1. admin@banglarakash.com : admin :
August 24, 2025, 7:19 am

নানামুখী উদ্যোগেও মিলছে না স্বস্তি

বাংলার আকাশ ডট কম email:banglar.akash.sif@gmail.com
  • Update Time : Monday, August 1, 2022,
  • 92 Time View
Spread the love

ডলারের বাজারে অস্থিরতা ও জ্বালানি তেলের উচ্চ মূল্য অর্থনীতিকে চাপের মুখে ফেলছে। চাপে আছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট। এতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে ব্যবসাবাণিজ্য ও শিল্পকারখানায়।

পাশাপাশি চড়া মূল্যেই ভোক্তাকে কিনতে হচ্ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য। বিশ্ববাজারে কমলেও এর প্রভাব পড়েনি দেশে। যে কারণে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় আরও বাড়ছে। একই সঙ্গে কমছে ক্রয়ক্ষমতা।

এমন পরিস্থিতিতে সরকারের পক্ষ থেকে নেওয়া হয়েছে নানা উদ্যোগ। কৃচ্ছ সাধনের মাধ্যমে ব্যয় কাটছাঁট করা হয়েছে। আয় বাড়ানো নিয়েও নতুন পরিকল্পনা আঁটছে কর্তৃপক্ষ। ঘাটতি বাজেট পূরণে বিদেশি ঋণ পেতে নানা দেনদরবার চলছে। এরপরও মিলছে না স্বস্তি।

করোনা মহামারির কারণে সংকুচিত হয়ে পড়ে দেশের অর্থনীতি। সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পর নতুন করে শুরু হয় বৈশ্বিক সংকট। জ্বালানি তেল নিয়ে সবচেয়ে বেশি চাপ তৈরি হয়েছে। কারণ দেশের অর্থনীতি অনেকটাই জ্বালানি তেলনির্ভর।

বিশ্ববাজারে এর মূল্যবৃদ্ধির কারণে নানাভাবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি তাদের পূর্বাভাসে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বলেছে, চলতি বছর (২০২২-২৩) প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৬ দশমিক ৪ শতাংশ। যদিও সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরেছে ৭.৫ শতাংশ।

এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা আবাসিক মিশনের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন  বলেন, দুটি সমস্যা রয়েছে-এক. ডলার সংকট; দুই. মূল্যস্ফীতি। শুধু আন্তর্জাতিক কারণে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে, এটি সঠিক নয়। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধিও মূল্যস্ফীতিতে অবদান রাখছে।

বাজেট সম্প্রসারণ করা হয়েছে। ফলে বর্তমান মূল্যস্ফীতি ৭.৪ শতাংশ বিরাজ করলে আগামী দিনে আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে। তবে এরই মধ্যে সরকার বছরের শুরুতে ব্যয়ের ক্ষেত্রে কৃচ্ছ সাধন, আমদানি নিরুৎসাহিত এবং জ্বালানি সাশ্রয়ে লোডশেডিংয়ের মতো বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সঠিকভাবে এসব বাস্তবায়িত হলে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বাণিজ্য ঘাটতি ও আমদানি ব্যয় কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ এমকে মুজেরি জানান, অর্থনীতির স্থিতিশীলতার জন্য দুটি বিষয়কে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। প্রথমটি হচ্ছে-মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া।

কারণ, মূল্যস্ফীতি বেশি হলে সামষ্টিক অর্থনীতির ভারসাম্য নষ্ট করে দিতে পারে। দ্বিতীয় হচ্ছে-বহির্খাত। সেখানে অস্থিরতা চলছে। আমদানি ও রপ্তানির মধ্যে ভারসাম্য না থাকায় বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে।

কার্ব মার্কেট ও ব্যাংকের মধ্যে ডলারের দামের পার্থক্য বেশি, এটি কমিয়ে আনতে হবে। না হলে অবৈধ পথে প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানো বেড়ে যাবে। মনে রাখতে হবে, বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের শক্তিশালী উৎস রেমিট্যান্স। অনেক শ্রমিক বিদেশে যাচ্ছে; কিন্তু বৈধ পথে সে তুলনায় রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে না।

ডলার বাজারের অস্থিরতা কাটছে না : খোলাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে ক্রেতাদের গুনতে হচ্ছে ১১০-১১২ টাকা। ব্যাংকগুলোয় ৯৪.৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সংশ্লিষ্টদের মতে, আমদানি খরচ বৃদ্ধির কারণে ডলারের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে।

ফলে বাড়ছে ডলারের দর। আর এ চাপ এত সহজেই কাটছে না। কারণ, নানা উদ্যোগের পরও আমদানি খরচ সেভাবে কমানো যাচ্ছে না। আবার প্রবাসী আয়েও সুখবর নেই। এদিকে বাজার স্থিতিশীল করতে রিজার্ভ থেকে এ পর্যন্ত ৭শ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়া হয়েছে। তারপরও বাজার স্বাভাবিক হচ্ছে না।

জ্বালানি তেলে ব্যয় বেড়েছে : বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কিছুটা কমে ৯৮.৩০ মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ভর্তুকি হিসাবে এ খাতে প্রায় ২৩ হাজার কোটি টাকা দিতে হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, জ্বালানি তেলের মূল্য না বাড়লে ভর্তুকি নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। কারণ বছরের শুরুতে হিসাব করে এ খাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু ভবিষ্যতে যদি আরও বৃদ্ধি পায়, সেখানেই সংকট দেখা দিতে পারে। কারণ, অর্থ সংস্থান কঠিন হয়ে যাবে।

লোডশেডিংয়ে বিরূপ প্রভাব শিল্প খাতে : জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকার ডিজেলচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করেছে। ফলে দেশের সর্বত্র পর্যায়ক্রমে লোডশেডিং চলছে। কিন্তু এতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে শিল্পকারখানা ও ব্যবসাবাণিজ্যে। গাজীপুর একটি শিল্পাঞ্চল। সেখানে পল্লী বিদ্যুতের হিসাবে জেলায় বিদ্যুতের চাহিদা ৬৫০ মেগাওয়াট। পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ মেগাওয়াট।

২০০ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট ঘাটতি মোকাবিলায় লোডশেডিং হচ্ছে দফায় দফায়। এক উদ্যোক্তার মতে, স্বাভাবিক সময়ে কারখানা প্রতিদিন ১০০ টন টেক্সটাইল সামগ্রী উৎপাদন করত।

কিন্তু বর্তমানে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে তা নেমে এসেছে ১০ থেকে ১৫ টনে। বিষয়টি নিয়ে বিকেএমইএ-এর নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, রপ্তানির প্রবৃদ্ধি আগামী দিনে কমে যাবে।

এমনিতে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাব চলছে। মন্দা এগিয়ে আসছে। এমন পরিস্থিতিতে রপ্তানি খাতে প্রবৃদ্ধি বেশি হওয়ার সুযোগ নেই। এর মধ্যে গ্যাস সংকট ও লোডশেডিং আরও উৎপাদন ব্যাহত করছে।

দ্রব্যমূল্যে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে : এদিকে বিশ্ববাজারে জিনিসপত্রের দাম পর্যায়ক্রমে কমে আসছে। সয়াবিন এরই মধ্যে ১৭.৩ শতাংশ এবং পাম অয়েল ২৪.৩ শতাংশ কমেছে। কমেছে চিনি ও গমের দাম।

রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে পণ্য রপ্তানি নিয়ে সম্প্রতি চুক্তি হয়। এ কারণে বিশ্ববাজারে গমের মূল্য কমেছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের মূল্য ব্যারেলে প্রায় ১৫ ডলার কমেছে। এসব প্রভাবে বিশ্ববাজারে অনেক পণ্যের দাম কমেছে। কিন্তু এখনো দেশের বাজারে এসব পণ্য চড়া দামেই কিনতে হচ্ছে। এতে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমছে।

সরকারের যত উদ্যোগ : পরিস্থিতি সামাল দিতে একদিকে ব্যয় কমানোর জন্য নানা উদ্যোগ নিয়েছে সরকার, অপরদিকে রাজস্ব আয় বাড়াতে সম্প্রতি কমিশনারদের নিয়ে বৈঠক করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

পাশাপাশি ব্যয় মেটাতে বিদেশ থেকে ঋণ সংগ্রহের ব্যাপারে তোড়জোড় চলছে। বিভিন্ন দাতা সংস্থার সঙ্গে ঋণের ব্যাপারে যোগাযোগ করা হচ্ছে। ব্যয়ের লাগাম টেনে ধরতে যেসব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা যথাযথ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে নির্দেশ দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

বিশেষ করে ব্যয় কমাতে প্রকল্পের (এ, বি ও সি ক্যাটাগরি) টাকা খরচের ওপর আরোপিত বিধিনিষেধ মানতে বলা হয়েছে। ক্যাটাগরি এ, বি ও সি নির্ধারণ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোয় তালিকা পাঠানো হয়েছে।

এছাড়া সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ির জ্বালানির ব্যয় ২০ শতাংশ সাশ্রয় করতে চিঠি দেওয়া হয়েছে সব মন্ত্রণালয়কে। তবে ডলার সাশ্রয় করতে বিদেশ সফর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত পুরোপুরি কার্যকর সম্ভব হচ্ছে না।

নানা কৌশল করে সরকারি কর্মকর্তারা বিদেশ সফর করছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিব বলেন, বিদেশ সফরের বিধিনিষেধ আরোপ করায় অনেক সহকর্মী চরম হতাশ।

তারা নানাভাবে বিদেশ সফরে যাওয়ার পথ খুঁজছেন। কিন্তু বোঝা উচিত, এই আদেশটি সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে এসেছে। জানা যায়, বৈশ্বিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের (সি ক্যাটাগরি) অর্থছাড় স্থগিত রাখা হয়েছে।

‘বি’ ক্যাটাগরি প্রকল্পের মোট ব্যয়ের ২৫ শতাংশ অর্থছাড় করা হচ্ছে না। এসব প্রকল্পের বিধিনিষেধ মানতে এরই মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সরকারি চাকরিজীবীদের গাড়ির জ্বালানি খরচ ২০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে সরকার।

এছাড়া মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থায় সব ধরনের মোটরজান ও জলজান কেনাকাটায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ প্রশিক্ষণ, আপ্যায়ন ও ভ্রমণ ব্যয়সহ মনিহারি, কম্পিউটার-আনুষঙ্গিক, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ও আসবাবপত্র কেনাকাটায় ৫০ শতাংশ বন্ধ করা হয়েছে।

উন্নয়ন প্রকল্পের বিভিন্ন কমিটির সম্মানি ব্যয়ও পুরোপুরি স্থগিত করা হয়। সব মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে সম্ভাব্য সরকারি ব্যয়ে সাশ্রয় হবে প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা।

আহৃত


Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 LatestNews
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: BDiT