1. admin@banglarakash.com : admin :
August 24, 2025, 7:01 am

ফরিদপুরে লালমি বাঙ্গির ব্যাপক ফলন

তথ্য সংগ্রহেঃ মোঃ ইকবাল হোসেন শুভ email:banglar.akash.sif@gmail.com
  • Update Time : Saturday, April 16, 2022,
  • 316 Time View
Spread the love

লালমি বাঙ্গি দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মতো হলেও স্বাদ ও গন্ধ ভিন্ন। এবার ফরিদপুরে লালমি বাঙ্গির ফলন হয়েছে বেশ ভালো। রমজান মাস উপলক্ষে গত বছরের তুলনায় লালমি বাঙ্গির দামও বেশ ভালো। চাষিরা ভালো দাম পাওয়ায় বেশ খুশি। বাম্পার ফলন আর ভালো দাম পেয়ে চাষিদের মুখে যেন খুশির চওড়া হাসি। জেলার চাহিদা মিটিয়ে এখানকার উৎপাদিত লালমি বাঙ্গি যাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে এর চাষাবাদ হলেও সদরপুর উপজেলার সবচেয়ে বেশি লালমি বাঙ্গির চাষ হয়। লালমি দেখতে অনেকটা বাঙ্গির মতোই। তবে কিছু পার্থক্য রয়েছে। বাঙ্গির মতো গায়ে শির রেখা নেই। তবে গায়ের রং এবং গন্ধও আলাদা। স্বাদেও রয়েছে কিছুটা পার্থক্য। বাঙ্গি রবি মৌসুমের ফল, পাকতে শুরু করে চৈত্র মাসে। আর লালমির শীতের পৌষ-মাঘ দুই মাস বাদে বছরের যেকোনো সময় চাষ করা যায়।

চাষিদের ভাষ্য, বীজ অথবা চারা রোপণের ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে লালমি বাঙ্গি পেকে যায়। জেলার বেশিরভাগ চাষিরা পবিত্র রমজান মাসকে লক্ষ্য রেখে এর চাষ করেন। সেই অনুযায়ী এবার প্রথম রমজান থেকেই ফরিদপুরের বিভিন্ন বাজারে প্রচুর লালমি বাঙ্গি দেখা যায়। আর লালমি বাঙ্গি মূলত ফরিদপুরের কৃষকদের উদ্ভাবিত ফসল। রং, স্বাদ, বর্ণ ও গন্ধ বিবেচনায় নিয়ে কৃষকই নাম রেখেছেন লালমি বাঙ্গি। এরই মধ্যে জেলার কৃষি বিভাগ এ ফসলের নামকরণসহ অধিক মূল্যায়ন ও উন্নয়নের জন্য গবেষণা শুরু করেছে।

সরেজমিনে ক্ষেত ও হাট-বাজারে গিয়ে দেখা যায়, চাষিরা এখন মাঠ থেকে লালমি বাঙ্গি তোলা এবং বাজারজাত করতে পুরোপুরি ব্যস্ত সময় পার করছেন। চাষিদের সঙ্গে মাঠে কাজ করছেন কৃষাণীরাও। লালমি বাঙ্গির রাজ্য হিসেবে পরিচিত সদরপুর উপজেলার আমিরাবাদ, ডেউখালি, শৈলডুবি, কাটাখালি, মোটকচর, আকটেরচর, কৃষ্ণপুর, চরচাদপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় লালমি চাষ ব্যাপকভাবে হয়ে থাকে। দাম ভালো পাওয়ায় প্রতি বছর পবিত্র রমজান মাসকে টার্গেট করে লালমি বাঙ্গির চাষ করেন চাষিরা।

সদরপুর উপজেলার সবচেয়ে বড় হাট হচ্ছে, কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের কাটাখালী, মটুকচর, নতুন বাজার ও বাঁধানোঘাট। এ ছাড়া পিয়াজখালী, আকোটেরচর, কারীরহাট, বিষ্ণুপুরসহ একাধিক জায়গায়ও প্রায়দিনই বসেছে লালমির হাট। এর মধ্যে কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের হাটগুলো সবচেয়ে বড় এবং বেচাকেনা হয় বেশি। এছাড়াও সদরপুরে বাঙ্গির প্রধান বাজার কাটাখালী, বাঁধানোঘাট ও নতুন বাজারে দেখা যায়, ভোর থেকেই চাষিরা বাঙ্গি নিয়ে আসছেন। বিভিন্ন জায়গা থেকে ব্যবসায়ীরা এসেছেন বাঙ্গি কিনতে। প্রকারভেদে ১০০ বাঙ্গি ৩ হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চারা রোপণের ৪৫ দিন পর লালমি তোলা যায়। এক বিঘা জমিতে খরচ ৫-১০ হাজার টাকা আর বিক্রি হয় ৫০-৬০ হাজার টাকা। শুধুমাত্র সদরপুর উপজেলায় এবছর ৮৯১ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে বাঙ্গি। প্রায় প্রতি হাটেই দেখা যায় থরে থরে সাজানো পাকা হলুদ, আধা পাকা সবুজ বাঙ্গি। বাজারে এবার এ ফলের দামও বেশ ভালো। অন্যান্য বছর বাঙ্গির কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে হতাশ হলেও এবার খুশি চাষিরা।

চাষি রাশেদ শেখ জানান, এক বিঘা (৫২ শতাংশ) জমিতে বাঙ্গি চাষে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়। এবছর এক বিঘা জমিতে ৫০ থেকে ৮০ হাজার টাকার বাঙ্গি বিক্রি হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘বাঙ্গি তোলার পর সেই জমিতে ধান চাষ করা যায়। একই জমিতে দুই ধরনের ফসল চাষ করতে পেরে আমরা বেশ লাভবান হচ্ছি।

এ ব্যাপারে কৃষ্ণপুর গ্রামের চাষি জুলহাস শেখ বলেন, ৭৮ শতাংশ জমিতে বাঙ্গি চাষ করতে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। রোজার শেষ পর্যন্ত বাজারে বর্তমান দাম থাকলে প্রায় এক লাখ টাকার বাঙ্গি বিক্রির সম্ভাবনা রয়েছে।

কাটাখালী বাজারের বাঙ্গি ব্যবসায়ী শেখ সামাদ জানান, স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় এই বাজারের বাঙ্গি। বিভিন্ন স্থান থেকে এখানে পাইকারি ব্যবসায়ীরা আসেন। এবছর বাঙ্গির দামও বেশ ভালো।

ঢাকার দোহার থেকে বাঙ্গি কিনতে আসা পাইকারি ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, রোজার সময় প্রতিবছরই এখানে বাঙ্গি কিনতে আসি। এখান থেকে বাঙ্গি কিনে ঢাকায় বিক্রি করি। ১০০ বাঙ্গি চার হাজার টাকায় কিনেছি, আবার একটু বড় আকারের ১০০টি কিনেছি ছয় হাজার টাকায়।

জানতে চাইলে সদরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা বিধান রায় বলেন, লালমি স্বল্প সময়ে একটি লাভজনক ফসল। বীজ বপনের ৪৫ থেকে ৬০ দিনের মধ্যে বাজারজাত করা যায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে লালমি বাঙ্গি চলে যায়।

এ প্রসঙ্গে ফরিদপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ড. হয়রত আলী  বলেন, লালমি বাঙ্গি প্রজাতির একটি ফল। তিনি আরও বলেন, এ ফল এই এলাকার কৃষকেরাই উৎপন্ন করেছেন। তবে আমরা চেষ্টা করছি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মাধ্যমে গবেষণা করে এই ফসলের চাষ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে।

 


Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 LatestNews
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: BDiT