গোলাম দস্তগীর গাজী শুধু দেশেই নয়, বিশ্বের আটটি দেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন, যা প্রাথমিক অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই এবং মালয়েশিয়ায় তার বিপুল পরিমাণ সম্পদ রয়েছে। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর গাজীর উত্থান শুরু হয় এবং তিনি এমপি পদ ব্যবহার করে জনকল্যাণ না করে লুটপাট, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জন করেন।
দুদকের প্রাথমিক হিসাবে দেখা গেছে, গত ১৫ বছরে গোলাম দস্তগীর গাজী প্রায় ৮ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তিনি হুন্ডি, আন্ডার ইনভয়েস এবং ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে এই অর্থ পাচার করেছেন। উদাহরণস্বরূপ, গাজী প্লাস্টিক (ইন্টারন্যাশনাল) নামে একটি ভুয়া কোম্পানি খুলে মালয়েশিয়ায় “মাই সেকেন্ড হোম” কর্মসূচিতে বিপুল টাকা বিনিয়োগ করেন গাজী, তার স্ত্রী হাসিনা গাজী এবং সন্তান পাপ্পা গাজী। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুসারে, ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত গাজী প্লাস্টিক ৮২৫ কোটি টাকার পণ্য রপ্তানি দেখালেও, মাত্র ২৩ কোটি টাকা দেশে ফিরে এসেছে, অর্থাৎ প্রায় ৮০০ কোটি টাকাই বিদেশে পাচার হয়েছে।
এছাড়াও, কাঁচামাল আমদানির নামে ৯২৩ কোটি টাকার পণ্য আমদানি দেখালেও, বাজার মূল্যের প্রায় তিনগুণ বেশি প্রাক্কলিত মূল্য দেখিয়ে প্রায় সাড়ে তিনশো কোটি টাকা ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে পাচার করেছেন। মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোম স্কিমের জন্য বিনিয়োগ করা বিপুল অর্থ বাংলাদেশ ব্যাংক বা গাজীর আয়কর নথিতে নেই। সিঙ্গাপুরে সরকারের বৈধ অনুমতি ছাড়াই গাজী প্লাস্টিকের নামে আন্তর্জাতিক কোম্পানি খুলেছেন, যা অর্থ পাচারের কৌশল হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্র জানিয়েছে। দুবাইতে গাজীর ৫৭ কোটি টাকা মূল্যের দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাট এবং যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে পাপ্পা গাজীর নামে দুটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে, যার তদন্ত চলছে। কানাডার মন্ট্রিলে হাসিনা গাজীর নামে দুটি ফ্ল্যাট এবং সিঙ্গাপুরে গোলাম দস্তগীর গাজীর নামে একটি অফিস স্পেস ও একটি কুরিয়ার সার্ভিস রয়েছে। মালয়েশিয়ায় গাজীর নামে একটি মানি এক্সচেঞ্জও রয়েছে।
দুদক গাজী ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করেছে। দুদুকের নথি অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে গোলাম দস্তগীর গাজী স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি মিলিয়ে প্রায় ১ হাজার ৪৪৬ কোটি টাকার মালিক হয়েছেন, যার বিপরীতে তার ব্যাংকঋণের পরিমাণ ৯৩৫ কোটি টাকা। কিন্তু এই ব্যাংকঋণের টাকাও বিদেশে পাচার করা হয়েছে। ২৫ আগস্ট গোলাম দস্তগীর গাজী গ্রেপ্তার হলেও তার পুত্র পাপ্পা গাজী ও স্ত্রীকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। পাপ্পা গাজী ৫ আগস্টের আগেই বিদেশে পালিয়ে দুবাই ও মালয়েশিয়ায় অবস্থান করছেন এবং সেখানে নতুন করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠা করছেন।