আলজাজিরার প্রখ্যাত সাংবাদিক শিরিন আবু আকলেহকে গত ১১ মে ফিলিস্তিনের জেনিন শহরে শরণার্থী শিবিরে অভিযানের সংবাদ সংগ্রহ করার সময় মাথায় গুলি করে হত্যা করেছে ইসরাইলি বাহিনী।
এ ঘটনায় গভীর শোক ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে কূটনীতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ডিপ্লোম্যাটিক করেসপন্ডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ (ডিক্যাব)।
শুক্রবার এক বিবৃতিতে ডিক্যাবের সভাপতি রেজাউল করিম লোটাস এবং সাধারণ সম্পাদক একেএম মঈনউদ্দিন আলজাজিরার সাংবাদিক শিরিন হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য তদন্তের মাধ্যমে খুনির শাস্তি দাবি করেছেন।
উল্লেখ্য, ৫১ বছর বয়সি ফিলিস্তিন বংশোদ্ভূত এ মার্কিন নাগরিক কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরায় গত ২৬ বছর ধরে সাংবাদিকতা করে আসছেন।
ফিলিস্তিনিদের কাছে তিনি ছিলেন এক নির্ভরতার প্রতীক। যখনই ইহুদিবাদীরা অভিযানের নামে বর্বরতা চালাত অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনে, তখনই ক্যামেরা নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন শিরিন।
তার কারণেই খুব বেশি নির্যাতন চালাতে পারত না ইসরাইলি বাহিনী। এ কারণেই মূলত পরিকল্পিতভাবে গত বুধবার ফিলিস্তিনের জেনিনে মাথায় গুলি করে হত্যা করেন ইসরাইলি সেনারা।
এ ঘটনায় বিশ্বজুড়ে নিন্দার ঝড় ওঠে। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইসরাইল এখন শিরিন হত্যার কথা অস্বীকার করছে।
শিরিনের জন্ম জেরুজালেমে ১৯৭১ সালে। জর্ডানের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাংবাদিকতার ওপর পড়াশোনা শেষ করে ১৯৯৭ সালে আলজাজিরায় সাংবাদিকতা শুরু করেন তিনি।
মার্কিন নাগরিকত্ব পেলেও শিরিনের মন পড়ে থাকত জন্মভূমি জেরুজালেমে। এখানকার নির্যাতিত মানুষগুলোর মুক্তি–সংগ্রামে তিনি ছিলেন তাদের নীরব সঙ্গী।
দিন কিংবা রাত, যখনই ইসরাইলি বাহিনীর অভিযানের খবর পেতেন, তখনই ক্যামেরা কাঁধে ছুটে যেতেন শিরিন।
তার সহকর্মী লিন্ডা বলেন, ফিলিস্তিনে সাংবাদিকতা মানেই মৃত্যুকে সঙ্গী করে দায়িত্ব পালন করা। আমি গত ৯ বছর ধরে ফিলিস্তিনে অত্যন্ত ভয়ে সাংবাদিকতা করে আসছি।
অথচ শিরিন গত দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে অসীম সাহসিকতা নিয়ে আলজাজিরার হয়ে ফিলিস্তিনে সাংবাকিতা করে আসছিলেন।
এদিকে ইসরাইলি সেনাদের গুলিতে শিরিন আবু আকলেহের নিহতের ঘটনায় শোকাহত ফিলিস্তিন। দেশটির পশ্চিমতীরে নিহতের একদিন পর বৃহস্পতিবার জন্মভূমি রামাল্লায় আনা হয় তার লাশ।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রপতি ভবনের সামনে জানানো হয় শেষ শ্রদ্ধা। এতে অংশ নেন হাজার হাজার ফিলিস্তিনি।
শিরিন আবু আকলেহ বুধবার ভোরে জেনিন শহরে সংবাদ সংগ্রহের সময় ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত হন। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ভবনের সামনে শিরিন আবু আকলেহকে শেষ শ্রদ্ধা জানান প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস।
এ সময় প্রেসিডেন্ট আব্বাস বলেন, ‘আবু আকলেহের মৃত্যুর জন্য ইসরাইল সম্পূর্ণ দায়ী।’
মাহমুদ আব্বাস শিরিন আবু আকলেহ হত্যার বিষয়ে ইসরাইলের সঙ্গে যৌথ তদন্ত প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ‘ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বিচার চাইতে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিসি) যাবেন।’
দেশটির প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ শতায়েহ শিরিনকে ‘জাতীয় বীর’ ও ‘তারকা সাংবাদিক’ বলে অভিহিত করেন।
শিরিন আবু আকলেহের হত্যাকাণ্ডে ফিলিস্তিন ও আরব বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আলজাজিরা চালু হওয়ার মাত্র এক বছর পরে ১৯৯৭ সালে তিনি সেখানে যোগদান করেন।
২০০০ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় ইন্তিফাদা বা বিদ্রোহের সময় পশ্চিমতীরের প্রধান শহরগুলোতে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর বড় আকারের হামলা ও অভিযানের সংবাদ প্রকাশের জন্য ফিলিস্তিনিদের হৃদয়ে গেঁথে আছেন তিনি।
(আহৃত)