেরই আইনের আওতায় আনা হবে।
(আহৃত)