দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার ও দেশের গুরুত্বপুর্ণ নৌরুট রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাট। তীব্র যানজট দেখা দিয়েছে ঈদের এক সপ্তাহ আগে থেকেই । ভোগান্তিতে পড়েছে হাজারো যাত্রী ও যানবাহন চালক-হেলপাররা। গত বছরগুলোর এ সময়ে ঘাটে যানবাহনের চাপ বাড়লে ঘাট কর্তৃপক্ষ মাইকিং করে যমুনা সেতু ব্যবহারের পরামর্শ প্রদান করলেও এ বছর এ ধরণের কোন উদ্যোগ চোঁখে পড়েনি। পদ্মা নদীর দৌলতদিয়া ঘাট প্রান্তে ঈদযাত্রায় পারাপার নির্বিঘ করতে ৫টি ঘাট সচল রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বিআইডব্লিটিএ কর্তৃপক্ষ। কাগজে কলমে সিদ্ধান্ত নিলেও বাস্তবায়িত হয়নি এখনো। লঞ্চ ঘাটের দু,টি ব্রীজই গত বছর বর্ষা মৌসুমে বিকল হলেও তারও কোন মেরামতের উদ্যোগ নেই। কোন রকম বালুর বস্তা ফেলে যাকত্রীরা পারাপার হচ্ছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই লঞ্চ ঘাট দিয়ে যাত্রী যাতায়াত বন্ধ হয়ে যাবে। দৌলতদিয়া ঘাটের ৬ নম্বর ঘাটটিতে লাল পতাকা টাঙ্গানো রয়েছে। লাল পতাকার চিহৃ বহন করে ঘাটে কোন ফেরি ভীড়বে না। দৌলতদিয়া ঘাটের ৪ নম্বর ঘাট শুধু ছোট ফেরি লোডিং ও আনলোডিং উপযোগী। ৩ নম্বর ঘাটের তিনটি পকেটের একটি পকেট গেট সচল। ৫ ও ৭ নম্বর ঘাট দুটিকে শুধুমাত্র সচল দেখা গেছে।
মঙ্গলবার দুপুর ১টার দিকে খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে বাড়তি চাপ দেখা দিয়েছে। এ কারণে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের দৌলতদিয়া জিরো পয়েন্ট থেকে পদ্মার মোড় পর্যন্ত অন্তত ৫ কিলোমিটার এলাকায় যানবাহনের লম্বা সারি তৈরি হয়েছে। এক সারিতে যাত্রিবাহি বাস ও অপর সারিতে পন্যবাহি ট্রাকসহ যানবাহন পারের অপেক্ষায় আটকে আছে। ঘাট থেকে ১৩ কিলোমিটার দুরে গোয়ালন্দ মোড় থেকে কল্যাণপুর পর্যন্ত ট্রাকের সারি রয়েছে। এখানেও অন্তত ৪ শতাধিক ট্রাকের সিরিয়াল তৈরী হয়েছে।
আটকে পড়া পন্যবাহি ট্রাকের চালক আরিফ বলেন, গত দুই দিন যাবৎ দৌলতদিয়া ঘাটে আটকে আছি। এখনও ঘাট আরও দুই কিলোমিটার রয়েছে। আজ ফেরির নাগাল পেতেও পারি আবার নাও পেতে পারি। প্রচন্ড গরমে যন্ত্রণায় ছটফট করা ছাড়া কিছু করার নেই।
মাগুরা থেকে ছেড়ে আসা পন্যবাহি ট্রাক চালক পলাশ বলেন, আগে তেলের দাম ছিল ৬০ টাকা লিটার, এখন ৮০ টাকা। যমুনা সেতু ঘুরে গেলে যে টাকা খরচ হবে তাতে দৌলতদিয়া ঘাটে দুই দিন বসে বসে খাওয়াই ভালো।
পুর্বাশা পরিবহনের সুপার ভাইজার সালাম বলেন, মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ঘাটের দেখা পাইনি। আরো অন্তত চার কিলোমিটার যানজট ঠেলার পর যানজট পাবো। তবে প্রচন্ড গরমে থাকতে না পেরে অনেক যাত্রি নেমে রিকশায় ফেরি ঘাট পর্যন্ত গিয়ে তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে গেছে।
ঈদের ছুটি হওয়ার আগেই অনেকে ঢাকা থেকে প্রাইভেটকার ও মাইক্রোবাস ভারা করে পরিবারের অন্যন্য সদস্যদের আগেই পাঠিয়ে দিচ্ছেন। পাটুরিয়া থেকে আশা ফেরিগুলো অনেক সময় ঘাট ফ্রি না পেয়ে নদীতে ভাসমান অবস্থায় থাকছে।
ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) মিজানুর রহমান বলেন, গাড়ীর চাপ বেশি থাকার কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। ঈদকে সামনে রেখে ঢাকা থেকে অনেক রিজার্ভ টিপ আনার জন্য গাড়ী পার হচ্ছে। একারণে কয়েক দিন ধরেই যানজট লেগে আছে।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া ঘাটের ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, এ নৌরুটে বর্তমানে ১৬ টি ফেরি দিয়ে পারাপার করা হচ্ছে। চলাচলকারী ১৯ টি ফেরির মধ্যে ৩ টি বিকল হয়েছে। ঈদ উপলক্ষে দুই এক দিনের মধ্যে আরও ২ টি ফেরি বহরে যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে ২১ টি ফেরি চলাচল করবে। ঈদের আগে ও পরে ৫ দিন করে পন্যবাহি ট্রাক পারাপারের উপর নিষেধাজ্ঞা করা হয়েছে।
(আহৃত)