বাংলার আকাশ ডেস্কঃ
২০২১ সালে তথ্য কমিশনে করা ৪৬৩টি অভিযোগের মধ্যে ২৩৪টির বিষয়ে শুনানির কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এ হার ৫০ দশমিক ৫৩ শতাংশ।
তবে তথ্য সরবরাহের আবেদনের সংখ্যা কমেছে। ২০২০ সালে ৯ হাজার ৭৯৭টি আবেদন পড়লেও ২০২১ সালে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬৫৩টিতে। ছয় জেলায় তথ্য অধিকার আইনের অধীনে তথ্য প্রাপ্তির জন্য কোনো আবেদন পড়েনি।
তথ্য কমিশনে শুনানির শীর্ষে রয়েছে সরকারি প্রকল্প সংক্রান্ত বিষয়। এর সংখ্যা ৩৭টি। দ্বিতীয় স্থানে ‘তদন্ত প্রতিবেদন’ (২৭টি শুনানি), তৃতীয় স্থানে সরকারি বরাদ্দ ও অনুদান (১৩টি শুনানি), চতুর্থ স্থানে ‘গৃহনির্মাণ প্রকল্পের আওতায় ঘর বরাদ্দ’ (১১টি শুনানি) রয়েছে। পর্যায়ক্রমে পরবর্তী স্থানগুলোতে রয়েছে- দরপত্রের কপি অনুলিপি, শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেট, বিদ্যালয়সংক্রান্ত, ভবন নির্মাণ, উন্নয়নমূলক কাজসংক্রান্ত তথ্য, মাদ্রাসাসংক্রান্ত, কৃষি ঋণসংক্রান্ত, ওয়েবসাইট হালনাগাদ, বিদ্যুৎ বিল ও সংযোগসংক্রান্ত। তথ্য কমিশনের এমন বাস্তবতায় আজ বুধবার সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস পালিত হচ্ছে।
২০২১ সালে ২৩৪টি অভিযোগের মধ্যে ২২১টি অভিযোগ সরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে এবং ১৩টি অভিযোগ বেসরকারি দপ্তরের বিরুদ্ধে। ২২টি অভিযোগ নিয়ে শীর্ষে রয়েছে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়। পর্যায়ক্রমে ১৮টি অভিযোগ নিয়ে সমবায় অধিদপ্তর, ১৬টি অভিযোগ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ, নয়টি অভিযোগ নিয়ে পৌরসভা কার্যালয়, সাতটি অভিযোগ নিয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের কার্যালয় এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর রয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ছয়টি, জনতা ব্যাংক লিমিটেডের প্রধান কার্যালয়ের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে চারটি অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হলো-উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনার কার্যালয়, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে তিনটি করে অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হলো-উপজেলা মৎস্য অধিদপ্তর, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, গণপূর্ত বিভাগ, জেলা পরিষদ কার্যালয়, পুলিশ সুপারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অধিদপ্তর।
১৫টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুটি করে অভিযোগ রয়েছে। এগুলো হলো-ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়, জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট মহাখালী, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়, নেসকো (বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ), পরিবেশ অধিদপ্তর, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ পুলিশের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর), প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, জেলা শিক্ষা অফিস, গাজীপুর জেলা কারাগারের জেল সুপার, উপজেলা শিক্ষা কার্যালয়, কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর এবং গণপূর্ত ই/এম কারখানা বিভাগ। ৫৩টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে একটি করে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগকারীদের পেশা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়-সাধারণ মানুষ ১৬৯ জন, সাংবাদিক ৬১ জন, আইনজীবী, চাকরিজীবী ও অন্যসব পেশার দুজন করে মোট ছয়জন। ২০১১ সালে করা ছয়টি অভিযোগে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। ২০২০ সালের তুলনায় ২০২১ সালে তথ্য সরবরাহের জন্য আবেদনের সংখ্যা কমেছে। ২০২০ সালে আবেদন ছিল ৯ হাজার ৭৯৭টি এবং ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৬৫৩টি। যদিও প্রতিবেদনে এর কারণ হিসাবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষের স্বপ্রোণোদিতভাবে অনেক তথ্য প্রকাশের কথা বলা হয়েছে।
আবেদনগুলোর মধ্যে সাত হাজার ১৫৪টির যাচিত তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। আর তথ্য না দেওয়ার সিদ্ধান্তের সংখ্যা ৩৪৪টি। সর্বাধিক আবেদনপ্রাপ্ত মন্ত্রণালয়ের মধ্যে রয়েছে-কৃষি মন্ত্রণালয়। ক্রমান্বয়ে রয়েছে সমাজকল্যাণ, স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত, অর্থ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা, ধর্ম এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়। সবচেয়ে বেশি আবেদন এসেছে রাজশাহী বিভাগ থেকে। সবচেয়ে কম এসেছে ময়মনসিংহ বিভাগ থেকে। সর্বাধিক যে ১০টি জেলা থেকে তথ্য সরবরাহের জন্য আবেদন এসেছে এর মধ্যে ২৬৫টি আবেদন নিয়ে শীর্ষে রয়েছে বগুড়া জেলা। বাকি জেলাগুলো হলো-যশোর, দিনাজপুর, সিরাজগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজশাহী, নীলফামারী, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা ও রংপুর। মাগুরা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, বাগেরহাট, জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলায় তথ্য অধিকার আইনের অধীনে তথ্যপ্রাপ্তির জন্য কোনো আবেদন পড়েনি।
এনজিওগুলোর মধ্যে তথ্য সরবরাহের জন্য সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়ে রিক- এ। ৩৩৫টি। এর পরের অবস্থানে রয়েছে টিআইবি। সেখানে ২০২১ সালে আবেদন পড়ে ১৪৪টি। আবেদনপ্রাপ্তদের মধ্যে রয়েছে-আশা, ব্র্যাক, এনজিওবিষয়ক ব্যুরো, নিজেরা করি। এনজিওগুলোর মধ্যে তথ্য প্রদানের হার ৯৬ শতাংশ।
প্রধান তথ্য কমিশনার মরতুজা আহমদ বলেন, বাংলাদেশে জনগণের তথ্যে প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আইন ও বিধিমালাও যথেষ্ট সহায়ক। আইনটির মূল লক্ষ্য হলো-তথ্যের অবাধ প্রবাহ রচনা করা, জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিত করা, কর্তৃপক্ষের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা বৃদ্ধি করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা। এজন্য আইনে তথ্য গোপনকে নিরুৎসাহিত করে তথ্যকে সহজলভ্য করার জন্য নানা বিধিবিধান করা হয়েছে।
(আহৃত)