1. admin@banglarakash.com : admin :
August 24, 2025, 12:12 am

ট্রেডিং ব্যবসার প্রসারে শিল্পের গতি বাধাগ্রস্ত

বাংলার আকাশ নিউজ ২৪ ডট কম Email:banglarakashnews24@gmail.com
  • Update Time : Saturday, May 20, 2023,
  • 17 Time View
Spread the love

ট্রেডিং ব্যবসা বা বিদেশ থেকে তৈরি পণ্য আমদানি করে দেশে বিক্রির প্রসার ঘটায় শিল্পের বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে আমদানি করা পণ্যের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে দেশীয় শিল্পে বিপর্যয় নেমেছে। এতে সংকুচিত হচ্ছে কর্মসংস্থান। পাশাপাশি বাড়ছে আমদানিনির্ভরতা। সেই সঙ্গে আমদানির বিকল্প পণ্য তৈরির শিল্প গড়ে উঠছে কম।

ফলে আমদানি বাড়ায় দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর বড় ধরনের চাপ বাড়ছে। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় কমে যাচ্ছে রিজার্ভ। এতে বেড়ে যাচ্ছে ডলারের দাম। যা পণ্যের দাম বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতিকে ঊর্ধ্বমুখী করেছে। কমে যাচ্ছে স্বল্প ও মধ্য আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ও জীবনযাত্রার মান।

এমন পরিস্থিতিতে দেশের শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদ ও উদ্যোক্তারা বলেছেন, দেশে শিল্প স্থাপন করা বেশ জটিল। আমলাতন্ত্র, আইনি জটিলতা, চাঁদাবাজি, অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে শিল্প স্থাপন দুরূহ হয়ে পড়েছে। উদ্যোক্তাকে পদে পদে হয়রানির শিকার হতে হয়। সময় ও অর্থ ব্যয় বেশি হচ্ছে। মুনাফা হচ্ছে কম।

অন্যদিকে বিদেশ থেকে তৈরি পণ্য আমদানি করে দেশে বিক্রি করলে সেক্ষেত্রে এত বেশি সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না। স্বল্প সময়ে ভালো মুনাফা পাওয়া যাচ্ছে। ঝুঁকির মাত্রাও কম। এসব কারণে উদ্যোক্তাদের একটি অংশ এখন ট্রেডিং ব্যবসার দিকে বেশি ঝুঁকছেন। এতে ট্রেডিং ব্যবসার প্রসার বেশি ঘটছে, শিল্পের বিকাশ কম হচ্ছে। তারা আরও বলেছেন, দেশীয় শিল্পের বিকাশের স্বার্থে ট্রেডিং ব্যবসায় লাগাম টানার নীতি প্রণয়ন করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

বর্তমানে ব্যবসার একটি বড় অংশ হচ্ছে ট্রেডিং। শিল্প খাতের চেয়ে এ খাতের বিকাশ হচ্ছে দ্রুত। এতে আমদানিনির্ভরতা বাড়ছে। যা দেশকে বড় ধরনের সংকটে ফেলে দিচ্ছে। বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার যে সংকটে দেশ জর্জরিত তার অন্যতম কারণ আমদানিনির্ভরতা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, বেসরকারি খাতে ব্যাংক ঋণের প্রবাহ প্রায় ১৩ লাখ কোটি টাকা। এর মধ্যে ট্রেড অ্যান্ড কমার্স খাতে সাড়ে ৪ লাখ কোটি টাকা। শিল্প খাতে সোয়া ৫ লাখ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত শিল্প খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৯ শতাংশ। অন্যদিকে ট্রেড অ্যান্ড কমার্স খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৬ শতাংশ। শিল্প খাতের চেয়ে ট্রেডিং খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ বেশি হয়েছে। কৃষি খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। কৃষিকে এত বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরও এ খাতের চেয়ে ট্রেডিং খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধির হার বেশ।

বেসরকারি খাতের মোট ঋণের মাত্র সাড়ে ৪ শতাংশ কৃষি খাতে, শিল্প খাতে সাড়ে ৪০ শতাংশ, ট্রেড অ্যান্ড কমার্স খাতে ৩৬ শতাংশ, ভোক্তা ঋণে ১০ শতাংশ বিতরণ করা হয়েছে। ভোক্তা ঋণের বড় একটি অংশ ট্রেডিং খাতে যাচ্ছে। ফলে এ খাতে ঋণের অংশীদারত্ব শিল্প খাতের চেয়ে বেশি হবে।

আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে মোট ঋণ ৭০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে শিল্প খাতে ২৭ হাজার কোটি টাকা। ট্রেড অ্যান্ড কমার্স খাতে সাড়ে ১৫ হাজার কোটি টাকা। শিল্প খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে আড়াই শতাংশ। ট্রেডিং অ্যান্ড কমার্স খাতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩ শতাংশের বেশি।

প্রাপ্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, শিল্প খাতের চেয়ে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ট্রেডিং খাতে ঋণ বেশি দিচ্ছে। ফলে এ খাতের বিকাশ হচ্ছে দ্রুত। এছাড়া ট্রেডিং খাতে স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ করে দ্রুত বেশি মুনাফা পাওয়া যায়। এ কারণে উদ্যোক্তাদের একটি অংশের মতো ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোও ট্রেডিং খাতে বেশি ঋণ দিতে আগ্রহী।

এ প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, দেশকে অর্থনৈতিকভাবে একটি ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থায় রাখতে হলে রিয়্যাল সেক্টর বা উৎপাদন খাতকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে দেশের মানুষের চাহিদা আছে এমন সব পণ্যের পাশাপাশি যেসব পণ্য আমদানি হয় সেগুলোর বড় একটি অংশও দেশে তৈরি করতে হবে। এতে আমদানির ওপর চাপ কমবে। তখন রেমিট্যান্স রপ্তানি কম হলেও ঝুঁকি বেশি থাকবে না। এখন আমদানিনির্ভরতার কারণে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স সামান্য কমে গেলেই সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। বৈশ্বিক ও প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে দেশে মাঝে মধ্যেই রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয় কমতে পারে। এতে ঝুঁকিতে পড়ে অর্থনীতি। আমদানিনির্ভরতা কমে গেলে এ ধরনের ঝুঁকি থাকবে না। আমদানি বেশি হলে দেশে ভারী শিল্পের প্রসার ঘটাতে হবে। যাতে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব হয়। কিন্তু সেটি হচ্ছে না। রপ্তানি খাত এখনো এককভাবে তৈরি পোশাকের ওপর নির্ভরশীল। যা অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে বাংলাদেশসহ অনেক দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমে গেছে। কিন্তু ভুটান, মালদ্বীপ, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস এসব দেশের মুদ্রার মান ডলারের বিপরীতে কমেনি। কারণ তাদের আমদানিনির্ভরতা কম। আবার মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মুদ্রার মানও কমেনি। কারণ তাদের খনিজসম্পদের মাধ্যমে রপ্তানি বেশি। ভারত স্বাধীনতার পর চার দশক পণ্য আমদানিতে লাগাম টেনে ধরেছিল। একেবারে আবশ্যকীয় পণ্য ছাড়া অন্য কোনো কিছু আমদানি করেনি। দেশীয় পণ্য ব্যবহারে ভোক্তাকে বাধ্য করেছে। এখন তারা প্রায় সব ধরনের পণ্যই উঁচু মানে তৈরি করছে। ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও ঘটেছিল একই ঘটনা। যুদ্ধের পর তারা আমদানিতে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে এখন অন্যতম রপ্তানিকারক দেশ। নেপাল, ভুটান ও মালদ্বীপ পর্যটন খাত থেকে মোট বৈদেশিক মুদ্রার ৭৫ শতাংশ আয় কমছে। কিন্তু বাংলাদেশে এককভাবে পোশাক রপ্তানি ছাড়া অন্য কোনো খাত গড়ে ওঠেনি যা থেকে বড় অঙ্কের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ নিটওয়্যার প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, দেশে শিল্প স্থাপন করা যেমন কঠিন, তেমনি এটি সচল রাখা আরও কঠিন। এত বাধা-বিপত্তি মোকাবিলা করে অনেক উদ্যোক্তাই শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসেন না। তার তুলনায় পণ্য আমদানি করে তা বিক্রির মাধ্যমে আরও বেশি মুনাফা করা সম্ভব। কিন্তু তাতে দেশীয় শিল্পের বিকাশ হবে না। তিনি আরও বলেন, দেশীয় শিল্পকে এগিয়ে নিতে হলে উদ্যোক্তাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করতে হবে। তাহলে বিনিয়োগ বাড়বে, শিল্প হবে। কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। দেশ দ্রুত ও টেকসইভাবে এগিয়ে যাবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শিল্প খাতে ঋণের স্থিতি ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার কোটি টাকা। আগের বছরের চেয়ে ঋণে প্রবৃদ্ধি ছিল ১৩ দশমিক ৩ শতাংশ। ট্রেডিং খাতে স্থিতি ছিল ৩ লাখ ১২ হাজার কোটি টাকা। প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ শতাংশের বেশি। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শিল্প খাতে ঋণের স্তিতি ছিল ৪ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকা, ট্রেডিং খাতে ৩ লাখ ৪৯ হাজার কোটি টাকা, ২০২০-২১ অর্থবছরে শিল্প খাতে ৪ লাখ ৭২ হাজার কোটি টাকা, ট্রেডিং খাতে ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকা। ২০২১-২২ অর্থবছরে শিল্প খাতে ৫ লাখ ২৯ হাজার কোটি টাকা, ট্রেডিং খাতে ৪ লাখ ২৩ হাজার কোটি টাকা। গত সাড়ে চার বছরে শিল্প খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ শতাংশ। এর বিপরীতে ট্রেডিং খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪২ শতাংশ। শিল্প খাতের চেয়ে ট্রেডিং খাতে প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ বেশি হয়েছে।

বর্তমানে আমদানিনির্ভরতার কারণে ট্রেডিং খাতের পণ্য আমদানিতে বছরে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা খরচ হয়। এর মধ্যে বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে খরচ হয় ৭ শতাংশ।


Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 LatestNews
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: BDiT