ইউরোপীয় ইউনিয়নের এজেন্ডায় বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি গুরুত্ব পাচ্ছে। আগামী ২৮ জুন ঢাকায় বাংলাদেশ ও ইইউ’র মধ্যে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক সংলাপ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আঞ্চলিক ইস্যুও সংলাপে যথেষ্ট প্রাধান্য পাবে।
রাজনৈতিক সংলাপের পর ১৮ থেকে ২০ জুলাই বাংলাদেশ সফর করবে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের একটি শক্তিশালী প্রতিনিধি দল। তারা অবশ্য রাজনীতির চেয়ে বেশি জোর দেবে শ্রম অধিকার ও বাণিজ্য সম্পর্কের ওপর। ইইউ’র দুই প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনা নিয়ে ঢাকায় প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
রাজনৈতিক সংলাপে ইইউ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন এনরিকে মোরা। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ প্রতিনিধি জোসেপ বোরেলের চিফ অব স্টাফ এবং ইউরোপীয় এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল। স্প্যানিশ কূটনীতিক এনরিকে মোরা ইরানের সঙ্গে আলোচনায় ইইউ’র প্রধান আলোচক ছিলেন।
এনরিকে মোরার মতো একজন দক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিককে প্রতিনিধি দলের প্রধান করায় ইইউ বাংলাদেশের সঙ্গে প্রথম সংলাপকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তাছাড়া বাংলাদেশে আগামী সাধারণ নির্বাচনের আগে ইইউ’র সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপকে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সংলাপে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম।
কোভিড মহামারির কারণে বাংলাদেশে বিদেশি কূটনীতিকরা গত দুই বছর তেমন কোনো তৎপরতা চালাতে পারেননি। বর্তমানে কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় কূটনীতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে সরগরম ঘরোয়া আলোচনা হচ্ছে।
কোনো কোনো কূটনীতিক বাইরেও রাজনীতি, নির্বাচন, মানবাধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রভৃতি বিষয়ে খোলামেলা অভিমত ব্যক্ত করছেন।
বাংলাদেশ সরকারের তরফে বিদেশি কূটনীতিকদের স্পর্শকাতর ইস্যুতে প্রকাশ্যে মন্তব্য করাকে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ এবং শিষ্টাচারবহির্ভূত বলে মনে করা হয়।
ঢাকায় নিযুক্ত একজন পশ্চিমা কূটনীতিক সম্প্রতি বলেছেন, বাংলাদেশে আগামী নির্বাচনের প্রতি তাদের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। কারণ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশের পরিস্থিতি স্থিতিশীল।
তবে তিনি এও মন্তব্য করেন যে, বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিজেরা মূল্যায়ন করছেন। ওই কূটনীতিকের মতে, বাংলাদেশে নির্বাচনের পরিস্থিতি নিয়ে এখনই কোনো উপসংহারে যাওয়ার সময় আসেনি।
পরিস্থিতি অনুধাবনে আরও অপেক্ষা করতে হবে। রাজনৈতিক সংলাপে আঞ্চলিক পরিস্থিতির প্রতিও আলোকপাত করা হবে।
বিশেষ করে শ্রীলংকার অর্থনৈতিক সংকট, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের বাইডেন প্রশাসনের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির মতো বিষয় বর্তমানে বিভিন্ন মহলে আলোচনায় আছে।
আঞ্চলিক পরিস্থিতি বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব ফেলছে, সেটাও আলোচনা হতে পারে। এছাড়াও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিশেষ করে ইউক্রেনে রুশ হামলার বিষয়ও আলোচনার এজেন্ডায় রাখছে ইইউ।
অপর দিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বাণিজ্যসংক্রান্ত কমিটির সাত সদস্যবিশিষ্ট শক্তিশালী প্রতিনিধি দল ১৮ থেকে ২০ জুলাই বাংলাদেশ সফরকালে বাণিজ্যসংক্রান্ত বিষয় অধিক গুরুত্ব পাবে। ইইউ থেকে এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধি দলের সফরের বিস্তারিত কর্মসূচি ও এজেন্ডা এখন চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ এজেন্ডাগুলো নিয়ে উভয়পক্ষ প্রস্তুতি নিচ্ছে।
(আহৃত)