দশম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায় ও শাহবাগে পুলিশি হামলার প্রতিবাদে আজ রোববার (৯ নভেম্বর) থেকে দেশের সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন শুরু করেছেন সহকারী শিক্ষকেরা। ফলে সারাদেশের প্রায় ৬৫ হাজারের বেশি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। শিক্ষকেরা একই সঙ্গে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন।
এদিকে তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমে গতকাল শনিবার পুলিশের লাঠিপেটার শিকার হওয়ার পর নতুন কর্মসূচি দেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী তাঁরা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন, পাশাপাশি বিদ্যালয়গুলোতে পূর্ণ দিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। আন্দোলনকারী ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’–এর নেতা মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এ তথ্য জানান।
এপিএসসির তথ্য বলছে, দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী প্রায় দুই কোটি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে এক কোটির মতো শিক্ষার্থী।
এর আগে বিকেলে শাহবাগে প্রাথমিক শিক্ষকদের মিছিলে পুলিশ চড়াও হয়। লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাস, জলকামান, সাউন্ড গ্রেনেডে শতাধিক শিক্ষক আহত হন। শিক্ষকদের অভিযোগ, পুলিশ হামলা চালিয়েছে বিনা উসকানিতে। অন্যদিকে পুলিশ বলছে, শিক্ষকেরা বাধা উপেক্ষা করে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনার দিকে এগোলে তাঁদের ছত্রভঙ্গ করে দেওয়া হয়।
হামলার পরপরই শামছুদ্দীন মাসুদ প্রথম আলোকে বলেছিলেন, তাঁরা শহীদ মিনারে ফিরে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন। তিনি প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতির পদে রয়েছেন। এমন আরও কয়েকটি সংগঠন নিয়ে ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ’ গড়ে তুলে এই আন্দোলন চলছে।
সহকারী শিক্ষক পদটি ১০ম গ্রেডে করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকেরা। তাঁদের অন্য দুটি দাবি হলো শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়া।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের করা বার্ষিক প্রাথমিক বিদ্যালয় শুমারির (এপিএসসি) তথ্য বলছে, দেশে এখন মোট প্রাথমিক বিদ্যালয় ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৩০টি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে ৬৫ হাজার ৫৬৭টি। সরকারি-বেসরকারি সব মিলিয়ে দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া মোট শিক্ষার্থী প্রায় দুই কোটি। এর মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ে এক কোটির মতো।
বর্তমানে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা জাতীয় বেতন–স্কেলের ১৩তম গ্রেডে বেতন পান। তা ১০ম গ্রেডে করার দাবিতে এখন আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষকেরা। তাঁদের অন্য দুটি দাবি হলো শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি এবং চাকরির ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড দেওয়া। কিছুদিন আগে তাঁরা সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করার দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। তবে সেখান থেকে এগিয়ে এখন ১০তম গ্রেডে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছেন। এত দিন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড ছিল ১১তম। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে রিট আবেদনকারী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪৫ জন প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড এক ধাপ বাড়িয়ে দশম গ্রেডে উন্নীত করা হয়েছে। এর ফলে সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সব প্রধান শিক্ষকের বেতন গ্রেড দশম গ্রেড হওয়ার পথ তৈরি হয়।
সেই প্রক্রিয়া বাস্তবায়নে শিগগিরই সরকারি সিদ্ধান্ত আসতে পারে। সরকারি সূত্রগুলো বলছে, সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১তম করার চেষ্টাও করছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।