1. admin@banglarakash.com : admin :
August 24, 2025, 9:01 am

কোভিড কি আবার ফিরে আসছে?

বাংলার আকাশ ডট কম email:banglar.akash.sif@gmail.com
  • Update Time : Wednesday, June 29, 2022,
  • 101 Time View
Spread the love

 

মাঝে কোভিডের চলে যাওয়া এবং এখন ফিরে আসা অতিমারি বা প্যান্ডেমিকের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার মধ্যেই পড়ে। করোনাভাইরাস একটি এমআরএনএ ভাইরাস এবং এর বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটি বারবার মিউটেশন করে। এ ভাইরাস ২০২০ সাল থেকে পৃথিবীতে বিরাজমান। তবে প্রকৃতিতে বিরাজমান সব ভাইরাসই করোনার মতো এত ছোঁয়াচে নয়। মানুষ থেকে মানুষে, এমনকি বিভিন্ন বস্তুতে লেগে থাকা অতি ছোঁয়াচে করোনাভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে সংক্রমণ ঘটায়।

প্যান্ডেমিক সাধারণত চার-পাঁচ বছর ধরে প্রকৃতিতে তার ধ্বংসলীলা চালায়। প্রথম ওয়েভ থেকে দ্বিতীয় ওয়েভ এবং দ্বিতীয় ওয়েভ থেকে তৃতীয় ওয়েভে এভাবে এ ভাইরাস মানুষের মাঝে ধ্বংসাত্মক হয়ে ওঠে। দেখা গেল, ছয়-সাত মাস পর একেকটি ওয়েভ আসে। এভাবে ধীরে ধীরে এ ভাইরাস তার অস্তিত্বের সংকটের জন্য ছোঁয়াচে ভাব আরও বাড়ায়; কিন্তু প্রাণঘাতী ভাব কমায়। এ অবস্থাকে লেস ভিরুলেন্ট বলে।

এ পর্যায়ে ভাইরাস মানুষের মধ্যে অসুস্থতা ও জীবন কেড়ে নেওয়ার হার কমায়। ধারণা করা হয়, কোভিডের পাঁচটি ওয়েভ বা ঢেউ থাকতে পারে। তৃতীয় ঢেউ আমরা দেখেছি। এখন চতুর্থ ঢেউ, যা ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের এক্সই গ্রুপ আমাদের মাঝে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। বর্তমানে যে সংক্রমণ দেখতে পাচ্ছি, তার অধিকাংশ আন্তর্জাতিক ভ্রমণকারীদের মাধ্যমে ছড়াচ্ছে। অর্থাৎ দেশের বাইরে থেকে এ রোগ দেশে ছড়াচ্ছে।

ভ্যাকসিনেশনের সুবিধা কী

টিকা গ্রহণের প্রধান সুবিধা হচ্ছে, এটি ভাইরাসের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রকেটশন দেয়, যার ফলে কেউ রোগাক্রান্ত হলেও বেশি অসুস্থ হয় না। অতিবৃদ্ধ বা ৮৫ ঊর্ধ্ব ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে কেউ কেউ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের মধ্যে কারও কারও মৃত্যুও ঘটেছে। ভ্যাকসিন কিন্তু নাক, মুখ বা হাঁত দিয়ে শরীরের ভেতরে ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে পারে না। বরং ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে তার টি সেল ম্যামোরি সেলের মাধ্যমে এ ভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় রাখতে ভূমিকা পালন করে। মাস্ক না পরলে, ভিড় এড়িয়ে না চললে, হ্যান্ড-হাইজিন মেনে না চললে ওমিক্রন বা কোভিডের অন্য ভ্যারাইটি দ্বারা আমরা আক্রান্ত হতেই পারি, ভ্যাকসিন নেওয়া সত্ত্বেও।

কেন উদ্বিগ্ন হবেন না

এ ওয়েভ নিয়ে কিন্তু খুব উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই। প্রথম ঢেউয়ের চেয়ে দ্বিতীয় ঢেউ অনেক খারাপ হয়েছিল, ডেল্টা ও ডেল্টা প্লাস ভ্যারিয়েন্টও আমরা দেখেছি। গত জানুয়ারিতে ওমিক্রনের ঢেউ এসেছিল, এ সময়ও অনেকে আক্রান্ত হয়েছিল। এরপর আক্রান্ত ব্যক্তিরা ছয় থেকে আট মাস ন্যাচারাল ইমিউনিটি বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করেছে। এ হিসাবে প্রাপ্তবয়স্কদের অধিকাংশ এ সময় ইমিউন হয়ে গিয়েছে। ইমিউন হয়নি বাচ্চাদের একটি গ্রুপের, যারা স্কুলে যায় এবং বয়স্কদের মধ্যে। যারা টিকা নেয়নি বা একটি নিয়েছে, তারা বর্তমানের এ ভাইরাস দ্বারা ঝুঁকিতে থাকবেন। ওমিক্রনের এই এক্সই ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত ছোঁয়াচে, অর্থাৎ সাধারণ সর্দি-কাশির মতো হবে, কখনো জ্বর বা ডায়রিয়া ও দুর্বল ভাব হতে পারে। এটি ঊর্ধ্ব শ্বাসনালিতে সীমাবদ্ধ থাকে, প্রথম ও দ্বিতীয় ওয়েভের মতো এখনকার সংক্রমণে ফুসফুস আক্রান্ত বা প্যাঁচ সৃষ্টি হওয়ার মতো অবস্থা হবে না বললেই চলে। কারণ করোনাভাইরাস তার রূপ পালটাচ্ছে।

চতুর্থ ঢেউয়ের ঝুঁকি কাদের

যারা অতিবৃদ্ধ এবং বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা ও রোগে ভুগছে, তারা অতি ঝুঁকিতে আছেন। তাদের সাধারণ সর্দি-কাশি বা ফ্লু হলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকায় ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সুপার ইনফেকশন হয়। এটি অবশ্য কোভিড ছাড়াও যে কোনো ভাইরাস দ্বারা হতে পারে। প্রকৃতিতে বিরাজমান রেসপিরেটরি সেনসিটাইল ভাইরাস বা এডেনো ভাইরাস দ্বারাও এ গ্রুপের ব্যক্তিরা আক্রান্ত হলে ঝুঁকিতে থাকেন। কোভিড আসবে আবার চলেও যাবে; কিন্তু আমাদের নিবিড়ভাবে মনিটর করতে হবে ডেল্টা বা ডেল্টা প্লাসের মতো কোনো খারাপ ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টি হলো কি না। সেক্ষেত্রে হয়তো আবার লকডাউন হতে পারে, স্কুল-কলেজ বন্ধ হতে পারে। কিন্তু এখন এ ভ্যারিয়েন্টের জন্য এ ধরনের কোনো বিধিনিষেধের বাধ্যবাধকতা নেই। তবে স্বাস্থ্য সুরক্ষার মৌলিক নিয়মগুলো আমাদের আগামী ছয় মাস থেকে এক বছর মেনে চলতে হবে। এভাবেই প্যান্ডেমিক থেকে এ ভাইরাস এনডেমিক হয়ে যাবে।

চতুর্থ ঢেউ কতুটুকু প্রভাব ফেলবে

দেশে ও বিদেশে ভ্রমণ বর্তমান বাস্তবতায় বন্ধ করা যাবে না। ওমিক্রন আমাদের ৬০-৭০ ভাগ মানুষকে আক্রান্ত করেছে। এদের কারও উপসর্গ ছিল, কারও ছিল না, কেউ টেস্ট করিয়েছেন, কেউবা করাননি। সেসময় কমবেশি সর্দি-কাশি সবার হয়েছে, বলা যায় এভাবে আমাদের হার্ড ইমিউনিটি হয়েছে। তাই এবারের ওয়েভ জনমানুষের মধ্যে খুব বেশি প্রভাব ফেলবে বলে মনে হয় না।

করোনা একবার হলে কি আবার হতে পারে

অবশ্যই হতে পারে। টিকা একটি ইনফেকশনের বিরুদ্ধে শতভাগ প্রটেকশন দেয় না। অনেকে মনে করেন, টিকা নিলে তার আর কোভিড হবে না। এমনটি মনে করা কখনোই ঠিক নয়। তবে টিকা গ্রহণ এবং করোনা সংক্রমণের ফলে লিম্ফোসাইট কোষ ও শ্বেত রক্তকণিকার মাধ্যমে এমনভাবে আমাদের ইমিউন করে যে, আবার আক্রান্ত হলেও তা অসুস্থতার প্রকোপ কমায় কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার ঝুঁকি কমায় কিংবা হাসপাতালে ভর্তি হলেও অক্সিজেনের প্রয়োজন হয় না অথবা খুব বেশি ওষুধের প্রয়োজন হয় না।

বর্তমানের সংক্রমণ খুব বেশি শ্বাসকষ্টও সৃষ্টি করছে না কিংবা ফুসফুসের অংশবিশেষকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে না। এ সমস্যা হচ্ছে না দুটি কারণে। একটি হচ্ছে, অনেকেই টিকার দ্বিতীয় ডোজ বা বুস্টার নিয়েছেন, অর্থাৎ ভ্যাকসিন রিলেটেড ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। আরেকটি হচ্ছে, তৃতীয় ঢেউ পর্যন্ত অনেকেই আক্রান্ত হয়ে তাদের মধ্যে ন্যাচারাল ইমিউনিটি তৈরি হয়েছে। তাই বলা যায়-ইনফেকশন হবে, সাধারণ সর্দি-কাশি-জ্বর হবে, সামান্য শরীর খারাপ হবে; তবে মৃত্যুহার আগের মতো হবে না। হাসপাতালে ভর্তির জন্য ও বেডের জন্য হাহাকারও এবার হবে বলে মনে হয় না। অক্সিজেনের অভাবে মানুষের মৃত্যুও এখন হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।

চতুর্থ ঢেউ থেকে কীভাবে বাঁচবেন

প্রথম ঢেউয়ে আমরা দেখেছি, শীতকালে শীতের দেশে এটি বেশি আক্রান্ত করেছিল, গরমকালে গরমের জায়গায় বেশি এফেক্ট করেছে। আমরা ভেবেছিলাম, আমাদের মতো গরমের দেশে ভাইরাসের প্রকোপ খুব বেশি হবে না। কিন্তু তেমনটি হয়নি, তাপমাত্রার তারতম্যের সঙ্গে এ ভাইরাসের খুব বেশি সম্পর্ক নেই। তাই গরম আমাদের বাঁচাতে পারবে না।

বাঁচাতে পারবে আমাদের টিকা, বাঁচাতে পারবে আমাদের বেসিক কোভিড প্রটোকল-প্রচুর পরিমাণ পানি পান করা, বাইরের খাবার না খাওয়া, কোনো কিছু সংস্পর্শের পর ও খাবার গ্রহণের আগে হাত ধোয়া, তাজা ফল খাওয়া এবং যতটা সম্ভব বাড়িতে থাকা। তবে এতকিছু করার পরও কিন্তু আমরা খুব বেশি ওমিক্রন ঠেকাতে পারিনি। এর কারণ, এ ভাইরাস অত্যন্ত ছোঁয়াচে ছিল। কিন্তু এরপরও অনেক মানুষকে এ ভাইরাস মারাত্মক জীবন ঝুঁকিতে ফেলেনি।

নিজেকে আলাদা করবেন কখন

কারও সর্দি, কাশি, জ্বর, গলাব্যথা, মাথা ধরা, চোখ লাল হলে অর্থাৎ ফ্লুর মতো উপসর্গ হলে নিজেকে আলাদা রাখবেন অন্তত ৩-৫ দিন। এর উদ্দেশ্য হচ্ছে, এক ব্যক্তি থেকে অন্য সুস্থ ব্যক্তিতে যেন এ ইনফেকশন না ছড়ায়। তবে কোভিড টেস্ট পজিটিভ হলে কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে ১৪ দিন। কারও উপসর্গ হলে বাড়ির অন্য সদস্যদের মধ্যে, অফিসের সহকর্মীদের মধ্যে, পাড়ায় যেন সংক্রমণ হুহু করে না ছড়ায়, সে ব্যাপারে আমাদের অবশ্যই সচেতন হতে হবে। কারণ করোনাভাইরাস ফ্লুর ভাইরাসের চেয়ে ১০-২০ গুণ ছোঁয়াচে।

করোনার ওষুধ নিয়ে দুশ্চিন্তা

টিকা নিয়ে যথেষ্ট কার্যকর গবেষণা হলেও এখন পর্যন্ত কোভিডের কার্যকর ওষুধ নিয়ে গবেষণা আশাব্যঞ্জক নয়। মলনুপিরাভির, প্যাক্সোভির এসব ওষুধ কিছু কিছু কাজ করছে। করোনা বশীকরণের ওষুধ আদৌ বের হয়নি। ফ্লুর মতো উপসর্গ হলে নিজেকে আলাদা রাখলে, কুসুম গরম পানিতে গোসল করলে, কুসুম গরম পানি পান করলে, বাজারে বিদ্যমান তাজা ফল খেলেই উপসর্গগুলো এমনিতেই চলে যাবে।

(আহৃত)


Spread the love

Please Share This Post in Your Social Media

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

More News Of This Category
© All rights reserved © 2019 LatestNews
ডিজাইন ও কারিগরি সহযোগিতায়: BDiT