হ্যাঁ, যা পড়েছেন, ঠিকই পড়েছেন। আলোর ধীর গতি। এটি মহাশূন্য অভিযানের পথে অন্যতম বাধা। আপনার হয়তো মনে হতে পারে আলো গতি অত্যন্ত বেশী, এতই বেশী যে আমরা যখন কোথাও আলো জ্বালাই তখন সাথে সাথেই সর্বত্র আলোকিত হয়ে যায়। মনে হয়, আলো তাৎক্ষণিকভাবেই সর্বত্র পৌঁছে গিয়েছে। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আমরা যে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে যোগাযোগ করি, তা-ও আলোর গতিতে চলাচল করে এবং তাৎক্ষণিকভাবেই পৌঁছায় বলেই মনে হয়। তাছাড়া আমরা সবাই জানি যে আলোর গতিই স্থানের মধ্য দিয়ে যাতায়াতের সর্বোচ্চ গতি, এই গতিকে ধীর বলা যায় কেমন করে?
আসলে পৃথিবীর ভেতরে চিন্তা করলে আলোর গতি বেশ দ্রুতই মনে হবে। কারণ পৃথিবী মহাবিশ্বের বিভিন্ন রাশির তুলনায় খুবই ক্ষুদ্র। পৃথিবীর একস্থান হতে আরেক স্থানে আলোর পৌঁছাতে সেকেন্ডের ভগ্নাংশ সময় লাগে, যা আমরা উপলব্ধি করতে পারি না বলে মনে হয় তাৎক্ষণিকভাবে আলো সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে। আলো এক সেকেন্ডে সাত বার সমগ্র পৃথিবী ঘুরে আসতে পারে।
কিন্তু পৃথিবীর একটু বাইরে গেলেই পরিস্থিতি ভিন্ন। পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের বস্তু চাঁদের কথাই ধরা যাক। পৃথিবী হতে চাঁদে আলো পৌঁছাতে সময় লাগে ১.৩ সেকেন্ড। কাজেই পৃথিবী হতে যদি চাঁদে যোগাযোগ করতে হয় তাহলে সবচেয়ে দ্রুত কোনো বার্তা পৌঁছাতে সময় লাগবে ১.৩ সেকেন্ড। সেই বার্তা গ্রহণ করে তার উত্তর পাঠাতে সময় লাগবে আরো ১.৩ সেকেন্ড। ফলে পৃথিবী থেকে কোনো বার্তা প্রেরণ এবং তার উত্তর পেতে মাঝখানে অপেক্ষা করতে হবে ২.৬ সেকেন্ড। এটি একধরনের বিড়ম্বনা। এই বিড়ম্বনা তবু মোটামুটি সহনীয়। কিন্তু মঙ্গলে যোগাযোগ করতে গেলে সেটি আর সহনীয় পর্যায়ে থাকবে না। মানুষ আর কয়েক বছরের মধ্যে মঙ্গলের মাটিতে কলোনি স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। যদি সত্যিই কলোনি স্থাপন করে থাকে, কিংবা অন্তত মঙ্গলে মানুষ পৌঁছে থাকে তাহলে সবচেয়ে জরুরি কাজ হবে পৃথিবীর মানুষের সাথে মঙ্গলের মানুষের যোগাযোগ স্থাপন।
বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবী হতে মঙ্গলে আলো পৌঁছাতে সময় লাগবে সর্বনিন্ম সাড়ে তিন মিনিট আর সর্বোচ্চ সাড়ে বাইশ মিনিট। কাজেই পৃথিবী হতে মঙ্গলে কোনো বার্তা প্রেরণ করে তার উত্তর পেতে লেগে যাবে সর্বোচ্চ ৪৫ মিনিট। এই হারে কথোপকথন চালনো প্রায় অসম্ভব এবং জরুরি ক্ষেত্রে তথ্যের আদান-প্রদান, কিংবা কোনো নির্দেশনা প্রেরণ করাও সম্ভব নয়। তাও যদি এই সময় সুনির্দিষ্ট থাকত একটা কথা ছিল। কিন্তু সূর্যের চারপাশে ঘোরার গতি ভিন্ন হওয়ার কারণে বছরের বিভিন্ন সময় পৃথিবী ও মঙ্গলের দূরত্ব হবে ভিন্ন ফলে তথ্য আদান-প্রদানে অতিবায়িত সময়ও বিভিন্ন হবে। এই কারণে পৃথিবী হতে মঙ্গলে যেসব রোবটযান ও প্রোব প্রেরণ করা হয় সেগুলোকে মঙ্গলের বুকে অবতরণ করার জন্য স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা করে দিতে হয় এবং পৃথিবী হতে কোনো ধরনের নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
সৌরজগতের অন্যান্য সদস্যদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কী দেখা যাক। সূর্য হতে পৃথিবীতে আলো এসে পৌঁছাতে সময় লাগে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ড। কাজেই সূর্য যদি হঠাৎ করে কোনো কারণে নিভেও যায় তাহলে ৮ মিনিট ২০ সেকেন্ডের আগে আমরা তা জানতেও পারব না। এমনকি সূর্য যদি ভ্যানিশও হয়ে যায়