জাপানের ক্ষমতাসীন জোট, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (এলডিপি) ও এর অংশীদার কোমেইতো, দেশটির পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে। রবিবার (২০ জুলাই) অনুষ্ঠিত তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এই নির্বাচন প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবার জোটের জন্য হতাশাজনক ফল এনেছে। যদিও ইশিবা এখনই পদত্যাগের কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন, তবে এই ফলাফল তার সরকারের ওপর চাপ বাড়াবে বলে মনে করা হচ্ছে।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, বিশেষ করে চালের মূল্যবৃদ্ধি এবং যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক হুমকির মতো ইস্যুগুলো এই নির্বাচনে বড় ভূমিকা রেখেছে। ভোটগ্রহণ শেষে প্রধানমন্ত্রী ইশিবা স্বীকার করেছেন, তিনি ‘এই কঠিন ফল’ আন্তরিকভাবে গ্রহণ করেছেন এবং তার দৃষ্টি এখন বাণিজ্য আলোচনার দিকে। গত বছর নিম্নকক্ষেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর পর উচ্চকক্ষেও এই ফলাফল জোট সরকারের প্রভাব আরও কমিয়ে দেবে। ২৪৮ সদস্যের উচ্চকক্ষে নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখতে ৫০টি আসন প্রয়োজন হলেও, রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যম এনএইচকের প্রতিবেদন অনুযায়ী জোট ৪৭টি আসন পেয়েছে, যেখানে আরও একটি আসনের ফল ঘোষণা বাকি আছে।
কান্দা ইউনিভার্সিটি অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ-এর জাপানিজ স্টাডিজের শিক্ষক জেফরি হল বিবিসি নিউজকে জানিয়েছেন, এলডিপির রক্ষণশীল সমর্থন ভিত্তিকে কয়েকটি ডানপন্থী দল বিভক্ত করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের সমর্থকরা ইশিবাকে যথেষ্ট রক্ষণশীল মনে করেন না, বিশেষ করে চীনের বিরুদ্ধে তার কঠোর দৃষ্টিভঙ্গির অভাব তাদের অসন্তুষ্ট করেছে। ফলে এলডিপির কিছু সমর্থকের ভোট এবার সানসেইতো পার্টির দিকে চলে গেছে, যারা অভিবাসনবিরোধী অবস্থান ও ‘জাপানিজ ফার্স্ট’ নীতি নিয়ে রক্ষণশীল ভোটারদের আকৃষ্ট করেছে। কোভিড মহামারীর সময় টিকার বিষয়ে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচার করে ইউটিউবের মাধ্যমে সানসেইতো আলোচনায় আসে।
নির্বাচনের এই ফলকে ভোটারদের হতাশার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে দেখা হচ্ছে। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাণিজ্য আলোচনার পাশাপাশি এলডিপিকে ঘিরে সাম্প্রতিক কেলেঙ্কারিগুলোও এতে ভূমিকা রেখেছে। অতীতে এলডিপির শেষ তিন প্রধানমন্ত্রীকে উচ্চকক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানোর দুই মাসের মধ্যে পদত্যাগ করতে হয়েছিল, এবং বিশ্লেষকরা মনে করছেন এবারও একই ঘটনা ঘটতে পারে। সানায়ে তাকাইচি, যিনি গত বছর দলের নেতৃত্ব নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন, তাকে সম্ভাব্য উত্তরসূরি হিসেবে দেখা হচ্ছে। এছাড়া সাবেক মন্ত্রী তাকাইয়ুকি কোবায়াশি ও শিনজিরো কইজুমিও এই তালিকায় রয়েছেন। শাসক দলের নেতৃত্ব পরিবর্তন হলে নতুন রাজনৈতিক নাটকীয়তার পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র-জাপান আলোচনায় জাপান সরকারকে কিছুটা অস্থিতিশীল করতে পারে।
এদিকে, বিদেশী নাগরিকদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধ বা খারাপ আচরণ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী ইশিবা একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছেন, যা অভিবাসন বিষয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।