আউটের ধরন দেখে বোবা বনে যাওয়া অসম্ভব কিছু না! আর তাই পোর্ট এলিজাবেথ টেস্টে বাংলাদেশের ৩৩২ রানের হারকে আর যাই হোক লড়াকু বলার কোনো সুযোগ নেই।
আজ চতুর্থ দিনের খেলা শুরুর আগে পরিস্থিতিটা একটু বলে নেওয়া ভালো। জয়ের জন্য ৪১৩ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ উইকেটে ২৭ রানে তৃতীয় দিন শেষ করেছিল বাংলাদেশ। উইকেটে ছিলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিম। জয় থেকে তখনো ৩৯৬ রানের দূরত্বে পিছিয়ে বাংলাদেশ।
পরিস্থিতি যখন এমন তখন আজ ব্যাটিংটা কেমন হওয়া উচিত? আজ বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ধরন দেখে উত্তরটা দেওয়া যায়—ম্যাচ শুরু হয়েছে বাংলাদেশ সময় দুপুর ২টায়। ঠিক ৫৯ মিনিটের মাথায় অলআউট!
হ্যাঁ, নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ২৩.৩ ওভার ব্যাট করে ৮০ রানেই অলআউট হয় মুমিনুলের দল। এর মধ্যে আজ ব্যাট করেছে মাত্র ১৩.৩ ওভার, ৫৩ রান তোলার পথে হারিয়েছে বাকি ৭ উইকেট। অবশ্য হারিয়েছে বলার চেয়ে ‘উপহার’ দিয়েছে বলাই বেশি যৌক্তিক।
হাতে দুই দিন, দলও চাপে, এমন পরিস্থিতিতে কী করতে হবে—ক্রিকেট খেলাটা মোটামুটি বোঝেন, এমন সবারই জানা। জাতীয় দলের ক্রিকেটার হলে তো কথাই নেই। কী করতে হবে, তাঁদের চেয়ে ভালো জানবে কে! কিন্তু মুশফিক, মুমিনুল, ইয়াসির আলী ও লিটন দাসের ব্যাটিং দেখে তা মনে হলো না।
বরং রসিক কোনো ক্রিকেটপ্রেমী ভেবে নিতে পারেন, ড্রেসিংরুমে তাঁরা বোধহয় জরুরি কিছু ফেলে এসেছেন, তাই ফেরার এত তাড়া!
অথচ, ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী কথা ছিল উইকেট কামড়ে পড়ে থাকতে হবে। সুযোগ পেলে রানও করতে হবে। সেজন্য দেখেশুনে ব্যাটিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। কিন্তু দিনের দ্বিতীয় ওভারেই মুশফিককে কেন ঝুঁকিপূর্ণ ড্রাইভটা খেলতে হবে, সে প্রশ্নের উত্তর প্রথম ইনিংসে তাঁর রিভার্স সুইপ করে আউট হওয়ার মতোই মিলবে না।
কেশব মহারাজ বলটা ঝুলিয়ে ছেড়েছিলেন, মুশফিক খুব সহজেই সামনের পায়ে তা সামনে রক্ষণাত্মক খেলতে পারতেন। কিন্তু ঠিক কী ভেবে তিনি জায়গায় দাঁড়িয়েই ইনসাইড আউট ড্রাইভ খেলার চেষ্টা করলেন, আর খেলবেনই যদি কেন জায়গা করে খেললেন না, সেসব প্রশ্নের কৈফিয়ত হয়তো তাঁর কাছ থেকে মিলবে না। কিন্তু তাতে ক্ষতিটা হয়েছে বাংলাদেশ দলের।আজ সাতটি ডেলিভারি খেলার পর স্লিপে ক্যাচ দিয়ে মুশফিক (১) ফেরার এক ওভার পর ‘আত্মহত্যা’ করেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মুমিনুল। দিনের চতুর্থ ওভারে মহারাজের প্রথম বলেই মুমিনুলের যেন মনে হলো, সুইপ করে ছক্কা মারতে হবে!
বল তাঁর ব্যাটের কানায় লেগে আকাশে উঠেছে, রিকেলটন ক্যাচটা ধরার পর যে কেউ ভেবে নিতে পারেন টেস্ট অধিনায়ক ও ৫০ টেস্টের অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে দলের বিপদ বাড়িয়ে ফিরে যাওয়ার এর চেয়ে বাজে উদাহরণ সম্ভবত আর হয় না!
এ দুটি আউট দেখে মনে ভাবনা আসতে পারে, উইকেটে বেশি বাঁক বলেই কী বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা আজ শুরু থেকেই একটু আক্রমণাত্মক খেলার চেষ্টা করছেন? যেহেতু ঠুক ঠুক ব্যাট করে এমন উইকেটে টিকে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ, তাই মেরে খেলে যতটা রান তুলে নেওয়া যায় আর কী!
কিন্তু এই কৌশলে খেললেও ব্যাটসম্যানদের ‘শট সিলেকশন’ নিয়ে রীতিমতো বিচার বসানো যায়। ইয়াসির আলীর কথাই ধরুন, মুমিনুল আউট হওয়ার পরের ওভারেই অফ স্পিনার সাইমন হারমারকে মিডউইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারার সাধ জাগে ইয়াসিরের। পার করতে পারেননি, তাই ক্যাচ আউট।
টানা তিনটি এমন আউটের পরও অবশ্য লিটন ভ্রুক্ষেপ করেননি। পাঁচ ওভার পরই মহারাজকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পিংয়ের শিকার লিটন (২৭)। ইতিবাচক ব্যাট করে লিটনই যা একটু পাল্টা লড়াইয়ের চেষ্টা করেছিলেন। তবে ওই সময়ে কোনো প্রয়োজন ছিল না ওই শটের।
এর মধ্য দিয়ে ইনিংসে ৫ উইকেট হয়ে যায় মহারাজের। নিজের পরের ওভারেই মেহেদী হাসান মিরাজকে উইকেটের পেছনে ক্যাচে পরিণত করেন মহারাজ।
মিরাজ আউট হওয়ার দুই বল পর খালেদ আহমেদকেও তুলে নেন এই প্রোটিয়া লেগ স্পিনার। পরের ওভারে তাইজুলকে তুলে নিয়ে বাংলাদেশকে অলআউট করেন হারমার।
৪০ রানে ৭ উইকেট নেন মহারাজ। ৩৪ রানে ৩ উইকেট হারমারের।